Main Menu

মৃত্যু ভাবনা

+100%-

fhokফখরুল ভূইয়া:: সকাল থেকে মৃত্যু ভাবনা পেয়ে বসেছে, আজ যদি আমি মরে যাই কি হবে? বন্ধু রিপুল চলে গেল, আমি ও যে কোন সময়েই গন। গালিব দিন দিন আমার প্রিয় থেকে প্রিয়তর হয়ে উঠছে, সে ই এখন আমার প্রানের শহর ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার যোগসূত্র । গালিব না জানালে হয়ত অনেক পরে জানতে হত রিপুলের খবর। আমার পরিবার থেকে আমাকে সহজে কোন খারাপ খবর, বিয়েগান্তিক বিষয় জানাতে চায়না, পাছে আমি কষ্ট পাই।

দিন দিন কত শিকড় গজাচ্ছে , ফেইস বুকের কল্যাণে মায়ার জাল আরো প্যাচিয়ে যাচ্ছে। ২৩ তমগ্রুপে ৩৬১টি বন্ধুর প্রতিদিনের সকাল সন্ধা ভালবাসার বাইরে বিশাল দুনিয়া। কত মুখরতা, দেশে যারা আছে বিনুনির মত এক সুতার মালা হয়ে গেছে ৩৬১টি পরিবার। আজ আদিলের আম্মার কিছু হল ত মানিক , হায়দার সহ ৩৬০ জন তারস্বরে চিৎকার তোরা খালাম্মার জন্য জলদি প্রার্থনা কর, ম্যাসেজের পর ম্যাসেজ; পোষ্টের পর পোষ্ট শাহ আলমের আপডেট্স? গতরাতে বন্ধু আমাদের ঘুমিয়েছে কি? সবাই একাট্টা হয়ে যুদ্ধ শুরু করে এক বন্ধুর কিছু হলে।
12115450_10206878523535160_4467550200643040242_n
আমি যদি আজ এখানে মরে পড়ে থাকি কেউ হয়ত জানবেইনা, আই এম নো লংগার এন এক্জিসট্যান্ট। আমার পরিবার আমার লাশ নিয়ে হিমশিম খাবে, ভাই বোন ব্যস্ত হবে আমার মৃত দেহ যেভাবে আমি অসিহত করে রেখেছি দেশে নিয়ে কবর দেবার জন্যে। স্ত্রী হয়ত দুটো নাবালক বাচ্চা নিয়ে অকুল পাথারে পড়বে, বন্ধুদের কেউ হয়ত টের ই পাবেনা , আহা কি কঠিন ভালবাসার মায়াজাল ” ছাড়িয়া যাইতে আমার চাহেনা প্রান।

রিপুলের সাথে স্কুল কলেজের কত তাজা স্মৃতি , তখন কি আমরা ফুল প্যান্ট পড়া শুরু করেছিলাম নাকি হাফ প্যান্ট থেকেই এক সাথে? মনে পডছেনা ।
কিন্তু রিপুলের সাথে আমার শেষ স্মৃতিটা ছিল ভয়ংকর , গা শিহরানো।

সম্ভবত ওর সাথে আমার শেষ স্মৃতিটা ছিল; সিলেট যাব আপার সার্টিফিকেট তুলতে মেডিকেল কলেজে, বিবাড়িয়া ষ্টেশানে রিপুলের সাথে দেখা। সে ও সিলেট যাচ্ছে, সিলেট পলিটেকনিক কলেজে রিপুল আছে জানাল। সেকেন্ড ইয়ার কিংবা থার্ড ইয়ারে পড়ি । ট্রেনে লম্বা আড্ডার পর জোর করে হোষ্টেলে ওর রুমে নিয়ে গেল, আমাকে হোটেলে উঠতে দেবেইনা। সে ছিল সম্ভবত ছাত্রদলের সেক্রেটারী , সেখানে যেয়ে জানলাম আমাদের আরেক বন্ধু আকীক ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট । দুজনে এত আপ্যায়ন করল, হল অন্য বন্ধুদের সাথে আড্ডা। ওটা ছিল সম্ভবত ১৫ই ডিসেম্বর, প্রচন্ড শীতের রাত। আমাকে রিপুলের রুমে ঘুম পারিয়ে ওরা গেল শহিদ মিনারে। হঠাৎ একটা গুলির শব্দে ঘুম ভাংল, মারা মারি হয়েছে শহিদ মিনারে এখন ছাত্রলীগের ছেলেরা রিপুলের রুম এটাক করেছে। কিছু বোঝার চেষ্টা না করে তিন তলা থেকে ঝাপিয়ে নিচে পড়ে অনেক উঁচু তাঁরকাটার দেয়াল টপকে অপরিচিত রেল লাইন ধরে শীতের রাতে খালি গাঁয়ে অনেক দূর দৌড়ে যেয়ে এক মেম্বারের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছিলাম । সকালে চুপি চুপপি ব্যাগ নিতে যেয়ে জেনেছিলাম ঐ রুম বা পাশে ছাত্রদলের এক ক্যাডার মারা গেছে। সময়মত না পালালে হয়ত রিপুলের রুমে আমার লাশ ই পরে থাকত। তারপর আর রিপুলের সাথে যোগাযোগ হয়েছিল কি না মনে পডছেনা।
রিপুল দোস্ত আমি আজ নামাজে আল্লার কাছে তোর জন্য মাফ চেয়েছি, আমরা সবাই ভুল করি, আমাদের আল্লাহ ত অতি ক্ষমাশীল , মহান রাহমানির রাহিম, গাফুরুর রাহিম যেন তোকে মাফ করে জান্নাতে স্থান করে দিন, সেই দোয়াই করছি।






Shares