২২ জানুয়ারি ২০১৫ চিকিৎসা গবেষণায় বাংলাদেশি গবেষকের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
চিকিৎসা গবেষণায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশি ছয় গবেষকের একটি গবেষণাপত্র। মানবদেহের হাড়ের ক্ষয় রোগের (এভাসকুলার নেকরোসিস-এভিএন) আধুনিক লেজার চিকিৎসার উপর প্রণীত গবেষণাপত্রটি গবেষণাভিত্তিক আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট ‘একাডেমিয়াডটএডু’ তে জায়গা করে নিয়েছে। এর আগে মালয়েশিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল রিসার্চ এবং এশিয়ান বিজনেস কনসোর্টিয়ামের এবিসিজার্নালস-এ এটি প্রকাশিত হয়। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, জার্মান ও ফিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সম্মেলনেও গবেষণাপত্রটি স্বীকৃতি লাভ করে।
ঢাকার ইনস্টিটিউট অব লেজার সার্জারি অ্যান্ড হসপিটালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইয়াকুব আলীর নেতৃত্বে গবেষণাপত্রটি হাড়ের ক্ষয় রোগের (এভিএন) আধুনিক লেজার চিকিৎসা নিয়ে প্রণীত হয়। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন ডা. জাহাঙ্গীর এম সারোয়ার, ডা. মানস সি সরকার, ডা. এস হোসাইন, ডা. এন কায়েস, ডা. মোহাম্মদ এম রহমান এবং জার্মানির ডা. হ্যান্স হেইঞ্জ।
হাড়ের ক্ষয়রোগের (এভিএন) চিকিৎসায় অপারেশনের ক্ষেত্রে (হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার আগে) হাড় প্রতিস্থাপন (বোন গ্রাফট) করে অথবা প্রতিস্থাপন না করে কোর ডিকম্প্রেশন পদ্ধতিটি সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কোর-ডিকম্প্রেশন প্রযুক্তির নতুন আবিস্কার লেজার কোর-ডিম্প্রেশন। ঢাকায় ইনস্টিটিউট অব লেজার সার্জারি অ্যান্ড হসপিটাল লেজার কোর-ডিকম্প্রেশন পদ্ধতিতে এভিএন রোগের চিকিৎসা প্রদান করে থাকে। ডা. ইয়াকুব আলীর নেতৃত্বে চিকিৎসক দল সম্প্রতি এই হাসপাতালের ৪০ জন রোগীর ৬২টি হিপ জয়েন্টের অপারেশনের উপর একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অপারেশনের আগে ও পরে ‘হ্যারিস হিপ স্কোরস-এইচএইচএস এবং ‘ফিকেট অ্যান্ড আর্ল্যট স্ট্যাজিং’ মানদ- অনুযায়ী পরিচালিত গবেষণায় কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই লেজার কোর-ডিকম্প্রেশন পদ্ধতিতে ৪০.৩ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল , ২১ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ভাল (এড়ড়ফ), ২৯ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে সন্তেুাষজনক ফলাফল পাওয়া যায়।
এ গবেষণার উপর প্রণীত গবেষণাটি অষ্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্ট আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে সর্বপ্রথম সাদরে গৃহিত হয়। পরবর্তীতে জার্মান চিকিৎসকরাও এটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে মুল্যায়ন করেন। গবেষণাটি ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক লেজার সার্জারি সম্মেলনে বিশ্বের খ্যাতিমান লেজার বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সম্প্রতি এই গবেষনা কর্মটি মালয়েশিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল রিসার্চ এবং এশিয়ান বিজনেস কনসোর্টিয়ামের এবিসিজার্নালস-এ প্রকাশিত হয়।
এভিএনের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে এটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের স্বীকৃতি লাভ করে। স্বল্প সময়ে অপারেশন, ন্যূনতম রক্তপাত এবং কোনো রকম কাটা-ছেঁড়া না লাগায় হিপ জয়েন্ট এভিএনের চিকিৎসায় লেজার কোর-ডিকম্প্রেশন পদ্ধতিটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
এ পদ্ধতিতে লেজার স্টিমুলেশনের ফলে হাড়ে দ্রুত নতুন রক্তনালী তৈরী হয়। এতে এভিএন আক্রান্ত স্থানে রক্তপ্রবাহ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পায় এবং অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের ফলে সহজেই হাড়ের নতুন কোষ বা বোন সেল তৈরি হয়। এ কারণে কাটা-ছেঁড়াহীন লেজার কোর-ডিকম্প্রেশন পদ্ধতির মাধ্যমে এভিএন আক্রান্ত রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন।