ফোনের ওপারের সেই নির্দেশদাতা কে? ডেস্ক ২৪: গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ডের ক্লোজ্ড সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ঘাতক তারেক ডান হাতে মিল্কির মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছেন। একই সময়ে বাম হাতে মোবাইল ফোনে কারো সাথে কথা বলছেন। যেন, গুলি ও মৃত্যুগোঙানির শব্দটা তাকে শুনাচ্ছিলেন ঘাতক। এ দৃশ্য খোদ মারদাঙ্গা চলচ্চিত্রকেও হার মানিয়েছে। ঘাতক এতোটাই সুনিপুনভাবে তার কাজ সম্পাদন করেছে যে, শিকার এক মূহুর্তের জন্যও প্রাণ বাঁচানোর সুযোগ পায়নি। ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে সবার মনেই এখন প্রশ্ন উঠেছে, অলক্ষ্যের ইশারাকারী কে বা কারা ছিল? যার সাখে তারেক কথা বলছিলেন আর গুলি ছুড়ছিলেন? র্যাবেরও ধারণা, কথা বলা ছাড়াও তারেক বাম হাতের খোলা মোবাইলে কাউকে গুলির শব্দ বা মিল্কির আর্ত চিৎকার শোনাচ্ছিলেন। বিষটি নিয়ে তদন্ত করছেন তারা। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এ টি এম হাবিবুর রহমান বলেন, “তারেক অসুস্থ থাকার কারণে এখনও এ বিষয়ে তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি। সে সুস্থ হলে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।” তখন বেরিয়ে আসবে ফোনের ও প্রান্তে কে বা কারা ছিলেন। তবে র্যাবের ধারণা, হত্যাকাণ্ডের সময় দুটি কারণে তারেক পাজামা, পাঞ্জাবি ও সাদা টুপি পরে ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন। প্রথমত, নিহত মিল্কি ও তারেক পূর্ব থেকেই পরস্পরের পরিচিত। তারা মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে একসাথে বড়ো হয়েছেন। সুতরাং, টার্গেটকে খুব কাছ থেকে গুলি করতে তারেকের প্রয়োজন ছিল মিল্কির অপরিচিত ছদ্মবেশ। পাঞ্জাবি, পাজামা ও টুপি পরার কারণ হিসেবে এটাকে প্রাথমিক সম্ভাবণা হিসেবে দেখছে র্যাব। এ বিষয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে হাবিবুর রহমান বলেন, “হত্যাকাণ্ডের ভিডিওতে তারেকের দ্রুত হাঁটার দৃশ্য দেখে প্রাথমিকভাবে যে কারো মনে হবে, খুব ব্যস্ত একজন পথচারী কোনো প্রয়োজনে দ্রুত হাঁটছেন। মূলত সদ্য গাড়ি থেকে নেমে আসা মিল্কিকে বুঝতে না দেয়ার জন্য তারেক এ কৌশল অবলম্বন করেন।” দ্বিতীয়ত, প্রথম গুলি লক্ষ্যভেদ না করতে পারলে পরবর্তীতে একাধিক রাউণ্ড গুলি ব্যবহারের সুবিধা আদায় করতে চেয়েছিলেন তারেক। এজন্য তার প্রয়োজন ছিলো প্রথম গুলিটি ছোঁড়ার পর তা লক্ষ্যভ্রষ্ঠ হলে পথচারীদের ভীড়ে মিশে দ্বিতীয় গুলি করার মতো সময়টুকু। এমন ছদ্মবেশ নেওয়ার দ্বিতীয় কারণ, বিপনী বিতানের সামনে সদ্য তারাবির নামাজ থেকে দ্রুত বাড়ি ফিরছেন তারেক। হাবিবুর রহমান বলেন, “এমন অনেক ঘটনা আছে যে, প্রথম গুলি মিস হলে সন্ত্রাসীরা টার্গেটকে আর হত্যা করতে পারে না। এ ধরণের ধারণা থেকেই হয়তো তারেক ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন।” সোমবার গভীর রাতে গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে গুলিতে নিহত হন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন খান মিল্কি। এর কয়েক ঘণ্টা পর সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক এইচ এম জাহিদ সিদ্দিক তারেককে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শপার্স ওয়ার্ল্ডের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়ে ওই হত্যাকাণ্ডের চিত্র। ওই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি এখনো উদ্ধার করা যায়নি জানিয়ে র্যাবের পরিচালক বলেন, “এ ঘটনায় আটক সবাইকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।” গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মিল্কির ছোট ভাই মেজর রাশিদুল হক খান বাদি হয়ে মঙ্গলবার রাতে একটি মামলা করেছেন। এজাহারে জাহিদ সিদ্দিকী তারেককে প্রধান আসামি করে মোট ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরো কয়েকজনকে আসামি করেছেন বাদি। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারেক ছাড়া বাকি ছয় জনকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডেও নিয়েছে পুলিশ। মিল্কির ‘খুনি’ তারেক সহযোগীসহ ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক মিল্কি হত্যাকাণ্ডের মূল ‘আসামি’ যুবলীগের আরেক নেতা এইচ এম জাহিদ সিদ্দিক তারেক তার সহযোগী শাহ আলমসহ ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়েছেন।বুধবার রাতে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক জিয়াউল আহসান এ তথ্য জানিয়েছেন। র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কিসমত হায়াত জানান, রিয়াজুল হক মিল্কী হত্যার পর সিসিক্যামেরার ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার এইচ এম জাহিদ সিদ্দিক তারেককে উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছিল। বুধবার রাতে তাকে উত্তরার হাসপাতাল থেকে গুলশান থানায় হস্তান্তরের জন্য র্যাবের বিশেষ নিরাপত্তায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তারেককে বহনকারী র্যাবের গাড়িটি ছাড়াও আরো একটি র্যাবের গাড়ি বিশেষ প্রহরায় ছিল। গাড়ি খিলক্ষেত এলাকায় পৌঁছালে একটি সাদা প্রাইভেটকার র্যাবের গাড়ির গতিরোধ করে। এক পর্যায়ে তারা র্যাবকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে। র্যাবও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে র্যাবের প্রতিরোধের মুখে তারা পালিয়ে যায়। পরে র্যাবের গাড়িতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তারেককে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে তারেক নিহত হন। তিনি জানান, সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে নিহত অবস্থায় এক সন্ত্রাসীকে পাওয়া যায়। তার হাতে একটি অস্ত্র ছিল। এছাড়া কিছু দূরে পরিত্যক্ত অবস্থায় আরো একটি অস্ত্র ও একটি মটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। র্যাব কিসমত হায়াত জানান, সন্ত্রাসীদেরগুলোতে দুজন র্যাব সদস্য গুরুতর আহত হন। তাদের গায়ে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট না থাকলে তারাও প্রাণ হারাতেন। মূলত তারেককে র্যাবের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্যই ওই সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। গত সোমবার গভীর রাতে গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে ছোটবেলার বন্ধু তারেকের গুলিতে নিহত হন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিল্কি। শপার্স ওয়ার্ল্ডের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়ে ওই হত্যাকাণ্ডের চিত্র। সেখানে দেখা যায় মিল্কী কীভাবে খুন হন। র্যাব জানা্য়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেখে প্রাথমিকভাবে যে কারো মনে হবে, খুব ব্যস্ত একজন পথচারী কোনো প্রয়োজনে দ্রুত হাঁটছেন। “মূলত গাড়ি থেকে নেমে আসা মিল্কিকে বুঝতে না দেয়ার জন্য তারেক এ কৌশল নেন।” ছদ্মবেশধারী তারেক মিল্কির কাছে এসে প্রথম গুলি ছোড়েন। তাতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মিল্কি। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য করা হয় দ্বিতীয় গুলি। এর আগে ২৭টি ‘কিলিং মিশনে’ অংশ নেয় তারেক পেশাদার কিলার তারেক। এর আগেও ২৭টি ‘কিলিং মিশনে’ অংশ নিয়েছেন তিনি। যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তারেকের ২৮ নম্বর ‘কিলিং মিশন’। ‘লাইভ হত্যাকাণ্ড’ ঘটনার নায়ক তারেক এখন টক অব দ্যা সিটি। নৃশংসভাবে যুবলীগ নেতা মিল্কিকে হত্যা করে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিজেই নিহত হন। র্যাব সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। র্যাব-১ এর অধিনায়ক কিসমত হায়াৎ জানান, তারেক একজন পেশাদার ‘কিলার’। সে টাকার বিনিময় অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। যদিও যুবলীগ নেতা মিল্কীকে তারেক দলীয় কোন্দলের কারণেই খুন করেন। তারেক এর আগে ২৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। মিল্কি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তার ২৮ নম্বর ‘কিলিং মিশন’। কিসমত মিল্কি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে বলেন, এ এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য। মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি। পড়ে যান মিল্কি। বাঁচার জন্য সামনে দৌড়ানোর চেষ্টা। আবারও গুলি। ফের উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা। যমদূতের হাতে থাকা পিস্তল থেকে আবারও বেরিয়ে আসে গুলি। নিস্তেজ হয়ে পড়েন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিল্কি হত্যাকা্ণ্ডের আসল নায়ক তারেক মিল্কিরই দলীয় সহকর্মী ও বন্ধু। ছোট বেলা থেকেই তারা এক সঙ্গে বেড়ে উঠেন। মিল্কি যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিরক সম্পাদক আর জাহিদ সিদ্দিকী তারেক একই কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। মৃত্যুর বেশ আগে মিল্কি র্যাব ও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, তাকে হত্যা করা হতে পারে। মিল্কির সে আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হলো। মিল্কির পারিবারিক সূত্র জানায়, সন্তানদের পোশাক বদল করতে সোমবার ইফতার শেষে মোহাম্মদপুর স্যার সৈয়দ রোডের ৬/৬ নম্বরের বাসা থেকে শপার্ড ওয়ার্ল্ডের উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে মিল্কি বের হয়েছিলেন। এ সময় গুলশানে তিনি পরিচিতদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা দেন। সাগর নামের একজনের প্রাইভেট কারে চড়ে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। ঘাতক তারেক মিল্কির ছোটবেলার বন্ধু এবং যুবলীগ দক্ষিণের নেতা। রাজনৈতিক কলহ, আধিপত্য বিস্তার এবং ব্যক্তিগত আক্রোশে মিল্কিকে হত্যা করা হয়েছে। র্যাবের গোয়েন্দা ইউনিট জানায়, মতিঝিল এলাকায় সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নিয়ে তারেক ও মিল্কীর মধ্যে দ্বন্দ্বের তথ্য পেয়েছে। এ এলাকায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটি ও এলাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই দু’জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। মতিঝিল এজিবি কলোনিতে মিল্কীর হাত ধরেই তারেকের রাজনীতিতে প্রবেশ। কিন্তু সম্প্রতি যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটি গঠন নিয়ে দু’টি গ্রুপের সৃষ্টি হয়। বর্তমান সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট গ্রুপের লোকজন কমিটিতে বেশি স্থান পায়। সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম আরিফের গ্রুপের সবচেয়ে কম লোকজন স্থান পায়। এ নিয়ে সম্রাট ও আরিফ গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। মিল্কী কমিটিতে সাংগাঠনিক সম্পাদক এবং তারেক কার্যকরী সদস্য পদ পান। সম্প্রতি কারাগারে আটক শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে বাড্ডার জাহাঙ্গীর-আলমগীরের মাধ্যমে মিল্কী রাজনৈতিক আশ্রয় দিচ্ছিল। কারাগারে আটক আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তারেকের। তারেক যুবলীগ উত্তরের নেতা চঞ্চল গ্রুপের সঙ্গে এক হয়ে আরেকটি গ্রুপ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি গ্রুপের সুদৃষ্টিতে পড়ে তারেক। এ নিয়ে মতিঝিল কেন্দ্রিক বিভিন্ন অফিসের টেন্ডার বিশেষ করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের টেন্ডার ও সিএমএমইউ (কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট অব মেডিক্যাল ইউনিট) টেন্ডার নিয়ে তারেক ও মিল্কীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। অন্যদিকে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মিল্কী নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা দেন। এসব নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে বৈরিতা ওঠে চরমে। এক সময়ে দু’জনেই ছিলেন মতিঝিলের এজিবি কলোনির বাসিন্দা। সেখানেই তাদের বেড়ে ওঠা। রিয়াজুল হক খান মিল্কির পিতা ইনকাম ট্যাক্স প্র্যাকটিশনার। তারেকের পিতা ছিলেন রাজস্ব বিভাগের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। প্রায় একই সময়ে তারেক ও মিল্কি শামিল হন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে, নাম লেখান যুবলীগে। এক সময়ে ঘনিষ্ঠ থাকলেও গত কয়েক বছর তারা একজন আরেকজনের শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হন। মতিঝিলকেন্দ্রিক ব্যবসা, টেন্ডার বাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা ধরনের ব্যবসায়িক কারণে বিরোধ বাধে। এক সময়ে দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠা মিল্কি ও তারেক বর্তমান সরকার আমলে অগাধ বিত্তের মালিক বনে যান। দুই জনই মতিঝিল এলাকার কমিশনার প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে দিনে দিনে তাদের মধ্যে বিরোধ আরও বাড়তে থাকে। কয়েক বছর আগে তারেক এজিবি কলোনি ছেড়ে চলে যান ইস্কাটনে। মিল্কি চলে যান মোহাম্মদপুরে। কিন্তু তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং রাজনীতির কেন্দ্র মতিঝিলেই থেকে যায়। একটি সূত্র জানিয়েছে, মাস চারেক আগেই মতিঝিল এলাকার একটি টেন্ডারকে কেন্দ্র করে চরম বিরোধ বাধে তাদের মধ্যে। দু’জনই তাদের গ্রুপ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নেন। গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মিল্কির ছোট ভাই মেজর রাশিদুল হক খান বাদি হয়ে ১১জনকে আসামি করে মঙ্গলবার রাতে একটি মামলা করেছেন। এজাহারে জাহিদ সিদ্দিকী তারেককে প্রধান আসামি করে মোট ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরো কয়েকজনকে আসামি করেছেন বাদি। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারেক ও তার এক সহযোগী র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এছাড়া বাকি ছয় জনকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডেও নিয়েছে পুলিশ। টেন্ডার ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে খুন হন যুবলীগ নেতা মিল্কি রাজনৈতিক ও টেন্ডার নিয়ে বিরোধের জের ধরেই যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন খান ওরফে মিল্কিকে খুন করা হয়েছে। অনেক দিন ধরে যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এইচএম জাহিদ সিদ্দিকী তারেকের (৩৫) সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব চলতে ছিল। তবে বেশ কিছু দিন ধরে স্থানীয় কিছু কাজের টেন্ডার ও রাজনৈতিক পদ নিয়ে তার সঙ্গে বিরোধ আরো জোরালো হয়। এই কারণেই তারেক এবং তার সহযোগিরা মিল্কিকে খুন করে। পুলিশ ও নিহতের স্বজনদের সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। হত্যাকাণ্ডের কারণ সর্ম্পকে র্যাবের আইন গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবীবুর রহমান জানান, তারেক ও তার গ্রুপের সাথে মিল্কি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বেও জড়িয়ে পড়েন। এই রেষারেষির জের ধরে মিল্কিকে খুন করা হয় বলে আমরা ধারণা করছি। তবে তার নিহতের ঘটনায় কয়েকটি দিক নিয়ে তদন্ত করছি। খুব দ্রুত আমরা নিহতের কারণ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করতে পারবো। নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, মিল্কির হাত ধরেই তারেক রাজনীতিতে আসে। নিহত মিল্কির সাথে তারেকের প্রায় দেড় যুগের সম্পর্ক। তারা সব সময় এক সাথেই থাকতেন। এক প্লেটে ভাত খেতেন। প্রায় সাড়ে ৩ বছর আগে একটি ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে দু’জনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব পরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়ায়। এরপর থেকে তাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। সম্প্রতি মিল্কির সাথে টেন্ডার নিয়ে তারেকের ঝামেলা হয়। পূর্বশত্রুতা আর টেন্ডার নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মিল্কিকে খুন করা হয় বলে তাদের ধারণা। মিল্কি নিহত হওয়ার বিষয়ে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, রাত ১০টা পর্যন্ত মতিঝিল এলাকায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে মিল্কি বাসায় ফিরেন। তাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গাড়ির চালক চলে যায়। এরপর খাওয়া সেরে মিল্কি বাসায়ই অবস্থান করছিল। হঠাৎ করে একটা ফোন আসলে তিনি বাইরে বের হন। এসময় পূর্ব পরিচিত সাগর তার নিজস্ব গাড়িতে করে মিল্কিকে বাসা থেকে নিয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও মিল্কি বাসায় না ফিরলে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। পরে সাগরের মাধ্যমে জানতে পারে মিল্কি নিহত হয়েছেন। এদিকে হত্যাকাণ্ডের এক ঘন্টার মধ্যে মুল ঘাতকসহ যুবলীগ নেতা তারেকসহ ৬ জনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনার পরপরই র্যারেব একাধিক টিম খুনিদের ধরতে অভিযান চালায়। উত্তরার একটি হাসপাতাল থেকে যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচএম জাহিদ সিদ্দিকী তারেক (৩৫) কে আটক করে র্যাব। ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে আরও পাঁচজনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন- তুহিনুর রহমান (২৫), মোস্তফা আলী রুমি (৩৩), রাসেল মাহমুদ (২৫), সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান (২২) ও মুহম্মদ সুজন হাওলাদার (২২)। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মিল্কিকে রাত দেড়টার দিকে সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত্যু ঘোষণা করেন। পরে রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলাবার সকালে মিল্কির মৃতদেহ মোহাম্মদপুরের ৬/৬ সৈয়দ রোডের নিজ বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি। গ্রেফতারকৃতদের র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আসামিদের তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। তবে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে ১৫টি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক একেএম রাশেদুল হক বলেন, মিল্কির মাথা ও পেটসহ ৯টি গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। এর মধ্যে শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৪টি গুলি বের করা হয়েছে। বাকি গুলিগুলো ভেদ হয়ে বেরিয়ে গেছে। এদিকে নিহতের খবর শুনে আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি দলীয় নেতারা মিল্কির মোহাম্মদপুরের বাসায় ছুটে আসেন। তারা নিহতের মা ও স্ত্রীকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করেন। দুপুরের দিকে দেখা যায়, নিহতের স্ত্রী ফারজানা কানন শিপু বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। ৫ বছরের ছেলে রাশেদুল মায়ের কান্না দেখে এক আত্মীয়ের কোলে বসে কাঁদছে। মিল্কির ২ বছর বয়সী অবুঝ শিশুটি মায়ের পাশেই শুয়ে শুয়ে খেলছে। এদিকে মিল্কির লাশ গোসল দিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে রাখা হয়েছে। আজ সকালে জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।
|