ভুল চিকিৎসায় স্কুল শিক্ষক দিয়ার মৃত্যু, জামিন হয়নি ডিউকসহ ৩ চিকিৎসকের
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চাঞ্চল্যকর স্কুল শিক্ষক নওশীন আহমেদ দিয়া(২৯) হত্যা মামলায় জামিন পেতে বুধবার আদালতে হাজির হয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক ডাক্তার ডিউক চৌধুরী এবং তার হাসপাতালে কর্মরত অন্য দুই চিকিৎসক অরুনেস্বর পাল অভি ও মো: শাহাদাত হোসেন রাসেল।
অবকাশকালীন দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো: হাসানুল ইসলাম তাদের জামিনের বিষয়ে অধিকতর শুনানীর আদেশ দিয়েছেন। আগামী ১লা জানুয়ারী নিয়মিত আদালতে এবিষয়ে শুনানীর দিন ধার্য্য করা হয়েছে।
মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবি মো: মোশারফ হোসেন(৫)জানান-মামলার ৩ আসামী উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক নিন্ম আদালতে আত্বসমর্পন করে জামিনের আবেদন করেছিলেন। আদালত তাদের জামিন না দিয়ে অধিকতর শুনানীর আদেশ দিয়েছেন। আদালতে বাদী পক্ষে শতাধিক আইনজীবি ৩ চিকিৎসকের জামিন বাতিলের দাবী জানান।
ভুল চিকিৎসা ও ভুল ঔষধ প্রয়োগে স্কুল শিক্ষিকা দিয়াকে হত্যার অভিযোগে তার পিতা শিহাব আহম্মদ গেন্দু ওই ৩ চিকিৎসককে আসামী করে গত ১২ই নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ডাক্তার ডিউক চৌধুরী,অরুনেস্বর পাল অভি ও মো: শাহাদাত হোসেন রাসেল ২০শে নভেম্বর উচ্চ আদালত থেকে ৪ সপ্তাহের জন্যে জামিন পান। জামিনের সময় সীমার শেষদিন ছিলো বুধবার।
শহরের মুন্সেফপাড়া ক্রিসেন্ট কিন্ডার গার্টেন স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা নওশীন আহাম্মদ দিয়া গর্ভবতী অবস্থায় গত ৩০শে অক্টোবর ডিউক চৌধুরীর মালিকানাধীন খ্রীষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তার আগাম ডেলিভারীর ব্যবস্থা করা হয়। ১টি কন্যা সন্তান জন্ম দেন দিয়া। মামলায় অভিযোগ করা হয় এরপর পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগেই তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়। ৪ঠা নভেম্বর ভোর বেলায় দিয়ার প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হলে তাৎক্ষনিক তাকে আবার ওই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেসময়ে হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার ডিউক চৌধুরী, অরুনেশ্বর পাল অভি ও মোঃ শাহাদাত হোসেন রাসেল মৃত্যু হতে পারে জেনেও দিয়ার ভুল চিকিৎসা চালান। ভুল ইনজেকশন ও ঔষধ প্রয়োগ করেন তাকে। এতে সে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তা গোপন রেখে চিকিৎসার নামে সময় ক্ষেপন করতে থাকেন তারা। এসময় দিয়ার স্বজনরা মেডিসিনের অভিজ্ঞ চিকিৎসক কল দিতে বললেও ডিউক ও অন্যান্য ডাক্তাররা চুপ থাকেন। একপর্যায়ে দিয়ার মৃত্যু হলেও তার মুখে অক্সিজেনের মুখোশ লাগিয়ে দুপুর ১ টার দিকে দ্রুত তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলেন পরিবারের লোকজনকে। এম্বুলেন্সে করে দিয়াকে বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকা ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানকার ডাক্তাররা দিয়াকে মৃত বলে জানান। তারা আরো জানান কয়েক ঘন্টা আগেই মৃত্যু হয়েছে দিয়ার। দিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সর্বস্থরের মানুষ মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের শাস্তি দাবী করেন।
দিয়ার ৫বছর ১০ মাস বয়সী একটি পুত্র সন্তান এবং ৪দিনের নবজাতক রেখে মারা যান। তার স্বামী শহরের মুন্সেফপাড়ার সাইফুল ইসলাম তিলক। দিয়ার শ্বশুর শহরের প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদার এবিএম তৈমুর। মামলা করার পর ১৪ই নভেম্বর সকালে কবর থেকে দিয়ার লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হয়।