সরাইল থানা পুলিশের কান্ড ! মুক্তির ফি ৬শত টাকা



মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল ॥ সরাইলের চুন্টা পালপাড়ার বাসিন্ধা প্রয়াত আরব আলীর ছেলে মুগল মিয়া (৪০)। ৫ সন্তানের জনক মুগল খুবই কষ্টে দিন যাপন করছেন। প্রতিদিন মাছ বিক্রি করে যা পান তা দিয়ে কোন রকমে চলছে সংসার। গতকাল শুক্রবার সকালে জামিনে থাকা মামলার ওয়ারেন্টের কথা বলে মুুগলকে চুন্টা বাজার থেকে গ্রেপ্তার করেন সরাইল থানার এ এস আই মাইনুল ইসলাম। গ্রেপ্তারের পর রিকল আছে বলার পরও মুগলকে জনসমূখে একাধিক থাপ্পড় মেরে হাতে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে টেনে গাড়িতে ওঠান। উপস্থিত গণ্যমান্য লোকজন জামিনের রিকল আছে বলে চিৎকার করলেও মন গলেনি মাইনুল স্যারের। মুঠোফোনে ইউপি যুবলীগের আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রিকলের কথা বললেও তিনি আমলে নেননি।
গ্রেপ্তার হওয়া মুগল ও স্থানীয় লোকজন জানায়, মুগল এক সময় প্রবাসে থাকতেন। পরে পারিবারিক বড় ধরনের ধাক্কায় অর্থাভাবে পড়ে যান মুগল। ফলে বকেয়া পড়ে যায় মুগলের বিদ্যুৎ বিল। ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মোট ৮৬ হাজার টাকা বকেয়ার জন্য পিডিবি মুগলের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা করেন। স্ত্রী ও ৪ সন্তানকে নিয়ে মাছ বিক্রি করে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে মুগলের। তার উপর মামলার চিন্তা। বছর দুই আগে সরাইল পিডিবি’র তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলীর শরনাপন্ন হন মুগলের বড় ভাই আবদুল কাদির। তিনি আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ৮৬ হাজার টাকাকে কিস্তিকে পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেন। মুগল প্রথম কিস্তি-৪৬ হাজার, দ্বিতীয়- ৫ হাজার, তৃতীয়-৫ হাজার, চতুর্থ-১৫ হাজার ও এক বছর আগে পঞ্চম ও শেষ কিস্তি ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বকেয়া শেষ করেন।
গত মঙ্গলবার সরাইল পিডিবি অফিস মোট ২৭ শত টাকার জরিমানার ভাউছার কেটে দেন। মুগল ওইদিনই সরাইল জনতা ব্যাংকে জরিমানার টাকাও জমা দেন। গত বৃহস্পতিবার সকল কাগজ নিয়ে মুগল চলে যান কুমিল্লার জাঙ্গালিয়ায়। সেখান থেকে সকল মামলা নিস্পত্তির কাগজ ও রিকল নিয়ে রাত ৯টার দিকে মুগল মুঠোফোনে সরাইল থানার দারোগা মো. মজিবুর রহমানকে জানিয়েছেন। তিনি আগামীকাল সকালে (আজ শুক্রবার) কাগজ নিয়ে থানা যেতে বলেছেন মুগলকে। কাগজের জন্য এস আই মজিবুর রহমান গতকাল (শুক্রবার) সকাল ১০টার দিকে আবারও ফোন দিয়েছেন মুগলকে। মুগল সকাল ১১টার দিকে চুন্টা বাজারে গিয়ে রিকলসহ সকল কাগজ ফটোকপি করে একটি দোকানে রেখে আরেক দোকানে ঠান্ডা ক্রয় করতে যান। এমন সময় পেছন থেকে মুগলকে ঝাপটে ধরেন এ এস আই মাইনুল। মুগল স্যার আমার রিকল আছে। মামলা নিস্পত্তির সকল কাগজ আছে বলে চিৎকার করলেও মাইনুল শুনেননি। উপরন্তু মুগলকে প্রকাশ্যে শতশত মানুষের সামনে থাপ্পর দিতে থাকেন। এরপর তাকে হাতকড়া পড়িয়ে বাজার থেকে টেনে এনে গাড়িতে ওঠিয়েছেন। অনেক গণ্যমান্য লোকজন রিকল আছে বলে অনুনয় করলেও মন গলেনি দারোগা মাইনুল স্যারের। মুগলকে নিয়ে গাড়ি টান দেওয়ার পরও চুন্টা ইউপি যুবলীগের আহবায়ক মো. মনিরুল ইসলাম মুঠোফোনে দারোগা মাইনুলকে রিকলের কথা বলেন। তাতেও কোন কাজ হয়নি। মুগলকে থানার দ্বিতীয় তলার হাজত কাষ্টডিতে ঢুকান দারোগা মাইনুল। মিনিট ১৫ পরই রিকল নিয়ে থানায় হাজির হন মুগলের বড় ভাই আবদুল কাদির। রিকল পেয়ে আবদুল কাদিরের কাছে টাকা চান দারোগা মাইনুল। তারা ৬ শত টাকা দিলে থানা থেকে মুক্তি মিলে মুগলের।
মুগল বলেন, বড় বড় মানুষের কয়েক লাখ টাকা বকেয়া পড়ে আছে মামলা হয় না। আমরা গরীব তাই ৮৬ হাজার বকেয়াতেই ৩ মামলা। জানরে কষ্ট দিয়া টাকা দিলাম। মামলা শেষ করলাম। শুধু ইজ্জত সম্মানের জন্য। কিছুই আর রইল না। এত মানুষের সামনে কাগজ থাকার কথা শুনেও আমাকে গরুর মত মারল মাইনুল স্যার। আবার হাতকড়া পড়াইয়া বাজার দিয়া হাটাইয়া নিল। বিনা অপরাধে কাষ্টডিতে নিয়ে রাখল। এটা কোন আইন? আসলে এই দেশে গরীবের জন্য আইন নেই। আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম।
এ বিষয়ে জানতে এএসআই মাইনুল ইসলামের মুঠোফোনে (০১৭৭৬-৩৫২৬১২) একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.নূরুল হক বলেন, রিকল আছে বললে সংশ্লিষ্ট দারোগার উচিত সেটা দেখে ব্যবস্থা নেয়া। রিকলের আসামীকে কাষ্টডিতে নেয়া যাবে না। রিকল দেখাতে পারলে দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কেন ৬ শত টাকা? একটি টাকাও নেয়ার কোন বিধান নেই।