Main Menu

গণিত চর্চা মেধা ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটায়:: রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রথম আলো আঞ্চলিক গণিত উৎসব ২০১৬

+100%-

Brahmanbaria Mathপ্রতিনিধি:: পৌষের সকাল। কায়াশার সঙ্গে ঝিরিঝিরি হিমেল বাতাস। কনকনে শীত। কুয়াশার সঙ্গে শীতটাও তাই জেঁকে বসেছে। কিন্তু গণিত জয়ের স্বপ্ন নিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের কাছে তা কিছুই নয়। উৎসব শুরু হওয়ার আগেই গণিতপ্রেমী শিক্ষার্থীরা দলে দলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে হাজির হতে শুরু করে। সাড়ে আটটার মধ্যেই ৭০০ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে উৎসবের প্রাঙ্গন। শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় রূপ নেয় ‘ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০১৬’।
গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত হয় ১৪তম আসরের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক পর্যায়ের অনুষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের গাণিতিক মেধার উৎকর্ষ বৃদ্ধি এবং হংকং এ অনুষ্ঠেয় ৫৭ তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) অংশ গ্রহনের জন্য বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্য নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে এ উৎসব শুরু হয়েছে।
সকাল সাড়ে নয়টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া বন্ধুসভার সদস্যদের গাওয়া জাতীয় সংগীতে অংশ নিতে দাঁড়িয়ে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নরসিংদীর প্রায় ৪০ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭০০ শিক্ষার্থী। এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল বেলুন ও প্লেকার্ড। প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এই চার বিভাগে ভাগ হয়ে শিক্ষার্থীরা গণিত প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা নাজমীন, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন প্রথম আলো পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ূম ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলমগীর কবীর।
অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফরিদা নাজনীন সকাল সাড়ে নয়টায় উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শিক্ষার্থীরা ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা শেষে ১০ মিনিটের ‘বন্ধুতা পর্ব’ অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং বই কেনে। এরপর বন্ধুসভার সদস্য ফারিয়া নাওমী নৃত্য এবং সাংস্কৃতিক দল দলীয়ভাবে ‘আয় আয় আয় গণিতের আঙিনায়’ ‘আমরা করবো জয়’ শীর্ষক গান পরিবেশন করে।
দুপুর সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিডেন্ট সৌমিত্র চক্রবর্তী শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু করেন। ‘পাই এর মান অসীম। পাই এর মান নির্ণয়ে এখন পর্যন্ত কত সংখ্যক মান নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে।’ এমন প্রশ্নসহ শিক্ষার্থীরা গণিত, বিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিষয়ে নানান প্রশ্ন করে। শিক্ষার্থীদের নানান প্রশ্নের উত্তর দেন সহযোগী অধ্যাপক আলমগীর কবীর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, রসায়ন বিভাগের প্রভাষক আব্দুল খালেক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফজলে রাব্বি। মজার ও গঠনমূলক প্রশ্ন করার জন্য পুরস্কার হিসেবে শিক্ষার্থীদের ‘কিশোর আলো’ পত্রিকা উপহার দেওয়া হয়।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে ‘এক মিনিট বক্তৃতা পর্ব’ অনুষ্ঠিত হয়। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বন্ধুসভার পক্ষে শাহীন মৃধা, প্রথম আলোর ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি শাহাদৎ হোসেন। আরও বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইডিয়াল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সোপানুল ইসলাম, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার ব্যবস্থাপক জহিরুল হক, অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা নাজমীন, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাউয়ূম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক আলমগীর কবীর।
গণিতকে বিশ্বভাষা হিসেবে আখ্যায়িত করে সোপনুল ইসলাম গণিতকে নোবেল পুরস্কারের আওতায় আনার দাবি জানান। শিক্ষার্থীদেরকে গণিতের আন্দোলন চালিয়ে যাবার আহবান জানান। তিনি শিক্ষার্থীদের পরিবেশ নোংরা করা থেকে বিরত থাকবে।
বক্তব্যে ফরিদা নাজমীন বলেন, ‘তোমরা অনেক মেধাবী। প্রতিদিন মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছো। তোমরা অনেক ভাগ্যবান। আমরা তোমাদের মতো এতো সুযোগ পায়নি। আমাদের সময়ে প্রথম আলো থাকলে আমরাও অনেক দূর এগিয়ে যেতাম। তোমাদের প্রতিভায় বাংলাদেশ বিশ্বসম্ভাবে আরো আলোকিত হবে।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জ্ঞান ভিত্তিক, মেধা ভিত্তিক ও বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষাকে অগ্রসর করতে গণিতের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। গণিত শিখে এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা দেশকে এগিয়ে নিতে যেতে পারবে। প্রথম আলো পত্রিকা গণিত উৎসবের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রথম আলো পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ূম বলেন, গণিত চর্চার বিষয়। মেধা, মনন ঠিক রাখতে চাইলে গণিত চর্চা করতে হবে। গণিত চর্চা মেধা ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটায়। তাই মস্তিকের ব্যায়ামের জন্য গণিত চর্চা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেকের মধ্যে থাকা মেধাকে বিকশিত করা সম্ভব। আজকের শিশু আগামী দিনে গণিত বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আলোকিত করবে। কারণ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন আর গণিতভীতি নেই।
উৎসবের শেষ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের তিন ম ‘মাদক’ ‘মিথ্যা’ ও ‘মুখস্ত’ কে না বলার অঙ্গীকার করানো হয়। সবশেষে ভেন্যু প্রতিষ্ঠানকে স্মারক ক্রেস্ট তুলে দেন আব্দুল কাইয়ূম ও বিজয়ী ৪০ জনের নাম ঘোষণার পাশাপাশি তাদের হাতে মেডেল, সনদপত্র ও উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।



« (পূর্বের সংবাদ)



Shares