জেলা বিএনপি’র কমিটি ভাঙার আওয়াজ : সাংগঠনিক সভায় ৮৬ নেতার গোপনে মতামত
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি’র কমিটি ভাঙার আওয়াজ ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার এক সাংগঠনিক সভার পরই জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে এমন কথা।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়- জেলা বিএনপি’র বর্তমান কমিটির কর্মকাণ্ড অবহিত হতেই ওই সভার আয়োজন করা হয়। সভায় উপস্থিত জেলা ও উপজেলা বিএনপি’র ৮৬ নেতা জেলায় দলের সাংগঠনিক অবস্থা কেন্দীয় নেতাদের গোপনে অবহিত করেন। শহরের পৈরতলার একটি কমিউনিটি সেন্টারে সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে এ সভা। এতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া ও কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া।
এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এমন নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আবদুল খালেক, তকদীর হোসেন মো. জসিম, রফিক সিকদার, সালাউদ্দিন শিশির ও শেখ শামীম।
সভায় উপস্থিত হতে জেলা বিএনপি’র সম্পাদকীয় পদধারী পর্যন্ত সবাই এবং উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র সভাপতি-সাধারন সম্পাদক নিমন্ত্রিত হন।
জেলা বিএনপি সূত্র জানায়, মোট ১২০ নেতাকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিলো। এরমধ্যে ৯৯ জন উপস্থিত হন। তাদের মধ্যে ১৩ জন ছাড়া বাকি সবাই কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বর্তমান কমিটির বিষয়ে তাদের বক্তব্য দিয়েছেন।
সভায় যোগদানকারী একাধিক নেতা জানান- সভার শুরুতে জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি এভভোকেট গোলাম সারোয়ার খোকন এবিষয়ে গোপনে কথা বলতে চান বলে কেন্দ্রীয় নেতাদের জানান। তার মতোই যুব বিষয়ক সম্পাদক মনির হোসেন গোপনে বক্তব্য রাখার কথা বলেন। সাংগঠনিক আলোচনা প্রকাশ্যে করার পক্ষে মত ব্যক্ত করেন প্রচার সম্পাদক আবু শামীম মো. আরিফ। তবে বেশির ভাগ নেতাই গোপনে বক্তব্য রাখার ব্যাপারে মত দেন। এরপরই কেন্দ্রীয় দু-নেতা গোপনে এক এক করে ৮৬ নেতার বক্তব্য শুনেন।
জেলা বিএনপি’র সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন- এটি সাংগঠনিক সভা ছিলো। সেখানে বর্তমান কমিটির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কেন্দ্রের নেতারা জানতে চেয়েছেন।
জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন বলেন- জেলা-উপজেলা ও পৌরসভার নেতাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বক্তব্য শুনেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
এদিকে সভার পরই কয়েকদিনের মধ্যে জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি ঘোষণা হচ্ছে বলে চাউর হয়। সদর আসনে সংসদ নির্বাচনে দলের প্রতিদ্বন্দ্বী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল এবং জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এমরানুর রেজার নেতৃত্বে এই কমিটি হচ্ছে বলে জেলা বিএনপি’র কয়েকজন নেতার মুখে শুনা গেছে। ২০১৫ সালে সম্মেলন হয় জেলা বিএনপি’র। একবছর পর ২০১৬ সালের মে মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়।
সূত্র জানায়- মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক ব্যর্থতার বিষয়ে জেলার অনেক নেতাই তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। নামমাত্র সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ তুলে ধরে নেতাদের কেউ কেউ বলেন, জেলায় দলের শীর্ষ দুই নেতা ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল ও হাফিজুর রহমান মোল্লা কচির বাসাতেই সীমাবদ্ধ ছিলো মূলত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। সংগঠন দুর্বল হওয়ার কারণে দলের নেতাকর্মীরা রাস্তায় নামতে পারেননি কখনো। মিছিল শিমরাইলকান্দি এলাকার পাওয়ার হাউজ রোডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। কোন মিটিং-মিছিল থাকলে ২৫-৩০ জনের বেশি নেতাকর্মীর দেখা পাওয়া যায় না। এই দৈন্যদশায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করতেও বাধাপ্রাপ্ত হতে হয়।
কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে সাংগঠনিক এই অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন এমন এক নেতা জানান- জেলা বিএনপির কমিটি ১৮৫ সদস্যবিশিষ্ট। দলের নেতাকর্মী যদি থাকে ২৫ জন পুলিশ থাকে ৫০ জন। সাংগঠনিক শক্তির অভাবেই মহল্লার পথ আর বাসাবাড়িতে বন্দি থাকতে হচ্ছে বিএনপিকে।
ওই নেতা বলেন, জেলার কোনও ইউনিয়নে বিএনপির কমিটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বলতে গেলে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির কোন কার্যক্রমই নেই। ২০১৪-১৫ সালের দিকে ইউনিয়ন কমিটিগুলো করা হয়েছিল। দলের তৃণমূলের এই নেতাদের অনেকেই নীরব। কেউ বা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। খোদ জেলা সদরে দলের রাজনীতি নামসর্বস্ব। পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে দলের কোন কার্যক্রমই নেই। পৌর বিএনপির কমিটি চলছে ৫ জন দিয়ে। বিভিন্ন উপজেলাতেও উল্লেখ করার মতো কোন সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। বরং বিভক্তি আছে। কমিটিগুলো মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে।
কসবা, আখাউড়া ও নবীনগর উপজেলায় গ্রুপিং প্রকট। সরাইল, নাসিরনগর, আশুগঞ্জ ও বাঞ্ছারামপুরের কমিটিও মেয়াদ উত্তীর্ণ।