বিলুপ্তির পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা, পৃষ্ঠপোষকতা চান শিল্পীরা
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা লাঠি খেলা। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার জমিদাররা (পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বঙ্গ) নিরাপত্তার জন্য লাঠিয়ালদের নিযুক্ত করত। মহরম ও পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানে এই খেলাটি তাদের পরাক্রম ও সাহস প্রদর্শনের জন্য খেলা হয়ে থাকে। সে থেকে এটি বাংলার ঐতিহ্যে স্থান নিয়েছে। আবহমানকাল ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলায় এক সময় বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে লাঠি খেলা। কিন্তু কালের বির্বতণে মানুষ আজ ভুলতে বসেছে এই খেলাটি। বর্তমানে এই খেলা দেখানোর কাজে লোকবল কমে এসেছে। যার কারণ হিসেবে তারা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবকেই দেখছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার পূর্বভাগ ইউপির পূর্বভাগ গ্রামের সত্তোর্ধ প্রবীণ ওয়ারেস আলী, একজন খ্যাতনামা লাঠিয়াল। বয়সের ভারে এখন আর লাঠি খেলা দেখাতে পারেন না তিনি। তবে তার একটি দল রয়েছে। ৫০ জন সদস্যের এ দলের নাম ফুটন্ত গোলাপ যুব সংগঠন। ১২ বছর বয়সে তার লাঠি খেলায় হাতে খড়ি। বাবা ওহাদ আলী খন্দকার ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার খ্যাতনামা লাঠিয়াল। সে সময় বাবার কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে শুরু করেন খেলা দেখানো। এখন বছরের ছয় মাস খেলা দেখান আর ছয় মাস জীবিকার তাগিদে কৃষি কাজ করেন। কারণ খেলা দেখিয়ে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে সংসার ভালভাবে চলেনা। বর্তমানে তার দল বড় লাঠি, ছোট লাঠি, বালু খেলা, মই খেলা, কাগজ খেলা, তাল খেলা, মুড়ি খেলা দেখান। আর এ সবই হয় ঢোলের তালে লাঠির বিচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে। তিনি জানান, বাপদাদার ঐতিহ্যকে বহন করে তিনি অাজত্ত লাঠি খেলা টিকিয়ে রেখেছেন। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় নতুন প্রজন্ম এ পেশায় আসছেন না।
তিনি জানান, বাপদাদার ঐতিহ্যকে বহন করে তিনি অাজত্ত লাঠি খেলা টিকিয়ে রেখেছেন। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় নতুন প্রজন্ম এ পেশায় আসছেন না।
তার শিষ্য শের আলী জানান, যে টাকা তারা বায়না পান তা দিয়ে দলের খরচই উঠেনা। তাই ছেলেরা এখন আর এ খেলায় আসেন না। তবে মাঝে মধ্যে তারা লাভ করতে পারেন বলে জানান তিনি। তিনি চান যে সরকারিভাবে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা হোক।
এ খেলায় সরকারের পুষ্ঠপোষকতার ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, লাঠি খেলায় দেখিয়ে যারা জীবিকা নির্বাহ করছে তাদের প্রত্যেকের তালিকা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা হবে। এ খেলাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।