সদর হাসপাতালকে করোনার চিকিৎসাকেন্দ্র বানানোর সিদ্ধান্ত , ফেইসবুকে সমালোচনার ঝড়
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল বা জেলা সদর হাসপাতালকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাকেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ খবরটি সংবাদ মাধ্যমে আসার পর থেকে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়েছে ফেইসবুক জুড়ে। সমালোচনাকারীরা বলছেন, সদর হাসপাতালের উপর অনেক মানুষের জীবিকা নির্ভর করে, হাসপাতলটি স্থানন্তরিত হলে তাদের উপর এর প্রভাব পড়বে। তাছাড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে করোনার মত মরণব্যাধির চিকিৎসা হলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই ঘাটুরায় অবস্থিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজে করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র বানানোর মতামত তাদের।
তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, যেহেতু করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, সেহেতু বড় পরিসরে প্রস্তুতি নিতে তাদের প্রতি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া টোয়েন্টিফোরডটকমে ”ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়ছে করোনা রোগী, সদর হাসপাতাল হচ্ছে করোনার চিকিৎসাকেন্দ্র, ঘাটুরায় হবে সদর হাসপাতালের কার্যক্রম” শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর পাঠকরা নিন্মের মন্তব্যগুলো করেন। (যেহেতু তারা পাবলিকলি কমেন্ট করেছেন এবং কমেন্ট সকলে পাঠের জন্য উন্মুক্ত তাই আমরা সংবাদে তাদের মতামতগুলো তুলে ধরছি। মতামতের দায় শুধুমাত্র মন্তব্যকারীর।)
Muhammad Raihan Shah সদর হাসপাতাল দেওয়া উচিত হবে না। কারণ এই হাসপাতালের উপর অনেক মানুষ বিশেষ করে নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষ নির্ভর করে। এবং দৈনিক অনেক রোগী বিভিন্ন কারণে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। তাই যদি এই হাসপাতালকে করোনা সেট তৈরি করা হয়। তাহলে, এই শ্রেণির মানুষগুলো এই হাসপাতালে ভয়ে চিকিৎসা নিতে চাইবে না। তাই অন্য কোনো, হলে বেসরকারি হোক কিন্তু অন্য হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। এটা আমার মতামত।
Mosharrof Hossain নাহ এটা ভালো উদ্যোগ নয়। শহরের বাইরে কোথাও করোনার জন্য জায়গা নির্দারন করা উচিত। কারন প্রাইভেট কেন্দ্র গুলোর ডাঃ রা এখন লেজগুটিয়ে পালিয়েছে। এমতাবস্থায় সর্বসাধারনের একমাত্র সরকারি হাসপাতালের জরুরি সেবা দেওয়া দরকার। তাছাড়া শহরে লোকজন চলাচল বেশি তাই শহরকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে হলে অবশ্যই শহরের বাইরে কোথাও করোনার কেন্দ্র করা উচিত হবে।
Serajul Islam আমার মনে হয় ব্রাহ্মণবাড়ীয়া মেডিকেল কলেজ ঘাটুরাকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নিলে ভাল হত।
Shakil Ahmed করোনার চিকিৎসার জন্য শহরের বাহিরে, কোন স্থানে নেওয়া ভাল হবে।
এ বিষয়ে সচেতন মহলের বিভিন্ন মানুষ তাদের মতামত দিয়েছেন। সময় টিভির ব্রাহ্মণবাড়িয়া অফিসের ব্যুরো প্রধান উজ্জল চক্রবর্তী লিখেছেন,
জটিল সিধান্ত নেরার আগে আরো একটু ভাবুন !!
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিপরিতে বেসরকারী উদ্যোগে নির্মিত “ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজে” বর্তমান ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল (সদর হাসপাতাল)এর কার্যক্রম স্থানান্তরের সিধান্ত গ্রহন করা হয়েছে !!! যা প্রস্তাব আকারে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়াহয়।
এই সিধান্তটি ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনলাইন সহ গণমাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশ হওয়ার পর ইতোমধ্যে শহরের বিভিন্ন মহলের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহল বলছেন, জনসমাগম ও শহরের ব্যস্ততম এলাকায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা কেন্দ্র করা এবং সদর হাসপাতালের কার্যক্রম স্থানান্তর করার সিধান্তটি কতটুকু যৌক্তিক? কেউ কেউ বলছেন এ ধরনের সিধান্ত হবে আত্নঘাতি ।
তারা মনে করছেন শহরের বাহিরে এই চিকিৎসা কেন্দ্র স্থানান্তর করা জরুরী। অন্যথায় এ সিধান্তের বিরুদ্ধে জেলার সাধারন মানুষকে নিয়ে সম্মিলিত ভাবে প্রতিবাদ জানানোর বিষয়টি ভাবছেন ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়াশীল নাগরিকদের কেউ-কেউ।
এ স্ট্যাটাসে ৯০ জন মন্তব্য করেছেন। সকলেই সদর হাসপাতালের পরিবর্তে ঘাটুরায় হাসপাতাল স্থানান্তরের পক্ষে মতামত দেন।
এদিকে, ডেইলি স্টারের জেলা প্রতিনিধি মাসুক হৃদয় লিখেছেন, “লোকালয়ে অবস্থিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালকে (সদর) করোনা হাসপাতাল করার প্রস্তাব, শহরে আতংক”
সেখানে ৮৫ জন মন্তব্য করেছেন। তাদের কেউ কেউ সদর হাসপাতালেই করোনা চিকিৎসা করার পক্ষে মত দেন।
সেখানে Imranul Haque Robin মন্তব্য করেন, সদরেই ভাল হবে।সব ধরনের সাপোর্ট পাওয়া যাবে।আমার ব্যক্তিগত মতামত।
Azizul Shonchay লিখেছেন, এটাকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বললে কি ভুল হবে.?
এ কথার প্রতিউত্তরে Kazi Imrul Kabir Sumon লিখেছেন, একজন সাংবাদিক ডাক্তারদের মতোই ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা এই করোনা মহামারির সময়। আপনাদের কথা শুনে মনে হয় এখানকার সাংবাদিকরা শুধু ঝুকিহীন নিরাপদ সংবাদ দেয়ার পক্ষে।
জুনায়েদ সরকার : জুনায়েদ সরকার ভাইজান, আমাদের বাসার পাশে (পুর্ব মেড্ডায়) বক্ষ ব্যাধি হসপিটালে করোনা রুগী রাখা হচ্ছে!
ঠিক তেমনি হয়তোবা, সদর হসপিটালেও রাখা হতে পারে! এতে দ্বিমত করার কিছু ই নেই যে, আতংক বাড়বে জনমনে! আবার এটাও ঠিক যে, এই রকম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হসপিটাল ব্রাক্ষন বাড়িয়া জেলাতে ২য় টি নেই! তাই এই প্রস্তাবে আমি সহমত পোষন করি (ব্যাক্তিগত ভাবে) যেহেতু আপাতত বিকল্প ব্যাবস্থা নেই!
Arefin Shovon আত্মঘাতী
Jabed Rahim Bijon লিখেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক স্বাচিপ নেতাকে খুশি করতেই কি এসিদ্ধান্ত নিলো প্রশাসন। Waliullah Sarkar উত্তের লিখেছেন, এমনটাই মনে হচ্ছে, এই সুযোগে সারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ হাসপাতালটা চিনতে পারবে,ভবিষ্যতে রোগীর অভাব হবে না। আবার Adv Noman Mridha লিখেছেন, ভাই (স্বাচিপ নেতা)তার খুশিতে তো পুরা জেলা বাসী কবর স্থানে চলে যাওয়া আবস্থা হবে।তারা (প্রশাসন)কি জনগনের কথা একবার ও ভাবল না?
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর করোনা চিকিৎসার জন্য যে ধরনের অবকাঠামো প্রয়োজন তা সদর হাসপাতালেই করা সম্ভব। এখানে আইসিইউ ( ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট) বানাতে হবে। সব দিক মিলিয়ে করোনা প্রতিরোধে জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য জেলায়ও এভাবেই হচ্ছে। তবুও সকলের আপত্তির বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।