সেক্যুলারিজম এর অন্তরালে কি কি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে ???
Secularism শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Seculam থেকে এসেছে। যার অর্থ পার্থিব।
ইউরোপ/আমেরিকাতে সেক্যুলারিজম মানে ধর্মহীনতাকে বোঝায়,
ফ্রেঞ্জ ভাষায় সেক্যুলারিজম কে বলা হয় Lacism, যার অর্থ অধর্মীয় অবস্থা,
আরবিতে সেক্যুলারিজম কে ”আল লাদিনাহু” বলা হয় যার অর্থ ধর্মহীন মতবাদ।
আর বাংলাতে সেক্যুলারিজম বলতে ধর্ম নিরপেক্ষতা কে বুঝায়। এখানে ”নির” প্রত্যয় যোগ করা হয়েছে যার অর্থ নেই। অর্থাৎ, ধর্মের পক্ষে নেই। বাংলা একাডেমী অভিধানে অপেক্ষার অর্থ ভরসা বা নির্ভরতা। অর্থাৎ যে ব্যাক্তির ধর্মের উপর নির্ভরতা বা বিশ্বাস নেই সেই ধর্মনিরপেক্ষ।
শাব্দিক অর্থ দিয়ে সবকিছুকে বিবেচনা করা উচিত না। আর তাই সেক্যুলারপন্থীদের মতে সেক্যুলারিজম বলতে কেবল ধর্মনিরপেক্ষতাকে বুঝায়। যদিও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।
ধর্ম কে নিয়ে আজ অনেক কন্ট্রোভারসি। সেক্ষেত্রে অনেকেই হয়তো জানতে চাইবেন ধর্মের জন্ম হয়েছে কবে। উত্তর অনেক সহজ। যখন থেকে মানুষের জন্ম শুরু হয়েছে, তখন থেকেই ধর্মের জন্ম শুরু হয়েছে। কারণ, মানুষের প্রয়োজনে ধর্ম এসেছে, ধর্মের প্রয়োজনে মানুষ নয় !!!
আচ্ছা, সিংহভাগ মুসলমানের দেশে সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা আর সম্মান রেখে এ দেশের সংবিধান বা মূলনীতি কিছুটা হলেও মুসলমানদের” ফেভারে হবে বলে প্রত্যাশা করাটা কি অপরাধ ???
এটা পরিলক্ষিত হয় যে দেশ স্বাধীন হবার পর ভারতের সংবিধানের আলোকে এদেশের সংবিধানে সেক্যুলারিজম নীতি ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে যা বাংলাদেশ থেকে ইসলাম কে নির্মূল করে দেবার প্রয়াস দেখা যাচ্ছে।
ধর্মনিরপেক্ষতার নামে কি কি হচ্ছে ???
কিছু উদাহরণ দেওয়া যাকঃ
১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আল-কোরআনের আয়াত ”রাব্বি জিদনি ইলমা”, ঢাকা শিক্ষাবোর্ড এর মনোগ্রাম থেকে ”ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক” তুলে দেওয়া হয়েছে।
২। সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি থেকে মুসলিম এবং কবি নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে ইসলাম শব্দ টি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথছ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর জগন্নাথ হল কিংবা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর নাম ঠিক ই অপরিবর্তিত আছে।
৩। দেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন ড. কুদরত এ খোদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে বলা হয় ”প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী” পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া যাবে না, তবে তার উপরের শ্রেণীর স্টুডেন্ট রা ইচ্ছা করলে অপশনাল হিসেবে ধর্ম শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। এবং পাঠ্যপুস্তক থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী উঠিয়ে ফেলা হয়েছে।
৪। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে অসংখ্য মূর্তি,মন্দির স্থাপনা করলেও সিংহভাগ মুসলমানের দেশে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয় নি।
বাংলাদেশের মত সিংহভাগ মুসলমানের দেশে যখন মানুষ কে দ্বিধায় পড়তে হয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হবে কি না হবে না, তখন সত্যিই ভাবতে হয় এ দেশ আর স্বাধীন দেশ নেই, এ দেশ পরাধীন দেশ হয়ে গেছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার লোভে এ দেশ কে বালুচর বানানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
আমি একজন মুসলমান, এ দেশ সিংহভাগ মুসলমানের দেশ। আমার দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হবে এটাই স্বাভাবিক। আর এটা না হলে সেটা হবে অস্বাভাবিক।
একটু মনে করিয়ে দেই,
মীরজাফর ক্ষমতার লোভে সিরাজউদ্দৌলার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ঠিক ই করেছিল কিন্তু ক্ষমতা আর পায় নি। তারাই তাকে শেষ করে দিয়েছে যাদের কে সাথে নিয়ে সে সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করেছিল।
এটাই জগতের নিয়ম। আপনি যেই হন না কেন, আপনি যদি জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন তাহলে উপরে খাতা কলম নিয়ে সমীকরণ লেখার জন্য একজন ঠিক ই বসে আছেন। তার ইশারায় অনেক কিছুই হয়ে যাবে যার মানুষের কল্পনার বাহিরে।
আর এতোকিছুর পরেও যদি কেউ যদি বলে থাকেন, বাংলাদেশ অনেক ভালো পথে এগুচ্ছে, তাহলে আমাকে ”আব্রাহাম লিঙ্কন” এর সেই বিখ্যাত উক্তি দিয়ে লেখা টি শেষ করতে হবে। তিনি বলেছিলেন,
”আপনি কিছু মানুষকে সব সময়ের জন্য বোকা বানিয়ে রাখতে পারেন,
আপনি সব মানুষকে কিছু সময়ের জন্য বোকা বানিয়ে রাখতে পারেন,
কিন্তু আপনি সব মানুষকে সব সময়ের জন্য বোকা বানিয়ে রাখতে পারেন না !!!”
—গোলাম রাব্বানী