Main Menu

ভালো নেই এক-এগারোর কুশীলবরা

+100%-

ডেস্ক ২৪: ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা। এদের কয়েকজন আছেন যুক্তরাষ্ট্রে, কেউ অস্ট্রেলিয়ায় আর কেউবা দুবাইতে। কেউ ভীষণ অসুস্থ কেউবা অর্থ সঙ্কটের কারণে সাধারণ কাজ করছেন। এই মুহূর্তে কেউই দেশে ফেরার চিন্তাও করছেন না। সর্বশেষ ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট পুনরায় ক্ষমতায় এলে তাদের আইনের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয় কি না এই নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। অথচ দাপুটে এসব কর্তার ভয়ে এক সময় ‘বাঘে-মহিষে’ এক ঘাটে পানি খাওয়ার মতো অবস্থা ছিল রাজনীতিকদের।

ওয়ান-ইলেভেনের প্রধান রূপকার সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ জটিল রোগে আক্রান্ত। সেনাপ্রধানের পদ থেকে অবসরের পর ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর তিনি স্ত্রী নাজনীন মইনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ওঠেন ফ্লোরিডায় ছেলের বাসায়। সেখানে হঠাত্ অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিত্সার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয় নিউইয়র্কে। ওঠেন মামিশাশুড়ির বাসায়। শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়লে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি। প্রতিমাসেই তাকে কেমো দিতে হয়। আমৃত্যু তাকে এই কেমো দিতে হবে প্রতিমাসে। ফলে নিউইয়র্ক ছেড়ে ছেলের কাছে যাওয়ার সুযোগও তিনি পাচ্ছেন না। জেনারেল মইনের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, জানালাবিহীন ছোট একটি কক্ষেই কাটছে তার সময়। শরীর ভালো থাকলে দিনে একবার বের হয়ে একটু হাঁটহাঁটি করেন। তাও সব দিন হাঁটতে পারেন না। অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিত্সার কারণে চরম অর্থকষ্টে দিন কাটছে তার। ঢাকা থেকে পাঠানো প্রতিমাসের বাড়ি ভাড়া আর ভাইদের দেয়া সহযোগিতায় চলছে তার দিন। জটিল অসুখের কারণে জীবিত অবস্থায় তিনি কখনও দেশে ফিরতে পারবেন কি না এই নিয়ে উদ্বিগ্ন তার স্বজনরা।

সম্প্রতি তিনি বাসার সামনেই কুকুরের আক্রমণের শিকার হন। তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, মইন হাঁটতে বাসা থেকে বের হন। এ সময় পাশের বাড়ির একটি কুকুর অতর্কিতে তার ওপর হামলে পড়ে। ভয়ে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এ সময় তার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। অবশ্য প্রাথমিক চিকিত্সার পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে ভয় কাটছে না তার। অসুস্থতার কারণে আপাতত তার দেশে ফেরার কোনো সম্ভাবনাও নেই।

ওয়ান-ইলেভেনপরবর্তী সেনাসমর্থিত সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদও সপরিবারে বাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিন পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি গেস্ট লেকচারার। একমাত্র ছেলে থাকে নিউইয়র্কে। মাঝে মধ্যে আসেন ছেলের বাসায় বেড়াতে। তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, সম্প্রতি তারও দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই। ১/১১ পরবর্তী সরকারের সময়কাল নিয়ে একটি বই লিখছেন তিনি। কবে এই বই লেখা শেষ হবে তা নিশ্চিত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট সূত্রটি।

মহাজোট সরকারের সময়ে সবচেয়ে ভালো আছেন ওয়ান-ইলেভেন সৃষ্টিকালে নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও পরবর্তীতে দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্সের প্রধান লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার পারিবারিক আত্মীয় জেনারেল মাসুদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ সময়ে সেনাবাহিনী থেকে ডেপুটেশনে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান। আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে সুসম্পর্কের সুবাধে মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পরও পরপর দুই দফা একই পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বহালতবিয়তে আছেন। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত তার চুক্তির মেয়াদ রয়েছে। গত মাসে তার ভায়রা সাঈদ এস্কান্দরের ছেলের বিয়েতে আসার কথা ছিল। ভাইপোর বিয়ের অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াও থাকবেন এটা নিশ্চিত হয়েই তিনি আসেননি। কেউ কেউ বলছেন, খালেদা জিয়ার সামনে পড়ে বিব্রত হতে চাননি বলেই তার না আসা। সূত্রমতে, জেনারেল মাসুদ অতীব অতিথিপরায়ন। যে কোনো ভিআইপি অস্ট্রেলিয়া সফরে গেলে তার বাসায় আতিথেয়তা গ্রহণ করতেই হয়।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন ওয়ান-ইলেভেনকালীন একটি গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুল বারী। সেনা সমর্থিত সরকারের শেষ সময়ে সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটায় তাকে সেখান থেকে সরিয়ে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে মিলিটারি অ্যাটাশে হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তার নিয়োগ বাতিল করে সেনাবাহিনীতে কলব্যাক করা হয়। কিন্তু তিনি দেশে না ফিরে সপরিবারে ওয়াশিংটন থেকে নিউইয়র্ক এসে বসবাস শুরু করেন। সেখানে প্রথমে তিনি ডমিনো পিজা এবং পরবর্তীতে এস্টোরিয়ায় একটি গ্রোসারি শপে কাজ করেন। চাকরিতে না ফেরায় সেনবাহিনী তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে এবং যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা বাতিল করে। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্ক অবস্থান করছেন।

ওয়ান ইলেভেনের নেপথ্যে থাকা আরেক ক্ষমতাধর গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল এটিএম আমিন রয়েছেন দুবাইয়ে। কাউন্টার টেরোরিজম বিশেষজ্ঞ এই সেনা কর্মকর্তা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ে অত্যন্ত সুসম্পর্ক রাখা এই কর্মকর্তা চার্জশিট হওয়ার আগেই সপরিবারে দেশ ছাড়েন। গ্রেফতারের ভয়ে তার এই বিদেশ পাড়ি জমানো। বর্তমান সরকারের আমলে তার আর দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই।

এদিকে ঢাকায় ডিওএইচএস’র বাসা বিক্রি করে সপরিবারে আমেরিকা পাড়ি জমিয়েছেন আলোচিত সাবেক সেনা প্রধান ও দুদক চেয়ারম্যান লে. জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরী। রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে তিনি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান করে। এ সময় দুদকের মামলায় একের পর এক রাজনৈতিক নেতারা গ্রেফতার ও শাস্তি দেয়া শুরু হলে ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি দুদক থেকে পদত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন নিঃসঙ্গ বাসের পর গত বছর তিনি বাসাবাড়ি বিক্রি করে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।






Shares