সরাইলে দেওড়া আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ে ব্যাপক অনিয়ম: সভাপতিকে শোকজ
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতিকে। নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল তৈরীতে অনিয়মের অভিযোগে চরম ক্ষুদ্ধ হয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ে অভিভাবক প্রতিনিধিকে মারধরের ঘটনা এই প্রথম। অবসরে যাওয়ার শেষ দিনে অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের সাময়িক বহিস্কারাদেশ হতবাক করেছে উপজেলার গোটা শিক্ষক সমাজকে। ৭ অভিযোগের বিচার চেয়ে প্রধান শিক্ষক মোহিত কুমার দেব শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেন। দীর্ঘ সময়ের তদন্ত শেষে বিদ্যালয় পরিদর্শক কমিটির অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, বিদ্যালয় পরিচালনায় অদক্ষতা ও অযোগ্যতার প্রমাণ পওয়ায় সভাপতিকে কারন দর্শানো নোটিশ দিয়েছেন। নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে কেন ওই কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হবে না? তার জবাব চেয়েছেন শিক্ষাবোর্ড।
শিক্ষাবোর্ড ও তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ১১ সদস্যের ব্যবস্থাপনা পরিষদ দায়িত্বভার গ্রহন করেন। মোঃ আরমান মিয়ার সভাপতিত্বে প্রথম সভায় কমিটি আদালতের আদেশকে অমান্য করে বিদ্যুৎসাহী সদস্য অন্তর্ভূক্ত করেন। খালি খাতায় সদস্যদের স্বাক্ষর নিয়ে নেওয়া। বোর্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা রেখেই ২০১৭ সালে সহকারি শিক্ষিকা শিরিন আক্তারের সাময়িক বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে ২০১৬ সালে যোগদান করানো। ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারীর পর হতে শেষ কর্ম দিবস পর্যন্ত কমিটির সভার রেজুলেশনে প্রধান শিক্ষক ও সদস্য সচিবের স্বাক্ষর নেই।
মোহিত কুমার দেব ব্রাহ্মলবাড়িয়ার বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারি জজ আদালত ছিলেন। অথচ কমিটি ওইদিন তাকে অনুপস্থিত দেখিয়ে কারন দর্শানো নোটিশ দিয়েছেন। ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারী সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে মিলাদ মাহফিলের ব্যয় নির্বাহে সভাপতির নির্দেশক্রমে বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে নেন অভিভাবক প্রতিনিধি আমিনুল হক চৌধুরী। কিন্তু মোহিত কুমার দেবের শেষ কর্ম দিবস পর্যন্ত এ টাকার কোন বিল ভাউছার জমা দেননি তারা। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এটাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বসেন সভাপতি। আর সেখানে উপস্থিত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিলাত খা কোন কথাই বলেননি। এ ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা ১০ আগষ্ট ওই কার্যালয়ের স্বারক নং উমাশিঅ/সরাইল/তদন্ত-০১/২০১০/৩০৬ এর পত্রের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিলাত খাঁ, অভিভাবক প্রতিনিধি মোঃ আমিনুল হক চৌধুরী ও অফিস সহকারি কামাল হোসেনকে তলব করেন।
১৬ আগষ্ট প্রধান শিক্ষক ও কামাল হোসেন স্বাক্ষীসহ হাজির হয়ে লিখিত বক্তব্য দিলেও অনুপস্থিত ছিলেন আমিনুল হক। ২০১৭ সালের ২২ মার্চ প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতেই হয়েছে ম্যানেজিং কমিটির সভা। আবার একাধিক সভায় সদস্য সচিব উপস্থিত থাকলেও তার স্বাক্ষর নেই। কমিটি ইচ্ছে করেও প্রধান শিক্ষককে অনুপস্থিত রেখেই সভা করেছেন। যাহা প্রবিধানমালা- ২০০৯ এর ৩৭(১) এর পরিপন্থী বলে প্রতীয়মান হয়। ৩টি নোটিশের জবাব দেওয়ার পরও তার চাকুরীর বয়স সীমা শেষ হওয়ার আগের দিন অর্থাৎ ২২ মার্চের সভায় ২৩ মার্চ থেকে মোহিত কুমার দেবের সাময়িক বরখাস্থ কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সকল অভিযোগ সমূহের তদন্ত শেষে দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিষদের অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা বিদ্যালয় পরিচালনায় অদক্ষতা ও অযোগ্যতার প্রমাণ পাওয়ায় সভাপতি মোঃ আরমান মিয়াকে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বাক্ষরিত ৬১১ (১৩) নং স্বারকে কারন দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি কেন ভেঙ্গে দেওয়া হবে না তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে লিখিত ভাবে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে হয়ত কমিটি তাদের জবাব জমাও দিয়েছেন। পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গতঃ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, বেসরকারি মাধ্যমিক-১, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা এর স্মারক নং-৩৭.০০.০০০০.০৭২.৩১.০০৭.১৫.৬৯৪ তারিখ ০৬/০৮/২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক “মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন এর রিটপীটিশন নং-৩৬৫৭/২০১৫ এর রায়ে বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষককে ৬০ দিনের বেশী সাময়িক বরখাস্থ না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ৬০ দিনের বেশী সাময়িক বরখাস্থ রাখা হলে তিনি বেতন ও অন্যান্য ভাতা সমুদয় প্রাপ্য হবেন।” ২৩ মার্চ থেকে সাময়িক বরখাস্থ হওয়া মোহিত কুমার দেবের ইতিমধ্যে ২১০ দিনেরও অধিক সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। সেই অনুসারে মোহিত কুমার দেবের সাময়িক বরখাস্থ আর কার্যকর থাকে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক ক্ষোভের সাথে জানান, সহকারি শিক্ষক মনির আইয়ুব ও ইউনুছসহ আরো কয়েকজনের কাছে বিদ্যালয়াট জিম্মি হয়ে আছে। এরা ফাঁকিবাজ দূর্নীতিবাজ ও টাউট। পাঠদান নয়, নিজেদের আখের গোছানো ও আধিপত্য বিস্তারই তাদের মূল লক্ষ্য। তারা শর্ত সাপেক্ষে সভাপতি মনোনিত করেছেন। আর সেই শর্ত পূরণ করতে গিয়েই আজ কমিটি বেকায়দায়। গত নির্বাচনী পরীক্ষায় ৩-৪ বিষয় অকৃতকার্যদের উত্তীর্ণ করে কয়েকজন শিক্ষক ও ২-৩ জন অভিভাবক প্রতিনিধি বাণিজ্য করেছেন। স্কুলের বারটা বেজে গেছে। পাঠদান নেই বললেও চলে। স্কুলের সকল কার্যক্রমই এখন নিস্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে ২ গ্রামের সকল অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি ও গন্যমান্য লোকজনকে এগিয়ে আসা উচিত। কারন এটা কারো নিজস্ব সম্পদ নয়।
ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি মোঃ আরমান মিয়া চাকুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ার ২ দিন আগে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্থ করার কথা স্বীকার করে বলেন, মোহিত কুমার দেবের অনিয়মের কারনেই বোর্ড আমাকে শোকজ করেছেন। অনিয়ম দূর্নীতির কারনে তাকে একাধিকবার কারন দর্শানো নোটিশও দিয়েছি।