Main Menu

ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ মাহফুউল্লাহ

+100%-

নাওঘাট গ্রামের সূর্য্য সন্তান প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যিক ও ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ মাহফুউল্লাহ । মেঘনা-তিতাস বিধৌত ব্রাহ্মণ বাড়িয়া জেলা লোকইতিহাস, লোকসংস্কৃতি, শিক্ষা, সাহিত্য, সমাজ-সংস্কৃতির সুনাম ও গৌরবে বাংলাদেশ তথা এ উপমহাদেশে বিশেষ মর্যাদায় সুপ্রতিষ্ঠিত। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এই জেলার অন্যতম কৃতি সন্তান প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যিক মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ’র জম্ম আশুগঞ্জ উপজেলার নাওঘাট গ্রামে । ১৯৩৬ সালের ১লা জানুয়ারীতে এক উচ্চ ও মধ্যে বিত্ত মুসলিম পরিবারে জম্ম গ্রহন করেন তিনি । শিক্ষা জীবন শুরু নাওঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে, ১৯৫০ সালে তালশহর হাই স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫২ সালে আই.এ ও ১৯৫৫ সালে বি.এ পাশ করেন। পরে শিক্ষা জীবনের ইতিটানে ( বাংলা ) এম.এ প্রথম পর্ব : ১৯৫৫-১৯৫৬ শিক্ষা বর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । তারপর প্রবেশ কর্মজীবনে, মাসিক মাহে-নও তে ১৯৫৬-১৯৬১ সাল পর্যন্ত সহ-সম্পাদক হিসাবে কাজ করেন তিনি। সাহিত্য সম্পাদক দৈনিক জেহাদ ১৯৬১-১৯৬২ সাল পর্যন্ত। সহযোগী সম্পদক ছিলেন ১৯৬১-১৯৬৭ পর্যন্ত মাসিক “পূবালী” তে । সিনিয়র সহকারি সম্পদক হিসাবে দৈনিক বাংলা (সাবেক পাকিস্তান), ১৯৬৪-১৯৯৭ পর্যন্ত কাজ করেন । ১৯৭৯ সালে নজরুল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা হলে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই নির্বাহী সদস্য ও নজরুল প্রত্রিকার প্রধান উপদেষ্টা, পরবর্তীতে নিবার্হী পরিচালকের দায়িকত্ব পালন করেন তিনি (১৯৮৫-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত)। পেশা জীবনে অধিককাল সাংবাদিকতার সাথে জড়িত থাকলেও এ উপ-মহাদেশে মূলত কবি,সাহিত্যিক,সমালোচক হিসাবে তার ব্যাপক পরিচিত সমাদৃত। মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, আলোচক, সমালোচক, নজরুল ইসলাম ও ফররুখ গবেষক । রবীন্দ্র গবেষনায়তেও তার রয়েছে যথেষ্ট খ্যাতি। কৈশোর কালেই কবিতা লেখা ও ছবি আঁকার প্রতি প্রবল নেশা পেয়ে বসে তাকে।কৈশোর কিংবা শৈশবের সে নেশায় মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ’র সাহিত্য জগতে প্রবেশ। ১৯৫৩-১৯৫৯ সালের পরিধিতে রচনা করেন তার প্রথম কাব্য গন্থ “জুলেখার মন” বইটি লেখে সাহিত্যঙ্গনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন তিনি , পাঠক মহলেও ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়, তার পর দ্বিতীয় গন্থ অন্ধকারে একা, রক্তিম হৃদয় দিয়েই শুরু আর পিছনে থাকাতে হয়নি এই যুগ স্রষ্টা কবি’র। শুধু সামনেই এগিয়ে চলা। কবি,সাহিত্যিক,সমালোচক ও প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ আমাদের সাহিত্য জগতের এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ।……রোমান্টিক সুলভ কল্পনার অধিকারী, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধে আস্থাশীল মাহফুজউল্লাহ’র কাব্যে দেশ ও প্রকৃতির প্রতি অনাবিল ভালবাসা যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি বর্তমান যুগ-সংকট সম্পর্কে তাঁর মানস-প্রক্রিয়াও ব্যক্ত হয়েছ। মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ’র লিখা বইয়ের সংখ্যা কবিতা-১২ টি, প্রবন্ধগন্থ-২০টি, স্মৃতিকথা-৩টি, জীবনীগ্রন্থ ২টি, শিশু কিশোর ছড়া-১টি, কিশোর গ্রন্থ অভিযান কাহিনী-১টি, সম্পাদিত গ্রন্থ-৭টি, অগ্রন্থিত উপন্যাস-২টি যথা- পান্ডুর আকাশ (মাসিক মোহাম্মদীতে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত), ২-জীবন-খাচাঁর পাখি (ঈদ সংখ্যা-সচিত্র স্বদেশ)। অগ্রস্থিত রচনার সংখ্যা অর্ধ সহস্রাধিক, অ-প্রকাশিত রচনার সংখ্যাও তার চেয়ে কম নয়। মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ’র কবিতা ইংরেজী, রুশীয়,জার্মানী,ফরাসী,ইটালিয়ান,আরবী,উর্দু ইত্যাদি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন । প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যিক প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ মাহফুউল্লাহ’র অসামান্য অবদানে জন্য বাংলাদেশ সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করেন । পদক সম্মাননাঃ-১.বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরষ্কার (১৯৭৭), ২. নজরুল স্মৃতি পুরষ্কার (কলকাতা-(১৯৮৫), ৩. কবি ফররুখ স্মৃতি পুরষ্কার-(২০০৪), ৪. আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরষ্কার, ৫.তমদ্দুন মজলিশ প্রদত্ত “মাতৃভাষা পদক” ৬. জাতীয় প্রেসক্লাব লেখক সম্মাননা পদক, ৭. ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সম্মাননা পদক, ৮. ফকির ফাউন্ডশন সম্মাননা পদক-(২০০৬), ৯. আশুগঞ্জ বন্দর শতবর্ষ উদযাপন পরিষদ সম্মাননা-(২০০০), ১০. বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র প্রদত্ত সম্মাননা-(২০০৬), ১১.নজরুল ইনস্টিটিউট প্রদত্ত নজরুল পদক-(২০০৪), ১২.তমদ্দুন মজলিশ প্রদত্ত গুণীজন সম্বর্ধনা পদক, ১৩. শাহেদ আলী ফাউন্ডেশন পুরষ্কার, ১৪. অলক্ত সাহিত্য পুরষ্কার, ১৫. রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান “একুশে পদক”-(২০০৭), ১৬. নাওঘাট কল্যাণ সমিতি প্রদত্ত সংর্বধনা ২০০৮ , ১৭. ড. জেট এইচ ভূইঁয়া ফাউন্ডশন প্রদত্ত সংর্বধনা । দৃষ্টিপাত:- নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক পদে থাকাকালে তিনি “বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী” পরিচালনা পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রযত্ন পরিষদেরও সদস্য ছিল ( ২০০৩-২০০৫ ) পর্যন্ত । মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ বাংলা একাডেমী কতৃক প্রকাশিত ( কবি আব্দুল কাদির সম্পাদিত ) “নজরুল রচনাবলী’র” নতুন সংস্করণের সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ও প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন । প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যক,প্রাবন্ধিক, মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ জীবনের শেষ সময় এসে ২০১৩ সালের ২৯শে ডিসেম্বরে পৃথিবীর সব কিছু থেকে নিঃসঙ্গ হয়ে সাহিত্য জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের জীবন প্রদীপ নিবে যায়। তার এ অসময়ে চলে যাওয়া সাহিত্যঙ্গনের জন্য অপুরণী ক্ষতি হয়ে গেল।

লেখক: মো: তারিকুল ইসলাম সেলিম






Shares