সরাইলে এমপি’র নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি :: সালিস সভায় ক্ষমা প্রার্থনা
সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃসরাইলে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধার নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমপি’র ভাগিনা পরিচয় দিয়ে মিলন (৩৮) নামের যুবক দীর্ঘদিন ধরে করছে চাঁদাবাজি। টাকা দিয়ে এমপি’র কাছ থেকে চাকুরী ও কাজ বাগিয়ে নেয়া মামুলি ব্যাপার এমন প্রচারণাই ছিল তার মূল হাতিয়ার।
গত রোববার রাতে চুন্টা বাজারে মিলনকে ঘিরে অনুষ্ঠিত এক সালিস সভায় একাধিক ব্যক্তির বক্তব্যে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। অভিযোগের দায় স্বীকার করে প্রকাশ্যে সালিস সভায় ক্ষমা প্রার্থনা করেছে মিলন। সালিস সভায় মিলনের টাকা পাওয়ার দাবী মিথ্যা প্রমানিত হয়। উল্টো বিবাদী জয়নাল মিলনের কাছে ২ লাখ টাকা পাওয়ার রায় আসে। মিলন ৫ হাজার টাকা দিয়ে রায় তামিল করেছে। কিন্তু ততক্ষণে বেড়িয়ে এসেছে মিলনের নানা অপকর্মের থলের বিড়াল।
সালিস সূত্র জানায়, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন চুন্টার রৌশন আলীর ছেলে জয়নাল আবেদীন (৩৫)। পরিচয় থেকে মিলন ও জয়নালের মধ্যে গড়ে উঠে বন্ধুত্ব। ফুসলিয়ে জয়নালের নির্বাচন পরিচালনার সকল দায়-দায়িত্ব নেয় নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তেরকান্দা গ্রামের আলী আজ্জমের ছেলে মিলন মিয়া। একাধিকবার বিভিন্ন জায়গায় খরচের কথা বলে জয়নালের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেয় মিলন। স্থানীয় এমপি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নির্বাচনে পাস করিয়ে দেওয়ার কথা বলে নেয় ৫ লাখ টাকা। হাসপাতাল মোড়ে মিলনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসেই হতো শলামর্শ ও টাকা লেনদেন। তাদের দলের অপর দুই সদস্য হলো- সৈয়দটুলা গ্রামের সুমন ও ইকবাল। সম্প্রতি মিলন জয়নালের কাছে ৮-৯ লাখ টাকা পাবে বলে প্রচার করে। এমনকি এ বিষয়ে চুন্টা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে এ বিষয়ে নালিশ করে। চেয়ারম্যান বিষয়টি নিস্পত্তির লক্ষে উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সালিস আহবান করেন। গত রোববার রাতে চুন্টা বাজারে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে বসে সালিস সভা।
সালিসকারক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. শের আলম মিয়া, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান মিয়া, ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মো. হাবিবুর রহমান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আরব আলী, উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক মো. মাহফুজ আলী, ইউপি আ’লীগের সভাপতি মো. সোলমান কবির, মো. আইয়ুব মিয়া, যুবলীগ সভাপতি মো. মনির হোসেন ও মো. হিরা মিয়া মাষ্টার।
সালিস সভায় মিলন মিয়া জয়নালের কাছে সাড়ে নয় লাখ টাকা পাবে বলে দাবী করে। জয়নাল মিয়া বলেন, মিলন আমাকে নির্বাচনে জয়লাভ করিয়ে দিতে তার মামা জিয়াউল হক মৃধা এমপিকে ৩ লাখ ও পুলিশ প্রশাসনকে ২ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়। একাধিক মিথ্যা অভিনয় করেছে। করেছে প্রতারণা। উল্টো মিলনের কাছে ১২ লক্ষাধিক টাকা পাওয়ার হিসাব দেয় জয়নাল। উভয় পক্ষের মানিত সুমন ও ইকবালের দেয়া স্বাক্ষীতে মিলনের ছলচাতুরি ধরা পড়ে যায়। এমনকি চুন্টাসহ সরাইলের বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে এমপি’র নাম ভাঙ্গিয়ে চাকুরী ও কাজ বাগিয়ে দেওয়ার কথা টাকা নেয়ার বিষয়টি চাউর হয়ে যায়। জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে নেয়া ৭০ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়টিও আসে আলোচনায়। ভাইস চেয়ারম্যান শের আলম মিয়া এমপি’র মানসম্মান ক্ষুন্ন করার দায়ে মিলনের বিচার দাবী করে বসেন সালিস সভায়। তিনি বলেন, মিলন অনেক অনৈতিক কাজের হোতা। সালিসকারকরা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেন মিলনের কাছে জয়নাল ২ লাখ টাকা পাবে। মিলন এমপি’র ভাগিনা পরিচয় দিয়ে উনার নাম ভাঙ্গিয়ে ৩ লাখ টাকা নেয়ার দায়ে সকলের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। সাথে সাথে মিলন সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর ৫ হাজার টাকা দিয়ে সালিসের রায় তামিল করেছে। ফেব্রুয়ারী মাসের ২০ তারিখের মধ্যে বাকী ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলী আরশাদ বলেন, মিলনের কাছ থেকে এক কাপ চা ও পান করিনি। সে সম্পূর্ণ ভূয়া ও বানোয়াট কথা বলেছে। তাকে আইনের আওতায় আনা দরকার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা বলেন, মিলন কর্তৃক আমাকে টাকা দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রতারণা। চুন্টার মিরাজ আলীর ছেলের কাছ থেকে চাকুরি দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার কথা শুনার পর আমি মিলনের সাথে কথা বলি না। এ ধরনের টাউট বাটপার প্রকৃতির লোকদের আইনের আওতায় আনা উচিত।