রিয়াজউদ্দিন জামির জীবনগাথা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব সভাপতি, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এর সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার ও বাংলাদেশ বেতার কুমিল্লা অঞ্চলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা রিয়াজ উদ্দিন জামি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। সোমবার (০৭ মার্চ) রাত সোয়া ১১টার দিকে ভারতের মুম্বাই টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫০ বছর। তিনি দুই ছেলে, স্ত্রী, ভাই-বোন, সহকর্মী ও আত্মীয় স্বজনসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
ব্যক্তি জীবনে রিয়াজ উদ্দিন জামি ছিলেন বহু গুণের অধিকারী। তিনি ছাত্রাবস্থায় ১৯৯৩ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে ব্রাহ্মণবাড়িয় থেকে প্রথম প্রকাশিত “দৈনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার” সহ সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁর কর্মদক্ষতায় একই প্রতিষ্ঠানে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৯৪ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি দেশের সর্ব প্রথম প্রযুক্তি নির্ভর গণমাধ্যম দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। দেশের স্বনামধন্য এই পত্রিকাটিতে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর যোগ্যতা প্রমাণ করতে সক্ষম হোন। তারই ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে এই পত্রিকার নিজস্ব সংবাদদাতা ও ২০১৪ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে পদোন্নতি পান।
তিনি ১৯৯৮ সালের দেশের প্রথম টেরিস্টেরিয়াল স্যাটেলাইট টেলিভিশন একুশে টেলিভিশনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই টেলিভিশনটি বন্ধের আগ পর্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি আরটিভি, এনটিভিতেও কাজ করেন।
২০১২ সালের অক্টোবর মাসে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এ স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৪ সালে রাস্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ বেতারের জেলা সংবাদদাতা হিসেবে যোগদান করেন। জনকন্ঠে তার প্রচারিত ও প্রকাশিত ’সেই রাজাকার, গ্যাস সেক্টরে হরিলুট, মাদকের শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়, দেশটাকি মগের মুল্লুক, সমস্যার শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন সিরিজ রিপোর্ট করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন।
এছাড়াও তিনি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে ভারত থেকে আসা দূষিত কালো পানি, গ্যাস সেক্টর নিয়ে সিরিজ রিপোর্ট, আখাউড়া স্থলবন্দরের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে সিরিজ রিপোর্ট, মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে রিপোর্ট, আশুগঞ্জ বন্দর, আশুগঞ্জ তাপ বিদুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে আলোচিত রিপোর্ট করে ব্যাপক সাড়া ফেলেন। সাংবাদিকতা করার ফাঁকে চালিয়ে নেন পড়াশুনা। ব্যাচেলর অব আর্টস গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেন। তিনি অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এর আগেও তিনি ২০২১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি এর আগে ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ব্রাহ্মণবাাড়িয়া প্রতিদিন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক পুরষ্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।
মেধাবী ও সাহসী সাংবাদিক জামি ১৯৭৪ সালের ৩০ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা অধ্যাপক আব্দুস সাহিদ ও মাতা ফাতেমা বেগম। তাদের ৩ পুত্র ও ৫ কন্যা সন্তানের সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
১৯৮৩ সালে জামির পিতা মরহুম অধ্যাপক আব্দুস সাহিদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজের উপাধ্যক্ষ থাকাবস্থায় প্রয়াত হন। তাঁর পিতা আব্দুস সাহিদ দীর্ঘ ২৪ বছর বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার বঙ্গবন্ধু কলেজ (কিউএম কলেজ) এ অধ্যাপনা করেন। তার নানা আবদুর রউফ ইষ্ট পাকিস্তান এডুকেশন সার্ভিসের ডাইরেক্টর এবং বড় মামা আবদুর রহিম হুমায়ুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরতলীর সাদেকপুর পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে সুদীর্ঘ সময় সুনামের সাথে এবং প্রকৃত সমাজসেবী রুপে দায়িত্ব পালন করেন। উচ্চ শিক্ষিত আবদুর রহিম পরবর্তীতে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত হন এবং ঢাকায় একাধিক জাতীয় দৈনিকে কাজ করেন। তার আরেক মামা আবদুর রহমান তথ্য মন্ত্রনালয়ের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছিলেন।