Main Menu

ফিরে দেখা ইতিহাস ( ১৯৭৫-১৯৮১: জেঃ জিয়ার রাজনীতিতে আগমন এবং মেজর জেঃ মঞ্জুর) :- (দ্বিতীয় পর্ব)!!

+100%-

snatcher-1446440287-aba4939_xlarge
ওয়েব থেকে নেয়া::২১শে এপ্রিল, ১৯৭৭
ঢাকা, বাংলাদেশ
আজ প্রেসিডেন্ট ও সাবেক বিচারপতি সায়েম অসুস্থ্যতার কারনে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাড়ালে জেঃ জিয়া বাংলাদেশের সপ্তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বায়িত্বভার গ্রহন করলেন। এর আগে ১৯শে নভেম্বর ১৯৭৬ সালে জেঃ জিয়াউর রহমান আবার চীফ মার্শাল ল’ এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে দ্বায়িত্ব গ্রহন করেন বিচারপতি সায়েমের পরিবর্তে। উনি এখন একইসাথে প্রেসিডেন্ট, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক।

তবে এর আগে ১৯৭৫ সালের ১১ই নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া উনার প্রথম ভাষনে জেঃ জিয়া বলেছিলেন,

– “আমি একজন সৈনিক, রাজনীতিবিদ নই।“

প্রেসিডেন্টের পদ গ্রহন করবার পরে উনি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেন তার শাসনকে বৈধতা প্রদানের জন্য। এরমধ্যে ছিলো প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্ডাম (গনভোট) ও প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকশনের ব্যবস্থা করা এবং একটি রাজনৈতিক দল গঠন ও সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। সারাবিশ্ব জুড়েই সামরিক শাসকদের একটা ধারা দেখা যায়। তা হচ্ছে এটা বলা যে, আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি হলে বেসামরিক প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে গনতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে, কিন্তু ক্ষমতা গ্রহনের পর বেশিরভাগই বেসামরিক প্রশাসনের উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং আইনগত বৈধতা প্রদানের প্রক্রিয়ার প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে ক্ষমতা আরো দৃঢ় করতে চায়। জেঃ জিয়ার সরকারও এই প্রক্রিয়ার তেমন বাইরে যায়নি।

২২শে এপ্রিল, ১৯৭৭
ঢাকা, বাংলাদেশ
জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বেতার এবং টেলিভিশনে প্রচারকৃত বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ঘোষনা করলেন যে ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটের ভিত্তিতে সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদের সদস্যদের নির্বাচিত করবার লক্ষ্যে। উনি তার বক্তব্যে আরো বললেন,

– “আমি এবং আমার সরকার পূর্নরুপে গনতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং জনগনের মতামতের ভিত্তিতে যথাসময়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

প্রেসিডেন্ট জেঃ জিয়াউর রহমান আরো বললেন যে, সময়ের প্রয়োজনে উনি প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকবেন এবং এ ব্যাপারে জনগনের সমর্থন লাভে গনভোটের আয়োজন করবেন। এই সময়ে উনি তার নির্বাচনী মেনিফেস্টো ঘোষনা করলেন। ১৯ দফার এই মেনিফেস্টোতে উনি প্রাইভেট সেক্টরের বিকাশ, খাদ্য স্বয়ংসম্পুর্নতা অর্জন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন এবং কৃষিখাতের উন্নতি সহ জাতীয় উন্নয়নের পরিকল্পনার কথা জানালেন।

৩০শে মে, ১৯৭৭
ঢাকা, বাংলাদেশ
আজ প্রেসিডেন্ট পদের জন্য আস্থাভোটে ৯৮.৮৯% ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্টের পদের জন্য নিজের বৈধতা আদায় করে নিলেন জেঃ জিয়া। সরকারী হিসেবে এই গনভোটে ৮৫% ভোট পরলো। এই ফলাফল জেঃ জিয়ার আত্মবিশ্বাস অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। যদিও সমালোচকেরা এতো অল্প সংখ্যক ‘না’ ভোটের ব্যাপারে প্রশ্ন তুললেন। তবে এই ভোটটা ছিলো তৃতীয় বিশ্বের স্বৈরশাসকদের প্রায় শতভাগ ভোট লাভের হিসাব দেখিয়ে বিশ্বের কাছে তাদের জনপ্রিয়তা প্রমানের চেস্টার মতই। আর সেটাই এই গনভোটের ব্যাপারেও অনেকাংশে সত্যি ছিলো। রাজনৈতিক শুন্যতার কারনে জেঃ জিয়া হয়তো সত্যি জিতে যেতেন ভোটে, কিন্তু পৃথিবীর কোন দেশেই কোন নেতা এমন বিপুল সমর্থন পেলে সেটাকে নির্ভেজাল মিথ্যা বলে ধরে নেয়া যায়। তবে এই গনভোট জেঃ জিয়ার প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহনকে আপাত বৈধতা দিলো।

এপ্রিল মাস, ১৯৭৮
ঢাকা, বাংলাদেশ
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ঘোষনা করলেন যে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচন হবে আগামী দুইমাসের মধ্যে। রাজনৈতিক দলসমুহের উপর থেকে সকল নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলো মে মাসে। বগুড়া এবং ঢাকার ক্যু তাকে একটা বড় ধাক্কা দিয়েছিলো এবং উনি বুঝতে পারছিলেন কেবল সামরিক শক্তির মাধ্যমে উনি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে উনার জনগনের সমর্থনেরও দরকার ছিলো। এর আগে তিনি নির্বাচন এবং গনতন্ত্রের ব্যাপারে জনতাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং তৃতীয় বিশ্ব্বের একজন বিশ্বাসী ও জনপ্রিয় নেতা হিসেবে বিশ্বের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে এই নির্বাচনের প্রয়োজন অনুভব করলেন তিনি। এর আগে ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে প্রধান করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠা করেন। উনি এক বক্তব্যে এ সময় বলেন,

– “আমি রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের জন্য কঠিন করে তুলবো।“

উনি সত্যি তা কঠিন করে তুলছিলেন ধীরে ধীরে, কিন্তু নিশ্চিত পদক্ষেপে!

নির্বাচনের কিছুদিন আগে নানা রাজনৈতিক দল প্রধান দুইটি জোটে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করলো। এদের একটি ছিলো জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট কিংবা জোট এবং আরেকটি গনতান্ত্রিক ঐক্য জোট বা ডেমোক্রেটীক ইউনাইটেড ফ্রন্ট। জাতীয়তাবাদী জোট জিয়াউর রহমানকে এবং গনতান্ত্রিক ঐক্য জোট জেঃ ওসমানীকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দিলো। জেঃ জিয়ার জাগদল জাতীয়তাবাদী জোটের প্রধান শরীক ছিলো।

৩রা জুন, ১৯৭৮
ঢাকা, বাংলাদেশ
চূড়ান্ত নির্বাচনের ফলাফলে জেঃ জিয়া বিপুল ভোটে বিজয়ী হলেন। জেঃ জিয়া ৫৪% ভোটার উপস্থিতির এ নির্বাচনে ৭৬% ভোট পান এবং জেঃ ওসমানী পেলেন ২১% ভোট। জেঃ ওসমানীও স্বীকার করে নিলেন যে ভোটগ্রহন মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও এ নির্বাচনকে গ্রহনযোগ্য বলে মত দিলেন। তবে নির্বাচনে অংশ নেয়া জেঃ ওসমানী সহ বাকী ৯ প্রার্থী সময়ের স্বল্পতার ব্যাপারে অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং তাদের ক্ষোভের কথা জানান। তারা এর বাইরে সরকারের শক্তিকে জেঃ জিয়ার নির্বাচনী প্রচারনার কাজে ব্যবহারের ব্যাপারে অভিযোগ জানালেন। নির্বাচনের মাত্র ২০ দিন আগে থেকে নির্বাচনী প্রচারনা চালাবার সুযোগ দেয়া হয় অন্যদের, যেখানে জেঃ জিয়া আগে থেকেই দেশের নানা স্থানে প্রচারনা চালাচ্ছিলেন।

হিসেবনিকেশ যাই হোকনা কেন, এভাবেই জেঃ জিয়াউর রহমান ৫ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে গেলেন, পেয়ে গেলেন দেশ শাসনের বৈধতা। এই নির্বাচনের মেয়াদ পাঁচ বছরের হলেও জেঃ জিয়াউর রহমান এর মাধ্যমে সৈনিক থেকে রাজনীতিবিদে রুপান্তরিত হলেন আজীবনের জন্য।

যদিও জেঃ জিয়া প্রেসিডেন্ট হিসেবেও নির্বাচিত হলেন, তার নিজের কোন রাজনৈতিক দল ছিলনা। উনি ধীরে ধীরে নিজের একটি নিজস্ব রাজনৈতিক পরিচয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। তবে উনি কোন রাজনৈতিক জোট যোগ দেবেন নাকি নিজের দল গঠন করবেন এ ব্যাপারে দ্বিধান্বিত ছিলেন। প্রথমদিকে সকল দলের সমর্থন লাভের প্রত্যাশায় তিনি নিজেকে কোন বিশেষ দলের সাথে নিজেকে না জড়াবার কৌশল গ্রহন করেন।

১লা সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮
ঢাকা, বাংলাদেশ
১৯৭৯ সালের শুরুতেই জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা। এর আগেই আজ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তার নতুন দল গঠনের ঘোষনা দিলেন। এর নাম হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি, সংক্ষেপে বিএনপি। নতুন এই দলের সকলের প্রতি উন্মুক্ত আদর্শ বেশকিছু দলকে আকর্ষন করলো। এদের মধ্যে ছিলো জাতীয়তাবাদী গনতান্ত্রিক দল (জাগদল, যা ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে জেঃ জিয়ার সক্রিয় অংশগ্রহনে গঠিত হয়েছিলো), ন্যাপ (ভাসানী), ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি) এবং মুসলীগ লীগ। এই দলগুলো সবই এই নতুন দলে যোগ দিলো।

বিএনপির মেনিফেস্টোতে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার কথা বলা হয়। তারা ১৭টি লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করেন যার মধ্যে জনতার গনতন্ত্র, ব্যক্তিগত খাতের উন্নতি, উৎপাদনমুখী রাজনীতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার এবং বহুদলীয় গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছিলো অন্যতম। একটি রাজনৈতিক দল প্রেসিডেন্ট জিয়ার টিকে থাকবার জন্য অনেক দরকারী ছিলো এবং খুব সম্ভবত উনি দেশের রাজনীতির এই খেলাও উপভোগ করা শুরু করেন ও শেষপর্যন্ত বেসামরিক নেতা হিসেবেই পরিচিতি লাভ করতে চাইছিলেন।

১লা ডিসেম্বর, ১৯৭৮
ঢাকা, বাংলাদেশ
প্রেসিডেন্ট জেঃ জিয়াউর রহমান আজ সেনাপ্রধানের পদ ছেড়ে দিলেন। এই পদে নিয়োগ দেয়া হলো সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান এবং ডেপুটি চীফ মার্শাল ল’ এডমিনিস্ট্রেটর মেজর জেঃ হুসাইন মোঃ এরশাদকে। তাকে লেঃ জেনারেল পদে পদোন্নতি দেয়া হলো। তবে এ ব্যাপারে সবচেয়ে অসন্তুষ্ট হলেন সিজিএস (চীফ অফ জেনারেল স্টাফস) মেজর জেঃ মঞ্জুর। যদিও জেঃ এরশাদ বয়স এবং চাকুরীর জেষ্ঠ্যতার (আট বছরের সিনিয়র) দিক দিয়ে জেঃ মঞ্জুরের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন। তবে তিনি মনে মনে সেনাবাহিনী প্রধান হবার যে ইচ্ছাপোষন করতেন তা না হবার ফলে খুবই অসন্তুষ্ট হলেন।

জেঃ জিয়ার সরকারে ভালো সময় পার করা অল্প কয়জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারের একজন ছিলেন জেঃ মঞ্জুর। ১৯৭১ সালে উনি পাকিস্তানের শিয়ালকোটে একটি সেনা ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর ছিলেন। তবে উনি গোপনে পালিয়ে রাজস্থান সীমান্তবর্তী মরুভুমি পার হয়ে ভারতে পৌঁছান। এরপর জুলাই মাসে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। এর মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করা অল্প কিছু অফিসারের একজন হয়ে যান তিনি। ১৯৭১ সালের ১৪ই আগস্ট উনি মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর পরিবর্তে ৮ নং সেক্টরের (কুষ্টিয়া-যশোর) সেক্টর কমান্ডার হন। উনি ছিলেন একজন নির্ভীক, দৃঢ়চেতা এবং দুরদৃষ্টীসম্পন্ন অফিসাআর। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান অনস্বীকার্য্য। উনি ছিলেন এমন একজন জেনারেল সাধারন সেনাদের মাঝে যার জনপ্রিয়তা ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের পর কোন কারনে বঙ্গবন্ধুর সাথে উনার দুরত্বের সৃষ্টি হয় আর সেকারনে আকে সরিয়ে দিতে বঙ্গবন্ধু উনাকে নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে মিলিটারী এটাশ্যে হিসেবে পাঠিয়ে দেন ১৯৭৩ সালে। ১৯৭৫ সালের শেষদিকে জেঃ জিয়ার উত্থানের পর তাকে দেশে ফেরত আনা হয় এবং সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ন সিজিএস এর দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। এ সময় উনি জেঃ জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহচর হয়ে উঠেন এবং দ্রুতই মেজর জেঃ পদে পদোন্নতি লাভ করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সর্কনিষ্ঠ জেনারেল হিসেবে। জেঃ মঞ্জুর প্রেসিডেন্ট জিয়ার জীবন রক্ষার বিনিময়ে এর প্রতিদানও দিয়েছিলেন। তবে এর মাঝে উদয় ঘটে বাংলাদেশের ইতিহাসের আরেক কালো নক্ষত্র জেঃ হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের।

জেঃ এরশাদ ১৯৫২ সালে কমিশন লাভ করেন এবং জেঃ মঞ্জুর ১৯৬০ সালে কমিশন লাভ করেন। জেঃ মঞ্জুর ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ জেনারেল। তবে তিনি জেঃ এরশাদকে অদুরদর্শী প্রথাগত অফিসার হিসেবে মনে করতেন যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি এবং যুদ্ধে যোগদানের কোন চেস্টাও করেননি। জেঃ এরশাদ সম্পর্কে জেঃ মঞ্জুরের এ ধারনার কথা এবং প্রেসিডেন্ট জিয়ার সম্পর্কে এ নিয়ে করা তার সমালোচনা এবং মনোভাব সম্পর্কে সবাই অবগত ছিলো।

কর্নেল তাহেরের মত জেঃ মঞ্জুরও অনেকটা চীনপন্থী ছিলেন এবং তার ভারত বিরোধী মনোভাবের জন্য পরিচিত ছিলেন। জেঃ মঞ্জুর ছিলেন স্বাধীনচেতা, কিছুটা উগ্র, উচ্চাভিলাষী এবং বিপ্লবী চেতনার। প্রেসিডেন্ট জিয়া এ সময় প্রত্যাগত অফিসারদের দিকেই বেশি ঝুকে পরছিলেন এবং মনে করেছিলেন জেঃ এরশাদ বেশি অনুগত হবেন তার প্রতি, কারন তিনি ছিলেন প্রথাগত নিয়মানুবর্তী অফিসার যার প্রতি পাকিস্তান প্রত্যাগত অফিসারদেরও সমর্থন রয়েছে যারা সে মুহুর্তে সেনাবাহিনীর অফিসারদের অর্ধেকেরও বেশি ছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট জিয়া জেঃ এরশাদকে সেনাপ্রধান করবার সাথে সাথে প্রেসিডেন্ট জিয়ার একান্ত অনুগত জেঃ মঞ্জুরের মোনোভাব পাল্টে গেলো যিনি ১৯৭৭ এর অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট জিয়ার জীবন রক্ষা করেছিলেন।

প্রেসিডেন্ট জিয়ার জেঃ এরশাদকে সেনাপ্রধান করবার সিদ্ধান্ত তার সেনাবাহিনীতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনবার প্রচেস্টায় প্রত্যাগত অফিসার এবং নতুন সৈনিকদের প্রতি অতিরিক্তমাত্রায় নির্ভরশীলতারই একটা ফল ছিলো। নিয়ম অনুসারে অবশ্য জেঃ এরশাদেরই সেনাপ্রধান হবার কথা যদিনা প্রেসিডেন্ট জিয়াও মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের আগের মত বিশেষ সুবিধা দিতেন কিংবা এর আগে জেঃ মঞ্জুরের দ্বারা তার জীবন রক্ষার প্রতিদান দেবার চিন্তা থাকতো। সাধারন নিয়মাবলীর বিবেচনায় আমার মতে জেঃ এরশাদকে সেনাপ্রধান করবার সিদ্ধান্ত ছিলো সম্পূর্ন সঠিক।

আর এভাবেই প্রেসিডেন্ট জিয়ার একসময়ের ডানহাত জেঃ মঞ্জুর হয়ে উঠলেন তার প্রধান শত্রু। ক্ষমতা আর উচ্চাভিলাষের নেশা কোন নীতি মানেনা। এখানে চিরকালীন বন্ধু বলে কেউ নেই।

প্রেসিডেন্ট নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের আগেই তার সম্ভাব্য বিরোধী সিনিয়র অফিসারদের মনোভাব বুঝতে পেরে তাদের শক্তি খর্ব করে দিতে দেশের নানা স্থানে বদলী করে দেন। জেঃ মঞ্জুরকে চট্টগ্রামের ২৪তম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি করে চট্টোগ্রাম পাঠিয়ে দেয়া হলো। এর বাইরে আরেক মুক্তিযোদ্ধা অফিসার মেজর জে মীর শওকত আলীকে যশোর এবং ব্রিগেডিয়ার নুরুদ্দীন খানকে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দিলেন। আরো জুনিয়র বিরোধী মনোভাবের অফিসারদের উত্তরবঙ্গের নানা ইউনিটে বদলী করা হয় যেখান থেকে ঢাকায় আসা অনেকটা দুরুহ ছিলো সেনা নিয়ে। আর মেজর জেঃ এইচ এম এরশাদকে ঢাকায় রাখা হলো নিজ নিরাপত্তার স্বার্থেই, উনি যে ভীষন বিশ্বস্ত।

জেঃ জিয়ার আমল পদোন্নতির ব্যাপারে জেষ্ঠতা কঠোরভাবে অনুসরন করা হয়। আর এ কারনে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারেরা এমনিতেই পিছিয়ে পরতে থাকেন। এর বাইরেও প্রত্যাগতদেরই পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয় বেশি যেটা একটা সরল পরিসংখ্যানেই বোঝা যায়। ১৯৮১ সালে যখন জেঃ জিয়াকে হত্যা করা হয়, তখন সেনাবাহিনীতে মেজর জেনারেল এবং ব্রিগেডিয়ার পদের মোট ৫০ জন অফিসার ছিলেন। এদের মধ্যে ৪৮ জনই ছিলেন পাকিস্তান ফেরত। এদের মধ্যে একজন ছিলেন মেজর জেনারেল মীর শওকত আলী এবং আরেকজন ছিলেন মেজর জেনারেল মঞ্জুর। জেঃ জিয়ার এ পদক্ষেপ তার প্রতি মুক্তিযোদ্ধা অফিসার এবং সেনাদের ক্ষোভের কারন হয়ে দাঁড়ায় পরবর্তীতে।

১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত প্রায় ২০টির বেশি প্রচেস্টা চালানো হয় জেঃ জিয়ার সরকারকে উৎখাতে। এরমধ্যে ১০টিকে অভ্যুত্থান প্রচেস্টা বলা যায়। এগুলোর বেশিরভাগই সংঘটিত হয় কর্নেল তাহেরকে হত্যার ক্ষোভ থেকে। জেঃ মঞ্জুরের সর্বশেষ প্রচেস্টা ছাড়া আর একটিও সফল হয়নি এবং নির্মমতার সাথে দমন করা হয়।

ফেব্রুয়ারী মাস, ১৯৭৯
ঢাকা, বাংলাদেশ
১৯৭৭ সালের নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ঘোষনা করেছিলেন যে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটের ভিত্তিতে দুইমাস পর সংসদ সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই মাসে সে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো যাতে ৩১ টি দল অংশগ্রহন করলো। নতুন গঠিত দল বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২০৬টি আসনে জয়লাভ করলো। এই নির্বাচনকেও আন্তর্জাতিক সংস্থ্যাগুলো এবং রাজনৈতিক দলসমুহ নিরপেক্ষই হয়েছে বলে জানায়। সৈনিক থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া প্রেসিডেন্ট জিয়ার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এই নির্বাচন বড় ভুমিকা রাখলো।

জেঃ জিয়ার সরকার প্রথমদিকে ১০ সদস্যের একটি উপদেষ্টা পরিষদের সাহায্যে পরিচালিত হতো। তিন বাহিনীর প্রধানেরা ছাড়া এ পরিষদে ছিলেন ৭ জন বেসামরিক ব্যক্তি। এরপর এই উপদেষ্টাদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে ২৪ জনে পৌছায়। যদিও পার্লামেন্ট ছিলো নির্বাচিত, তারপরেও সংসদ স্বাধীন ছিলো তা বলা যাবেনা। প্রেসিডেন্টের ব্যাপক প্রভাব ছিলো সংসদে নেয়া যে কোন সিদ্ধান্তের উপর এবং রাষ্ট্রের সকল বিষয়ে। সংসদ ছিলো প্রকৃতপক্ষে প্রেসিডেন্টের অধীনেই। সংসদ সদস্যরা প্রেসিডেনের বেঁধে দেয়া শর্তাবলীর অধীনেই নির্বাচিত ছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট যেকোনো সদস্যের সদস্যপদ ইচ্ছামোতাবেক বাতিল করতে পারতেন। ফেব্রুয়ারীর এই নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নতুন মন্ত্রীসভা গঠন করেন এবং মন্ত্রীরা তার পছন্দ অনুসারেই দ্বায়িত নিলেন। এর আগে ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রেসিডেন্সিয়াল ডিক্রীর মাধ্যমে সংবিধানের সংশোধন করেন, যাতে উল্লেখ ছিলো,

১। প্রেসিডেন্ট মন্ত্রীসভার এক পঞ্চমাংশ নিজ ইচ্ছানুসারে নিয়োগ দিতে পারবেন তাদের মধ্য থেকে যারা পার্লামেন্টের সদস্য নন।
২। সংসদে পাসকৃত যেকোন বিলে অসম্মতি জানাতে পারবেন, যা কেবলমাত্র জাতীয় পর্যায়ে গনভোটের মাধ্যমে পাল্টানো যাবে।
৩। এবং প্রেসিডেন্ট সংসদকে না অবহিত করেও অন্য কোন বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে জাতীয় স্বার্থে চুক্তি করতে পারবেন।

জেঃ জিয়ার সাড়ে পাঁচ বছরের শাসনামলে সিভিল মিলিটারী বুর‍্যোক্রেসী মন্ত্রীসভায় এবং এর পুর্বসুরী উপদেষ্টা পরিষদে প্রাধান্য বিস্তার করে। ১৯৮১ সালের মন্ত্রীসভার ২৪ জন সদস্যের মধ্যে ৬ জন ছিলেন সামরিক বাহিনীর, ৫ জন বেসামরিক প্রশাসনের, ৬ জন টেকনোক্র্যাট, ৪ জন ব্যবসায়ী, একজন প্রভাবশালী ধনী ব্যক্তি এবং ২ জন আইনজীবি ছিলেন। মন্ত্রীপরিষদের বাইরে প্রেসিডেন্টের নিজস্ব সচিবালয় ছিলো যার তিনটি বিভাগ ছিলো যার প্রতিটিই বেসামরিক আমলাদের দিয়ে পরিচালিত হতো।

এর বাইরে প্রেসিডেন্ট জিয়া বেসামরীকিকরনের লক্ষ্যে সাবেক সিএসপি (সিভিল সার্ভিস অফ পাকিস্তান) অফিসারদের নানা জেলা এবং বিভাগে নিয়োগ দেন। ১৯ টি জেলার ১২টিতেই ডেপুটি কমিশনাররা ছিলেন সাবেক সিএসপি অফিসার। ৪ টি বিভাগের প্রতিটিতেই সিএসপি অফিসাররা ছিলেন ডিভিশনাল কমিশনার।

৯ এপ্রিল, ১৯৭৯
ঢাকা, বাংলাদেশ
প্রেসিডেন্ট জিয়ার বিএনপি ফেব্রুয়ারীর সাধারন নির্বাচনে বিজয়ী হবার দুই মাস পর প্রেসিডেন্ট জিয়া দেশ থেকে সামরিক আইন প্রত্যাহারের ঘোষনা দিয়েছেন আজ। তবে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৫ই আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত নানা সামরিক সরকারের গৃহিত পদক্ষেপগুলোকে বৈধতাও প্রদান করলেন যার মধ্যে ইনডেমনিটি এক্টও ছিলো। উনি এ সংবিধানকে ধর্মীয় আদলে বদলে দিলেন, যদিও সংবিধান অনুসারে রাস্ট্র ধর্মনিরপেক্ষই থাকলো। তার অধীনে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মুলনীতি হলো ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ।

এ সময় অবশ্য উনি দেশব্যাপী নানা ইতিবাচক কর্মকান্ডের সুচনাও করেন। যার মধ্যে একটি ছিলো গ্রাম সরকার পরিষদ। এর মাধ্যমে উনি দেশব্যাপী অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেবার পরিকল্পনা করেন। ১১ সদস্যের গ্রাম পরিষদ ১৯ দফা লক্ষের ভিত্তিতে কার্যক্রম শুরু করে। যার মধ্যে ছিলো পারিবারিক বিবাদের সমাধান, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে উৎসাহিত করা, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নেয়া, আইন শৃংখলা রক্ষায় অংশ নেয়া প্রভৃতি। ১৯৮০ সালের ডিসেম্বরের অধ্যে ৬৮০০ টি গ্রাম সরকার পরিষদ গঠিত হয়।

সামরিক আইন প্রত্যাহার করে নেবার পর প্রেসিডেন্ট জিয়া বেসামরীকিকরনের দিকে ঝুকে পরেন। এ সময় আমলারা তার সরকারে বেশ ভালো প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। যতই তিনি বেসামরিকীকরনের প্রতি ঝুকছিলেন, যতই সামরিক বাহিনীর সাথেও তার দুরত্ব তৈরি হচ্ছিলো যারা রাস্ট্রকে সামরিক বাহিনীর সরাসরি অধিকারের ক্ষেত্র হিসেবে মনে করতো। অতন্ত্য কঠোর, নির্দয়, ঠান্ডা মেজাজের হলেও ব্যক্তিগতভাবে সবাই স্বীকার করবে যে প্রেসিডেন্ট জিয়া নিজে ছিলেন একজন সৎ মানুষ। উনার এই নীতি দেশব্যাপী প্রশাসনের জন্য ইতিবাচক ছিলো। আর সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিলো যে প্রথমদিকে উনার কোন দলই ছিলনা, যার নেতাকর্মীরা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সুযোগ নিতে পারতো। আর সেটা নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারীতা প্রভৃতি কমাতে ভুমিকা রাখে। শেষদিকে এসে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায় এবং যতদুর জানা যায় উনি ব্যক্তিগতভাবে সে সম্পর্কে জানতে পারলে পদক্ষেপ নিতেন। এ ব্যাপারেও উনি ছিলেন কঠোর এবং নির্দয়।

বিদেশী রাস্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্ক ভালো হবার কারনে এবং দেশের সর্বস্তরে দুর্নীতি এবং লুটপাটের মাত্রা কমে আসবার কারনে এ সময় অর্থনীতি পায় নতুন গতি। দেশব্যাপী আইনশৃংখলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়। সামরিক বাহিনীর ভেতর একের পর এক অভ্যুত্থান প্রচেস্টা চললেও সেটা সাধারন জনগনের উপর কোন প্রভাব ফেলেনি। উনি এ সময় পুলিশ বাহিনীর আকার প্রায় দ্বিগুন করেন যা আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ভুমিকা রাখে। এর বাইরে সামরিক বাহিনীতে নতুন রিক্রুটদের কারনে সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরে রাজনৈতিক প্রভাব কমতে থাকে। তার শাসনামলের শেষের দিকে বেসামরিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবার কারনে সামরিক বাহিনীর সাথে কিছুটা দুরত্ব তৈরি হয়, তবে কিছুটা আশাভঙ্গের কারন হলেও মৃত্যুর আগেও উনি ছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয় একজন প্রেসিডেন্ট।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পুর্বসুরীদের তুলনায় অনেক সাধারন জীবনযাপন করতে শুরু করেন রাজনীতিবিদে বদলে যাবার পর। উনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে একটী ভাড়া বাসায় থাকতেন যেখানে তিনি ১৯৭২ সালে থেকে বসবাস করে আসছিলেন। উনার প্রেসিডেন্ট হবার পরেও বঙ্গভবনে না থাকবার একটা প্রধান কারন ছিলো নিরাপত্তা। তার অনুগত ইউনিটসমুহের কাছে থেকে নিরাপদ অবস্থানে থাকাটাই তিনি সম্ভবত বেশি ভালো হবে বলে মনে করেছিলেন। তবে তিনি সামরিক ইউনিফর্ম বাদ দিয়ে বেসামরিক পোষাক পরিধান করা শুরু করেন। উনি তার আসেপাশের মানুষকে জেঃ জিয়া হিসেবে না ডেকে প্রেসিডেন্ট জিয়া হিসেবে ডাকতে বললেন। সময়ের সাথে সাথে তার আসেপাশের নিরাপত্তাও শিথিল করে দিলেন যা সেপ্টেম্বর/অক্টোবর ১৯৭৭ সালের দুইটি বড় ক্যু এর পরে তার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছিলো। এমনও হয়েছে যে একটী হেলিকপারে দুই তিনজন দেহরক্ষী নিয়ে উনি প্রত্যন্ত গ্রামে চলে গেছেন। আর এই অতিরিক্ত শিথিলতাই শেষ পর্যন্ত আরেকটি অভ্যুত্থানের সময় তার মৃত্যুর প্রধান কারন হয়ে দাঁড়াবে।

তথ্যসুত্রঃ
উইকিপিডিয়া
বাংলাপিডিয়া
ডেইলীস্টার অনলাইন
মার্ডার ইন ঢাকা – জিয়াউর রহমান্স সেকেন্ড রাউন্ড
স্টেট ইন বাংলাদেশ আন্ডার জিয়া (১৯৭৫-১৯৮১)- সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম
বিডিনিউজ২৪ ডট কম
বাংলাদেশ আফটার জিয়া – এ রেট্রোস্পেক্ট এন্ড প্রসপেক্ট- মার্কাস ফান্ডা
Politicization of the Bangladesh Military: A Response to Perceived Shortcomings of Civilian Government –
Zillur R. Khan
http://countrystudies.us/bangladesh/21.htm
God Willing: The Politics of Islamism in Bangladesh – Ali Riaz গুগল বুক লিঙ্কঃ (Click This Link)
মাই ডেসটিনি – এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) এ জি মাহমুদ
রহস্যময় অভ্যুত্থান ও গণফাঁসি – জায়েদুল আহসান
আন্ডারস্ট্যান্ডিং বাংলাদেশ – এস মাহমুদ আলী
বাংলাদেশ এন্ড পাকিস্তান – উইলিয়াম বি মিলাম
এবং অন্যান্য






Shares