Main Menu

তদন্তে অসঙ্গতি, অসন্তোষ হাইকোর্টের, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপি ও সিভিল সার্জনসহ ১৩ জনকে তলব

+100%-

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ধর্ষণের শিকার হয় সাত বছরের এক শিশু। এ ঘটনায় ওই শিশুর পিতা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলায় শিশুটির ধর্ষণের জন্য আরেক শিশুকে দায়ী করা হয়। যার বয়স জন্মসনদ অনুযায়ী ১১ বছর।

এই মামলার তদন্তে গাফিলতি ও ভিকটিমের ধর্ষণ সংক্রান্ত ভিন্ন ভিন্ন মেডিক্যাল রিপোর্ট দেওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১৩ জনকে তলব করেছে হাইকোর্ট। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি তাদের সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পুলিশের আইজিকে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের দায়িত্বে অবহেলা ও ঘটনার তদন্ত করে একমাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ সংক্রান্ত মামলার শুনানি নিয়ে বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি একেএম জাহিদ সারওয়ার কাজলের ডিভিশন বেঞ্চ রবিবার স্বপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন। তদন্ত কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি হাইকোর্ট ধর্ষণ মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে।

আদালত বলেছে, প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ভিকটিমের মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রদানে চিকিৎসকদের গাফিলতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছে সেটা তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে মনে করি।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুল ইসলাম ও আসামিপক্ষে মো. শাহপরান চৌধুরী শুনানি করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে একটি গ্রামে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ধর্ষণের শিকার হয় সাত বছর বয়সী এক শিশু। বসতঘরের পাশে খেলতে গিয়ে পাশের বাড়ির এক শিশু তাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনার সাতদিন পর নাসিরনগর থানায় মামলা করেন শিশুটির পিতা। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় এসআই আরিফুর রহমানকে। তদন্ত তদারকির দায়িত্বে ছিলেন ব্রাক্ষণবাড়িয়ার এসপি ও নাসিরনগর থানার ওসি। মামলার এজাহারে আসামির বয়স উল্লেখ করা হয় ১৫ বছর।

আইনজীবীরা জানান, ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে পরদিন নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে ৮ সেপ্টেম্বর শিশুটিকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ অবস্থায় ৬ সেপ্টেম্বর নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একটি ডাক্তারি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরইমধ্যে আসামি হাইকোর্টে আগাম জামিন চান। গত বছরের ৩ নভেম্বর এ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এদিন আসামির বয়স প্রমাণের জন্য তার জন্মসনদ দাখিল করা হয়। জন্মসনদ অনুযায়ী তার বয়স ছিল ১১ বছর। এরপরই হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ও তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন। তাদের বক্তব্য নেওয়ার পর হাইকোর্ট শিশু আসামিকে আগাম জামিন দেন। একমাসের মধ্যে তদন্ত করে ঘটনার সঠিক চিত্র আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন দমন আইনের ৯(১) ধারায় চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর ওসি একটি প্রতিবেদন হাইকোর্টে পাঠান। এ সময় জেলা সদর হাসপাতাল থেকে ১২ সেপ্টেম্বর দেওয়া একটি ডাক্তারি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ভিকটিমের ধর্ষণের বিষয়ে দুটি হাসপাতালের চিকিৎসকদের ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন দেখতে পাওয়ায় হাইকোর্ট উপরোক্ত আদেশ দেয়। আদেশে এসপি, নাগিরনগর ওসি ও তদন্ত কর্মকর্তা এবং সিভিল সার্জনসহ ১০ চিকিৎসককে তলব করা হয়।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মেডিক্যাল রিপোর্টে উল্লেখ করেছে ‘নো এক্সটারনাল ফাইন্ডিং’। আবার সদর হাসপাতাল বলেছে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যৌন নির্যাতনের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে চিকিৎসকরা বলেছে এটা করণিক ভুল, যা অনিচ্ছাকৃত। এই অসঙ্গতির কারণে হাইকোর্ট তলবের আদেশ দিয়েছে।






Shares