Main Menu

অর্থ কেলেঙ্কারি: রেলওয়ে কর্মকর্তা মৃধা ও এনামুল বরখাস্ত, চাকরি হারালেন ফারুক

+100%-
চাঞ্চল্যকর অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধা ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট এনামুল হককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে রেলমন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। রাজধানী ঢাকার রেলভবনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে আজ এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত স্বীকার করেন, “ইউসুফ আলী মৃধা, এনামুল হক ও ওমর ফারুক তালুকদারের বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।” তিনি জানান, “সব অভিযোগ তদন্ত করা হবে। ওমর ফারুকের যত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, সেগুলো ক্লোজ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো হবে। অভিযোগের সমস্ত কাগজপত্র দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দেয়া হবে।” এছাড়া, রেলের সব নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এর আগে সকালে অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্তে মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিতে লিখিত জবানবন্দি দেন রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধা। রেলের মহাপরিচালক ও তদন্ত কমিটির প্রধান আবু তাহেরের কক্ষে সকাল ১১টার দিকে এসে তিনি জবানবন্দি নেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইউসুফ আলী বলেন, ‘মন্ত্রীর বাসায় কারও মাধ্যমে যেতে হয়। তাই আমি মন্ত্রীর এপিএস ফারুকের সঙ্গে গিয়েছিলাম।’
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন ইউসুফ আলী। এক পর্যায়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই তিনি স্থান ত্যাগ করেন। সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, কিভাবে ওই গাড়িতে গিয়েছিলেন। জবাবে ইউসুফ বলেন, ‘ফারুক আমাকে কোনো বাসা থেকে উঠিয়ে নেয়নি। রাস্তা থেকে উঠিয়ে নিয়েছে।’ তবে কোন রাস্তা থেকে তাকে উঠিয়ে নিয়েছে, সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি।
সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চায়, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট এনামুল হক কেন তার সঙ্গে গিয়েছিলেন? উত্তরে ইউসুফ আলী জানান, ‘জিএম হিসেবে আমার নিরাপত্তা দিতে সে (এনামুল) আমার সঙ্গে গিয়েছিল।’ জিএমকে নিরাপত্তা দেয়াটা এনামুলের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি। টাকার নিরাপত্তার জন্যেই সতর্কতা ছিল কি না বা এ ধরনের কিছু প্রশ্ন করলে ইউসুফ আলী কিছুটা বিরক্ত হয়ে জানান, ‘আমি লিখিত দিয়েছি।’
বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক কিভাবে হলেন, সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ইউসুফ বলেন, ‘আমার বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ নেই। থাকলে আপনারা প্রমাণ করেন।’ গাড়িতে টাকা কার ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘টাকার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। ফারুক তো নিজেই স্বীকার করেছে, এটা তার টাকা।’ তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, ওই রাতে মন্ত্রীর সঙ্গে তার কোনো কথা হয়নি।
এদিকে রেলের মহাপরিচালক ও তদন্ত কমিটির প্রধান আবু তাহের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আমরা ইউসুফ আলীর লিখিত জবানবন্দি পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে এ নিয়ে কিছু বলা যাবে না। ১৫ দিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।’ তবে এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের বিষয়ে তদন্তের জন্য মন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) আখতারুজ্জামানকে দায়িত্ব দেয়া হলেও দুপুর পর্যন্ত তিনি তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হননি। সকাল ১১টার মধ্যে তার হাজির হওয়া কথা ছিল।
গত সোমবার গভীর রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানার মূল ফটকে বিপুল অঙ্কের টাকাসহ রেলমন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক, রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) ইউসুফ আলী মৃধা ও রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট (ঢাকা) এনামুল হক আটক হন। এ সময় তারা দাবি করেন, তাঁরা রেলমন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে তাঁদের অপহরণ করার লক্ষ্যে গাড়ির চালক আলী আজম গাড়িটি বিজিবির ফটকের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। এরপর বিজিবির সদস্যরা টাকাসহ সবাইকে আটক করেন। এ টাকার অংক ৭০ লাখ বলে উল্লেখ করা হলেও বাংলাদেশের কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যমে টাকার অংক চার কোটি ৭০ লাখ বলে দাবি করা হয়েছে।
এই নজীরবিহীন ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ নানা মহল সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ দাবি করে আসছে। তবে প্রথম থেকেই মন্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে পদত্যাগের দাবি নাকচ করে আসছেন। #






Shares