ইন্টারনেট পৃথিবীর বৃহৎ লাইব্রেরী -ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী
মিঠু সূত্রধর পলাশ,নবীনগর প্রতিনিধি: ইন্টারনেটকে পৃথিবীর বৃহৎ লাইব্রেরী আখ্যায়িত করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, জ্ঞানার্জনে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ডিজিটাল যন্ত্র অপরিহার্য। ডিজিটাল যুগের বাস্তবতায় শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ভান্ডার থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার সুযোগ নাই। তাদের হাতে মোবাইল ও ইন্টারনেট না পৌঁছানোর অর্থ হচ্ছে তাদেরকে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা। তাদের অনলাইন ও অফ লাইনে শিক্ষা প্রদানের বিকল্প নেই।
তিনি আরো বলেছেন, বৈশ্বিক সভ্যতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিজিটাল প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করতেই হবে। সারা পৃথিবীতে ভবিষ্যতে কাগজের বই বলেও কিছু থাকবে না। ডিজিটাল যুগ এড়িয়ে যাওয়ার মানে হবে নিজেকে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী শনিবার নবীনগর উপজেলার শ্যামগ্রামে শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর স্কুল এন্ড কলেজে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। মন্ত্রী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে দক্ষতা তৈরিতে শিক্ষক-অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।
শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো: খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম, বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: সাহাব উদ্দিন, বিটিসিএল‘র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রফিকুল মতিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো: শাহগীর আলম, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুদ সিদ্দিক, কলেজের অধ্যক্ষ মিয়া মোহাম্মদ মোস্তাক এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান খান মাসুম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা‘র দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ফলে কোভিডকালেও দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষার্থীরাও পিছিয়ে থাকেনি উল্লেখ করে শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরের অগ্রনায়ক জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উচ্চগতির অপটিক্যাল ফাইভার সংযোগের আওতায় আনার পরিকল্পনা সরকার গ্রহণ করেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের এসওএফ তহবিলের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৫৮৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওয়াইফাই জোনের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও দেশের দুর্গম অঞ্চলের ৬শত ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাগজ –কলম ছাড়া ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের প্রকল্প বাস্তয়ন চলছে। শিক্ষাথীদের ডিজিটাল যুগের উপযোগী করে তৈরি করা আমাদের দায়িত্ব।
মন্ত্রী নবীন শিক্ষাথীদেরকে মা, মাটি ও মাতৃভাষা এই তিনটি বিষয়ে আপস না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আজকের শিক্ষাথীরাই ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার সৈনিক। তিনি বাবা মায়ের পর শিক্ষকদের মর্যাদা প্রদানের নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, শিক্ষককে যে মর্যাদা দেয়নি তারা শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও শেখ হাসিনার শিক্ষকের জন্য নিজের আসনটি ছেড়ে দেওয়া কিংবা রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের বাইরেও নিজ শিক্ষককে সাথে নিয়ে লাল-গালিচা দিয়ে হেঁটে যাওয়াসহ বেশ কিছু দৃষ্টান্ত মন্ত্রী এসময় তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম তার বক্তৃতায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা বিস্তারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো: খলিলুর রহমান সভাপতির বক্তৃতায় শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর স্কুল এন্ড কলেজের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটিকে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব । এরই ধারাবাহিকতায় এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মন্ত্রী বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন এবং প্রতিষ্ঠানটির ডিজিটাল ল্যাব পরিদর্শন করেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে মন্ত্রী নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত আব্দুল জব্বার স্কুল ও দক্ষিণ লক্ষিপুরের অধিবাসিদের কাছে পিতৃপুরুষের ঋণের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর শেকড়ের সন্ধ্যানের অভিযানে আবেগপ্রবণ পরিবেশে সৃষ্টি হয়। তিনি নবীনগরের পেয়ারকান্দিতে আমানত শাহ‘র মাজারও জিয়ারত করেন।
পরে মন্ত্রী উপজেলার ভিটিবিষাড়া গ্রামে স্বপ্ন সবুজ ও পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ এর উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন এবং একটি গাছের চারা রোপন করেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো: খলিলুর রহমান, বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং টেলিটকের এমডি মো. সাহাব উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।