Main Menu

নৌকাডুবি: আরও এক শিশুর লাশ উদ্ধার, নিহত বেড়ে ২২

+100%-

বিজয়নগর উপজেলায় যাত্রীবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকার সঙ্গে বালুবোঝাই ট্রলারের সংঘর্ষের ঘটনায় আরও এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ২২ মরদেহ উদ্ধার করা হলো। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছে আরও অনেকে। এর আগে গতকাল শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২১ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। রাতে উদ্ধারকাজ শেষে এ তথ্য জানিয়েছিলেন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনিসুর রহমান। পরে আজ শনিবার সকাল ৮টার দিকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার পর উদ্ধার অভিযানের সময়ই এক শিশুর লাশ ভেসে ওঠে। এরপর লাশটি উদ্ধার করা হয়।

জানা গেছে, গতকাল বিকেল পৌনে ৬টার দিকে জেলার বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ঘাট থেকে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি সদর উপজেলার আনন্দবাজার খেয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। প্রায় ২০ মিনিট পর শেখ হাসিনা সড়কের পাশে লইসকা বিলের ভাতের খলা নামক স্থানে যাত্রীবোঝাই নৌকাটিকে বালুবোঝাই একটি ট্রলার প্রচণ্ড বেগে ধাক্কা দেয়। এতে শতাধিক যাত্রী নিয়ে নৌকাটি ডুবে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নৌকাটি ডুবে যাওয়ার সময় নারী, পুরুষ ও শিশুর চিৎকারে হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় অন্তত অর্ধশত মানুষ সাঁতরে পাড়ে উঠতে সক্ষম হয়। পরে পাশের গ্রামের বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। ওই সময় দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজারও মানুষ জড়ো হয়। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

এদিকে, গতকাল রাত ১২টার মধ্যে একে একে ২১টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হায়াত উদ দৌলা খান, এসপি মো. আনিসুর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ তদারকি করেন। সাত সদস্যের একটি ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। এ ছাড়া উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি দল কাজ করে। এ নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, গতকাল রাতেই হাসপাতাল থেকে স্বজনদের কাছে নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে পাপিয়া (১১), ঝর্ণা বেগম (৪৫), তিথিবা বিশ্বাস (২), শারমিন (১৮), কাজলী বেগম, মাহিন মিয়া (৩২), নাজিম, জামাল মিয়া, তাহুরা (৮), আরিফ বিল্লাহ মাসুম, মঞ্জু বেগম (৬০), ফরিদা বেগম (৪০), মুন্নি (৬), মিনারা বেগম, অঞ্জলি বিশ্বাস, কমলা বেগম।

নৌকার যাত্রী সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের আঁখি আক্তার জানান, তিনি তাঁর স্বামী মুরাদ মিয়া, দুই ছেলে, শাশুড়ি, ভাসুরের তিন ছেলেসহ বিজয়নগরের চম্পকনগর ঘাট থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনন্দবাজার ঘাটে আসার জন্য নৌকায় উঠেছিলেন। সেখানে শতাধিক যাত্রী ছিল। নৌকাটি পথিমধ্যে লইসকা বিলে এসে বালুবোঝাই একটি ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পানিতে তলিয়ে যান। তিনি তাঁর স্বামী ও এক ছেলে সন্তানকে নিয়ে সাঁতরে বিলের কিনারে আসতে পারলেও তাঁর আরেক ছেলে, শাশুড়ি ও ভাসুরের তিন ছেলে নিখোঁজ রয়েছে।

হাসপাতালে আহত মুরাদ মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। তারপর অনেক কষ্টে এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সাঁতরে পাড়ে উঠেছি। আমার এক ছেলে, মা ও তিন ভাতিজা এখনও নিখোঁজ রয়েছে।’

নৌকায় থাকা যাত্রী মোহাম্মদ রাফি বলেন, ‘নৌকাটি ডুবে যাওয়ার সময় আমি পানিতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে পাড়ে উঠি। নৌকার নিচে ও ওপরের দিকে শতাধিকের মতো যাত্রী ছিল।’

ডিসি হায়াত উদ দৌলা খান জানান, ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে






Shares