আজ শোকাবহ ৪ঠা ফেব্রুয়ারী: ১১ ছাত্রনেতাসহ ১২ নেতার ৬ষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী
তরুণ এই ছাত্রলীগ নেতাদের হারিয়ে যে ক্ষতি হয়েছে, তা চিরদিন অপূরনীয় হয়ে থাকবে: র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী
শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ব্যাপক কর্মসূচির মাধ্যমে গতকাল শনিবার সকালে পালন করা হয় মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ১১ ছাত্রনেতাসহ ১২জন নেতার ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী।
এ উপলক্ষে সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের আয়োজনে নিহতদের স্মরণে শহরের কাচারিপুকুরপাড়ে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে পূস্পস্তবক অর্পন, স্মৃতি চারণ ও দোয়া মাহফিল কর্মসূচি পালিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভে পূস্পস্তবক অর্পন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য, বিশিষ্ট লেখক, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
অন্যান্যের মধ্যে পূষ্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি, পৌর মেয়র নায়ার কবীর, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার সহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা আওয়ামীলীগ, শহর আওয়ামীলীগ, জেলা যুবলীগ, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ, জেলা স্বেচ্ছা সেবকলীগ, জেলা কৃষকলীগ, জেলা ছাত্রলীগ এবং জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
পূষ্পস্তবক অপর্ণ শেষে শোকসভায় উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, এই দূর্ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক, দুঃখজনক, হৃদয় বিদারক। দূর্ঘটনায় আমরা হারিয়েছি ১২জন তাজা তরুন প্রাণ ও জেলার শ্রেষ্ট সন্তানদের। তাদের শোক আমরা কোনদিন ও ভুলতে পারবো না। তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে স্মৃতিসৌধ নির্মান করা হয়েছে। কিন্তু যে ক্ষতি তাদের এবং আমাদের হয়েছে, তা চিরদিন অপূরনীয় হয়ে থাকবে। আবেগ আপ্লুত কন্ঠে মোকতাদির চৌধূরী এমপি আরো বলেন, নিহতরা আমার সফর সঙ্গী হয়ে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করছে। তাই আমার কাছে সেই বেদনা অত্যন্ত কষ্ট দায়ক। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। বক্তব্যে তিনি আরো বলেন,নিহত ছাত্রনেতারা সবাই মেধাবী ছিল, সমাজে তারা ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিল। তারা বেঁচে থাকলে একদিন হয়তো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে পারতো। ভালো রাজনীতিবিদ হতে পারতো। চাকরি- বাকরি, ব্যবসা- বানিজ্য করে ভালো মানুষ হয়ে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারতো। তারা একটি সুন্দর দেশের স্বপ্ন দেখতো। তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। তাদের শূন্যতা বর্তমান ছাত্রলীগ নেতা -কর্মীদের পুরণ করতে হবে। অনুষ্ঠানে নিহত ছাত্রলীগনেতাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওঃ ক্বারী আনিছ। শোকসভায় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার। জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মাসুম বিল্লাহ্’র সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হোসেন রুবেলের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত শোকসভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নায়ার কবীর, সহ সভাপতি মজিবুর রহমান বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক এডঃ মাহবাবুল আলম খোকন, শাহ আলম সরকার, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য জহিরুল ইসলাম ভূঞা, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সেক্রেটারী এডঃ এমদাদুল হক চৌধুরী, জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডঃ শাহনুর ইসলাম, পৌর কাউন্সিলর খবির উদ্দিন, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এম. সাইদুজ্জামান আরিফসহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামীলীগ, স্বেচ্ছা সেবকলীগ, কৃষকলীগ, ছাত্রলীগের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। উল্লেখ্য ২০১১ সালের উপ নির্বাচনে বিজয় লাভ করারপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে টুঙ্গীপাড়া যান। সে দিন তাঁর সফর সঙ্গী হয়েছিলেন জেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা কর্মীগণ। মাজার জিয়ারত শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফেরার পথে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মর্মান্তিক এক দূর্ঘটনায় শিকার হয় ছাত্রনেতাদের বহনকারি একটি গাড়ি। ঘটনা স্থলেই গাড়ি চালক সহ নিহত হন আট জন ছাত্র নেতা। হাসপাতালে নেওয়ার পর নিহত হন আরো চারজন। নিহত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন শান্ত, বাবু, লিয়েন, রুমেল, রায়হান, আলমগীর, তানভীর, রিয়াদ, মুরশেদ, আসিফ, এমরান, যুব নেতা ও গাড়ি চালক মিজান।
কি ঘটেছিলো সেদিন:-
বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত শেষে ঢাকায় ফেরার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর গাড়িবহর দুর্ঘটনায় ১১ জনের করুণ মৃত্যু হয়েছে। গুরম্নতর আহত দু’জন। তবে এমপি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী অক্ষত আছেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গা হাসপাতালে গিয়ে লাশের মিছিল দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় হাসপাতালজুড়ে সৃষ্টি হয় এক শোকাবহ পরিবেশ।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় ফরিদপুরের ভাঙ্গার তাড়াইলে এ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। মাইক্রোচালক বাদে নিহতরা সবাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। দুর্ঘটনার খবর শুনে নবনির্বাচিত এমপি গাড়ি ঘুরিয়ে দ্রম্নত হাসপাতালে যান।
ফরিদপুর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে নবনির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী তার সহযোগীদের নিয়ে কয়েকটি মাইক্রোবাসযোগে শুক্রবার সকালে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সমাধি থেকে ফেরার পথে বিকাল সাড়ে পাঁচটার সময় খুলনা-মাওয়া মহাসড়কে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার চন্দ্রা ইউনিয়নের তাড়াইল বাসস্ট্যান্ডের কাছে ঢাকার দিক থেকে আসা একটি তেলবাহী ট্যাঙ্কলরি (কুষ্টিয়া ড-৪১-০০১০) রাসত্মায় চলে আসা একটি গরম্ন বাঁচাতে গিয়ে এমপির গাড়িবহরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বহনকারী একটি মাইক্রোবাসকে সজোরে আঘাত করলে মাইক্রোটি দুমড়েমুচড়ে যায়। স্থানীয় জনগণ দ্রম্নত ঘটনাস্থলে এসে দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাস থেকে সবাইকে টেনে বের করে। এতে দুর্ঘটনাস্থলেই সাতজন মারা যায়। হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় আরও তিনজন। পরে হাসপাতালে ওটিতে মারা যান আরও একজন। নিহতদের মধ্যে ১০ জনই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। নিহত অপরজন মাইক্রোচালক মিজান মোলস্না। বিধ্বসত্ম মাইক্রোটিতে ছাত্রলীগের ১২ নেতাকর্মী ছিলেন। গুরম্নতর আহত তিনজনকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর ট্যাঙ্কলরি চালক গাড়ি রেখে পালিয়ে গেছে।
ফরিদপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট সুব্রত কুমার হালদার জানান, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত শেষে ঢাকা ফেরার পথে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের তাড়াইলে বিপরীতমুখী একটি ট্যাঙ্কলরির সঙ্গে সংঘর্ষে এমপি মোকতাদিরের গাড়িবহরের একটি মাইক্রোবাস দুমড়েমুচড়ে যায়। বর্তমানে তিনি ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুরে গেছেন আহতদের দেখতে।
উলেস্নখ্য, গত ২৭ জানুয়ারি উপনির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী নির্বাচিত হন।
জানা যায়, নবনির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী সহযোগীদের নিয়ে ১৬টি মাইক্রেবাসে নিজ এলাকা থেকে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন। নিহতরা হলেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেহেদী হাসান শানত্ম (৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক শওকত হোসেন লিয়েন (৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগ নেতা শেখ রায়হান (২৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক এজিএস আরিফুল ইসলাম বাবু (৩০), ছাত্রলীগ কমর্ী আসিফ (৩৪), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ইমরান (৩০), ছাত্রলীগ নেতা রম্নমেল (২৪), ছাত্রলীগ নেতা মোর্শেদ (২৮), রিয়াদ (৩১), তানভীর (২৫) ও মাইক্রো চালক মিজান মোলস্না। গুরম্নতর আহতাবস্থায় ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন মাইক্রোযাত্রী ছাত্রলীগ নেতা পাভেল (২৭), আলমগীর (২৭)।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক রাষ্ট্রপতি জিলস্নুর রহমান শুক্রবার ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার সলিলদিয়াতে মর্মানত্মিক সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাকমর্ীর মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোক বার্তায় তিনি দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসনত্মপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। রাষ্ট্রপতি দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশিস্নষ্ট কতর্ৃপৰকে নির্দেশ দেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার সলিলদিয়াতে মর্মানত্মিক সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাকমর্ীদের মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার এক শোকবার্তায় তিনি দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসনত্মপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।