Main Menu

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিনদিন আসেনি করোনার ফল, বাড়ছে সংক্রামণের ঝুকি

+100%-

আল মামুন:: করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঠানো নমুনার ফলাফল গত ৭২ ঘন্টার মধ্যে আসেনি। সর্বশেষ ১২ জুন জেলার বিভিন্ন এলাকার ৫৩ জনের করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফলাফল আসে। তিন দিনে প্রায় ১ হাজার ৬’শ নমুনা পাঠানো হলেও এখনো আসেনি কোন ফলাফল। ফলাফল আসতে দেরি হওয়ায় অনেকেই হোম কোয়ারেন্টিন মানছে না। অন্যদিকে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে অনেকই ঘুরছেন দেদারসে। এতে করে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে বলে মনে করছেন সচেতনমহল। এনিয়ে জেলাজুড়ে চলছে করোনা আতংক। তবে সিভিল সার্জন অফিস থেকে বলা হয়েছে দ্রুত রিপোর্ট পাওয়ার জন্য বার বার তাগিদ দিচ্ছেন তারা। এছাড়াও পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য চিঠি দিয়েছেন তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, ১০ এপ্রিল জেলার নবীনগরে প্রথম করোনা আক্রন্ত ব্যক্তি সনাক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এর পর থেকে শনাক্তের হার অনেকটাই কম পাওয়া যায়। গত এপ্রিল ও মে মাসে জেলাজুড়ে করোনা আক্রান্তের হার কিছুটা কম থাকলেও জুন মাসের শুরু থেকেই হু হু বাড়তে থাকে করোনা আক্রন্ত রোগীর সংখ্যা। এতে করে জেলার সবগুলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বাড়তে থাকে করোনা বা কোভিড-১৯ পরীক্ষার চাপ। তবে জেলায় করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব না থাকায় প্রতিদিন নমুনা সংগ্রক করে ঢাকায় পাঠাতে হয় পরীক্ষার জন্য। আগে যেখানে প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ রিপোর্ট পাঠানো হত পরীক্ষার জন্য। সেখানে বর্তমানে প্রতিদিন পাঠানো হচ্ছে চার থেকে সাড়ে চার’শ নমুনা। এতে করে ঢাকায় ল্যাবে সারাদেশের নমুনা জমা হওয়ার কারনে সমস্যা হচ্ছে বলে জানানো হয়।

এদিকে গত ১২ জুন পর্যন্ত আসা করোনার ফলাফল অনুযায়ী জেলায় মোট ৪০৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে সদরে ১১৪, আখাউড়া ২৬, বিজয়নগর ১৪, নাসিরনগর, ২৩, বাঞ্ছারামপুর ৩২, নবীনগর ৯৫, সরাইল ২১, আশুগঞ্জ ১৮ ও কসবায় ৬৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৮৩ জন সুস্থ হয়েছেন ও বিভিন্ন সময়ে ৬ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এর মধ্যে জেলা থেকে মোট সাত হাজার ৬৭ টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৫ হাজার ৪’শ ১৩ টি নমুনার ফল পাওয়া গেছে।

সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাওয়া সর্বশেষ ১২ জুন আসা রিপোর্ট অনুযায়ী জেলায় মোট ৫৩ জন করোনায় আক্রন্ত হয়েছে। তবে ১২ তারিখে পাওয়া ফলাফলের ২৮৯ টি রিপোর্টের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ৩ জুন। আক্রান্তদের মধ্যে সদর ১৮ জন, আখাউড়া ২ জন, কসবা ২৭ জন, আশুগঞ্জ ৩ জন, নাসিরনগর ৩ জন শনাক্ত হয়।

এদিকে ফলাফল আসতে দেরি হওয়ায় নমুনা দেয়া ব্যক্তিরা হোম কোয়ারেন্টিন মানছেন না। অনেকেই লক্ষণ বা উপসর্গ নিয়েই ঘুরছেন জেলাজুড়ে। এনিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে জেলাজুড়ে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধীক নমুনা দেয়া ব্যক্তি জানান, ১০ জুন করোনাভাইরাসের পরীক্ষার জন্য নুমনা দিয়েছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত রিপোর্ট আসেনি। রিপোর্ট পজেটিভ বা নেগেটিভ ছাড়াই বাসায় বসে থাকতে হচ্ছে। এতদিন বাসায় বসে থাকলে পেট চলবে কিভাবে।

এদিকে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় নমুনা পরীক্ষার জন্য সরকারিভাবে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি করেছেন এলাকাবাসি। এনিয়ে ফেসবুকজুড়ে তুমুল লেখালেখি চলছে।

জেলা শহরের কাজী পাড়া এলাকার আশিকুর রহমান মিটু  জানান, একজন ব্যক্তি সন্দেহজনকভাবে তার করোনা পরীক্ষা করায়। কিন্তু ফলাফল আসতে দেরি হওয়ার কারনে সে বাসায় বসে থাকে না। আক্রান্ত ব্যক্তিরা শহরে ঘুরে বেড়ালে তার কারনে আরো বেশ কিছু লোকজন আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয় তাহলে দিনের রিপোর্ট দিনে পেয়ে গেলে আক্রান্তের হার অনেকটাই কমে যাবে।

এই ব্যাপারে জেলা নাগরিক ফেরামের সভাপতি পীযূষ কান্তি আচার্য বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতির কারনে জেলাজুড়ে সংক্রামণ বাড়ছে। যে ব্যক্তি করোনায় সংক্রামিত সে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে দেদারসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নয় থেকে দশ দিন পরে ফলাফল আসার কারনে সে অনেককেই আক্রান্ত্র করে ফেলেছে। তাই দ্রুত ফলফল পেলে এই সংক্রামণ অনেকটাই রোধ করা যাবে। পাশাপাশি পিসিআর ল্যাব ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেসরকারিভাবে স্থাপন হলেও এর পরীক্ষার টাকার পরিমান অনেক বেশী। দ্রুত জেলায় সরকারিভাবে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. একরাম উল্লাহ জানান, জেলায় করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব না থাকায় প্রথমদিকে জেলা থেকে মাত্র এক থেকে দেড়শ নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হত। বর্তমানে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচশ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। সেখানে সারাদেশের চাপের কারনে ফলাফল আসতে দেরি হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৬’শ নমুনার রিপোর্ট ঢাকায় আটকে রয়েছে। তবে আমরা প্রতিদিন ফলাফল পাওয়ার জন্য তাগদা দিচ্ছি।

এছাড়াও সরকারিভাবে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য ১৬ মে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়েছি। জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপন হলে সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের মহাপরিচালম মহোদয় বলেছেন প্রতিটি জেলায় করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি।





Shares