ব্রাহ্মণবাড়িয়ার করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকের সাথে ময়মনসিংহে দূর্ব্যবহার, অভিমানে ফেসবুকে স্ট্যাটাস
হামিদা মুস্তফা সেঁওতি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের একজন চিকিৎসক। নিজের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন কোভিড-১৯ ভাইরাসে।কোয়ারেন্টাইনের দুজন করোনা পজিটিভ হওয়ায় করোনার পরীক্ষা করিয়েছিলেন।সতর্কতায় চলে গেলেন ডাক্তার স্বামীর কর্মস্থল ময়মনসিংহে। স্বামী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার সেই সুবাধে ভাড়া বাড়ীতে থাকেন ময়মনসিংহ শহরের নয়াপাড়া এলাকায় খেয়াতরী নামক বাসায়। ফলাফল পজিটিভ আসলো মঙ্গলবার। তখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা জানালেন, যেহেতু তারা নিজেরাই চিকিৎসক, স্বামী তার সংস্পর্শে থেকেছেন এবং অবস্থা তেমন গুরুত্বর নয় তাই দুজনেই বাসায় আইসোলেশনে থাকতে। বিকেলে স্বামীর নমুনা সংগ্রহ করতে পিপিই পরিহিত দল যায় সে বাসায়। তখনই এলাকাবাসী বাসা ঘেরাও করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। আশপাশের অনেকেই তার সাথে দূর্ব্যাবহার করেছেন। আঘাত পেয়েছেন তিনি। সেই কষ্টে তিনি ফেসবুকে স্টেটাসে লিখেছেন নিজের কথা।
যা হুবহু তুলে ধরা হলো…
সবাই বলছে কাউকে বলো না। কেন বলব না? আমি তো কোনো দোষ করি নাই। আমি আপনাদের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছি। লকডাউনে যখন আপনারা বাড়িতে বসে সময় কিভাবে কাটাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ছিলেন তখন আমি হয়তো কোনো কোভিড -১৯ পজিটিভ ব্যাক্তির পাশে দাড়িয়ে। হ্যা আমি কোভিড -১৯ পজিটিভ। এতে আমার কোনো লজ্জা বা ভয় বা আফসোস নাই। বরং আমি খুব গর্বিত। কারণ আমি শেষদিন পর্যন্ত কাজ করে এসেছি। এখন যদি মরেও যাই আমার আফসোস থাকবে না। কারণ আমি ডাক্তার হিসেবে যে শপথ নিয়েছিলাম তা পালন করে এসেছি। আমি যতদিন পেরেছি আপনাদের জন্যে হাসপাতালে এবং মাঠে কাজ করেছি। যেদিন আমার মনে হল আমার নিজেরই স্যাম্পল পাঠানো দরকার, আমি সাথে সাথে স্যাম্পল পাঠিয়ে নিজেকে কোয়ারান্টাইনড করেছি। আমার পক্ষে যতদুর সম্ভব মানুষ এড়িয়ে চলেছি। নিজের বাড়িতেও ফিরিনি যেহেতু আমারো পরিবার আছে, বাড়িতে বৃদ্ধ শ্বশুর শ্বাশুড়ি আছেন। তারপরও আজ আমার এলাকার মানুষের কাছে (যে এলাকায় ভাড়া থাকি) যে ব্যবহার পেয়েছি আমি ও আমার স্বামী তা আমি কোনোদিন ভুলব না।
একটা কথা বলে যাই…নগর পুড়লে কি দেবালয় এড়ায়?
আগামী বছর বেঁচে থাকলে এই স্মৃতিটা ভেসে উঠবে ফেবুর পাতায়।