Main Menu

‘আবদুল মোনেম সৎভাবে ব্যবসা করে দেখিয়েছেন কতটা প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব’

+100%-

বিবিসি বাংলা:: বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি ও মোনেম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মোনেম আজ (রবিবার) সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

মোনেম গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তার নামাজে জানাজা ও দাফন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তার নিজের গ্রামের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশের নির্মাণ খাতে অন্যতম সফল প্রতিষ্ঠান মোনেম গ্রুপ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা, ব্রিজ, ফ্লাইওভারের মত অবকাঠামো তৈরির পাশাপাশি অনেক জায়গায় ফুটপাথ, বাঁধ নির্মাণ করেছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পেও বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামো তৈরির কাজে নিয়োজিত রয়েছে মোনেম গ্রুপ।

নির্মাণ খাত ছাড়া চিনি পরিশোধনাগার, জ্বালানি, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের সামগ্রী, ফার্মাসিউটিক্যাল, খাদ্য ও পানীয় খাতেও ব্যবসা রয়েছে মোনেম গ্রুপের।
‘রাজনৈতিক চাপে কখনো ব্যবসায়িক আদর্শের সাথে আপস করেননি’

নির্মাণ খাতের মত গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকলেও তার ব্যবসায়িক মতাদর্শ কখনো রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়নি বলে মন্তব্য করেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রোকিয়া আফজাল রহমান।

তিনি মন্তব্য করেন, ব্যবসা শুরু করার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বা বারবার ক্ষমতার পালাবদল আবদুল মোনেমের ব্যবসায়িক মতাদর্শকে প্রভাবিত করতে পারেনি।

“বাংলাদেশে অনেক ব্যবসায়ীই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসায়িক সুবিধা আদায় করে থাকেন। কিন্তু আবদুল মোনেম তার সততা দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন যে তিনি কোনো রাজনৈতিক চাপে প্রভাবিত হবেন না।”

“যেই রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় থাকুক, আবদুল মোনেমের নৈতিক দৃঢ়তা ও ব্যবসায়িক সততার জন্য প্রত্যেকটা সরকার তাকে সম্মান দিয়েছে। তিনিও প্রতিটি সরকারের সময়েই ব্যবসা করে গেছেন।”

তিনি বলেন কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রভাবে আবদুল মোনেম তার ব্যবসার নীতির সাথে আপস করেননি। আর তার এই চারিত্রিক দৃঢ়তাকে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক চিন্তাধারা সম্মান করেছে।

“তিনি সৎভাবে ব্যবসা করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে ব্যবসা কতটা প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব”, বলেন রোকিয়া আফজাল রহমান।

নিটোল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ইন্দো-বাংলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ বলেন, “যে কোনো বড় ধরণের ব্যবসাতেই একটি দেশের সরকারের সাথে কাজ করতে হয়। আবদুল মোনেমও সব সরকারের সাথেই কাজ করেছেন, কিন্তু কখনও কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের দিকে পক্ষপাতী ছিলেন না তিনি।”

“আর এজন্য সব সরকারই বড় বড় কাজের জন্য তাকেই ডাকতো।”

২০০৮ সালে ডেইলি স্টার-ডিএইচএল বিজনেস অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করার সময় আবদুল মোনেমের বক্তব্যের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রোকিয়া আফজাল রহমান বলেন, “তিনি ঐ অনুষ্ঠানে বক্তব্য বলেছিলেন যে, ‘আমাকে শুধু বিদ্যুৎ আর গ্যাস দিন, আর কিছু লাগবে না, যা নির্মাণ করা লাগবে তা আমরা করে নিতে পারবো’ – নিজের সততা ও কর্মদক্ষতার ওপর এতটাই আত্মবিশ্বাস ছিল তার।”

পণ্য উৎপাদন ও সেবা খাতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোনেম গ্রুপের পদচারণা থাকলেও নির্মাণশিল্পে তাদের ভূমিকা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতকে শক্তিশালী করার পেছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন রোকিয়া আফজাল রহমান।

“নির্মাণ খাতের কাজ তিনি নিজে শুরুতে শিখেছেন, তারপর শিখিয়েছেন। তাদের অন্য অনেক ব্যবসা রয়েছে যেগুলো হয়তো পরে প্রতিষ্ঠা হয়েছে বা তারা কিনে নিয়েছে। কিন্তু নির্মাণ খাতে তাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের পাশাপাশি এই ব্যবসায় দীর্ঘদিন কাজ করায় আবদুল মোনেমের অভিজ্ঞতার কারণে এই শিল্পে মোনেম গ্রুপকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।”

আবদুল মাতলুব আহমেদ মন্তব্য করেন, “আমার মতে আবদুল মোনেমের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল যে তিনি অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। যে কোনো নতুন ধরণের ব্যবসায় হাত দেয়ার ঝোঁক ছিল তার।”

“আর তার দুই ছেলেকে তিনি নিজে কাজ শিখিয়েছেন। তারপর তাদের নিজেদের ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। তার এই ব্যবসায়িক দর্শন ও দূরদর্শিতা তার সুখ্যাতিকে আরো প্রতিষ্ঠিত করেছে।”






Shares