Main Menu

বিষাক্ত ‘ঘন চিনি’র খাবার ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ জুড়ে:: আনন্দবাজার, কলকাতা

+100%-

sugarআনন্দবাজার, কলকাতা:: মিষ্টি খাচ্ছেন? নামী দোকান থেকে? বা স্থানীয় সংস্থার সুস্বাদু ফ্রুট কেক? কনডেন্সড মিল্ক, আইসক্রিম বা প্রিয় দোকানের মিষ্টি দই?

দীর্ঘদিন ধরে যা খেয়ে আসছেন, তা এখনও নিরাপদ কি না, জানেন কি?

প্রশ্ন উঠে গিয়েছে মিষ্টি বা ওই স্বাদের খাবারের মান নিয়ে। কারণ, সন্দেশ রসগোল্লা, দই, আইসক্রিম, কেক-সহ রসনাতৃপ্তির নানা উপকরণে সহজে এবং কম খরচে মিষ্টি স্বাদ আনার জন্য তাতে এখন বিষাক্ত যৌগ সোডিয়াম সাইক্লামেট মেশানো হচ্ছে। বিষাক্ত সোডিয়াম সাইক্লামেটকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলছে তাতে মেশানো ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সার। এই ভেজাল নিমন্ত্রণ দিতে পারে ক্যানসারকেও।

বাংলাদেশে এই প্রবণতা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে দিন দিন। সোডিয়াম সাইক্লামেট নামের যৌগ ‘ঘন চিনি’ নামে পরিচিত বা‌লাদেশে। এই যৌগ চিনির চেয়ে ৫০ গুণ বেশি মিষ্টি। অর্থাৎ, ১ কিলোগ্রাম চিনি যতটা মিষ্টি স্বাদ আনতে পারে, মাত্র ২০ গ্রাম সোডিয়াম সাইক্লামেটের পক্ষেই খাবারকে ততটা মিষ্টি করে তোলা সম্ভব। কিন্তু এই সোডিয়াম সাইক্লামেট ভয়ঙ্কর বিষাক্ত। শরীরে ঢুকেই তা নানা বিষক্রিয়া শুরু করে। ফলে কিডনি, লিভার-সহ নানা অঙ্গ বিকল হতে থাকে। এমনকী ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই সোডিয়াম সাইক্লামেট বা ‘ঘন চিনি’ খাবারে মেশানো নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ সরকার এই যৌগের আমদানিও বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু তাতে সমস্যা থেমে থাকছে না। চোরা পথে বাংলাদেশ ঢুকছে হাজার হাজার টন ঘন চিনি। অসাধু মিষ্টি ব্যবসায়ী ও বেকারি মালিকরা চিনির বদলে এই ঘন চিনিই ব্যবহার করছেন খাবারে।

কীভাবে?

সোডিয়াম সাইক্লামেট এবং চিনি দেখতে অনেকটা একই রকম। আবার বোতলবন্দি সাইট্রিক অ্যাসিডকেও দেখতে ওই রকমই লাগে। তাই চিনি বলে আমদানি করায় ঝুঁকি থাকলেও, সাইট্রিক অ্যাসিড নামে ঘন চিনি আমদানি করতে সমস্যা হচ্ছে না। বোতলের গায়ে সাইট্রিক অ্যাসিড লেখা থাকছে। কোডও থাকছে সাইট্রিক অ্যাসিডেরই। কিন্তু আসলে লুকিয়ে ঢুকছে ঘন চিনি। বাংলাদেশের কাস্টমস এবং গোয়েন্দা বিভাগ সোডিয়াম সাইক্লামেটের চোরাই আমদানির খবর স্বীকার করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর-সহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সম্প্রতি প্রচুর পরিমাণে ঘন চিনি বাজেয়াপ্ত করেছে বাংলাদেশের প্রশাসন। কিন্তু চোরাচালান তাতে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

সোডিয়াম সাইক্লামেট বা ঘন চিনিতেই কিন্তু বিপদের শেষ নয়। এই বিষের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে আরও বিষাক্ত ভেজাল। ঘন চিনির মিষ্টতা এত বেশি যে তাতে ভেজাল মিশিয়ে তার ওজন বাড়িয়ে দেওয়া গেলেও স্বাদের হেরফের চট করে বোঝা যায় না। কিন্তু যা মেশানো হবে, তাকেও ঘন চিনির মতোই দেখতে হতে হবে। না হলে ভেজাল ধরা পড়ে যাবে। তাই ঘন চিনিতে মেশানো হচ্ছে স্বচ্ছ চিনির দানার মতো দেখতে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সার। এই সার স্বাদহীন। তাই ঘন চিনিতে মিশে গিয়েও স্বাদের কোনও বদল ঘটায় না। ২২০ টাকা কিলো দরে বাংলাদেশে বিক্রি হচ্ছে ঘন চিনি। আর ম্যাগনেসিয়াম সালফেট মেশানো ভেজাল ঘন চিনি ১৪০ টাকা কিলো। তাই অনেক মিষ্টি এবং বেকারি ব্যবসায়ীই অজান্তে এ বার ঝুঁকেছেন ভেজাল ঘন চিনির দিকে। ফলে মিষ্টি, পাউরুটি, কেক, কনডেন্সড, মিল্ক, আইসক্রিমের সঙ্গে শরীরে ঢুকে পড়ছে মারাত্মক বিষ।

বাংলাদেশে চলতে থাকা এই ভয়ঙ্কর অসাধু ব্যবসা লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা। দুই বাংলার সুবিস্তৃত সীমান্ত দিয়ে যে পরিমাণ চোরাচালান চলে বলে অভিযোগ, তাতে ঘন চিনি এবং ভেজাল ঘন চিনির চোরা আমদানি পশ্চিমবঙ্গেও হতে পারে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে। তবে সোডিয়াম সাইক্লামেট এবং ম্যাগনেসিয়াম সালফেটের মিশ্রণ সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে শুরু করেছে বলে কোনও নিশ্চিত খবর এখনও নেই। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকার বিভিন্ন ব্লকের বিডিও এবং থানার ওসি-রা বলছেন, এখনও এই ধরনের কোনও চোরাচালানের খবর মেলেনি।






Shares