ঢাকার বিশ্বখ্যাত এনএসইউ এখন জঙ্গি তৈরির আতুরঘর
আনন্দবাজার:: লেখা পড়া শিখতে ঘাম ঝরাতে হয় না। এসি ক্লাস রুম, সঙ্গে স্ক্রিন প্রোজেক্টর, আধুনিক লাইব্রেরিতে ৫০ হাজার বই। বিশ্বের খোলা জানালা। সপ্রতিভ শিক্ষক শিক্ষার উপাচারে সমৃদ্ধ। খিদের কষ্ট অজানা, ক্যান্টিনে খাওয়ার টাকা পকেটে। রকেট গতির জীবন। যা চাই সব আছে। ছুটতে বাধা কোথায়! না পাওয়ার ব্যথায় যারা পিছিয়ে, তাদের সঙ্গে কোনও তুলনা চলে না। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচে ঢাকার নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি। অভিভাবকদের চোখে সন্তানদের ঝকঝকে ভবিষ্যতের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন ভাঙলে স্থির থাকবে কী করে! আছড়ে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। উপাচার্য আতিকুল ইসলামের কাছে কাতর আর্জি, ছেলেদের বাঁচান। বেগরবাই করলে শাস্তি দিন। ভুলেও যেন জঙ্গিপনায় জীবন না হারায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই বিজনেস ফ্যাকাল্টির ছাত্র নিবরাস ইসলাম, গত ১ জুলাই গুলশন হাঙ্গামার অন্যতম জঙ্গি। কম্যান্ডোর গুলিতে নিহত হতেই তার বাবা-মায়ের অসহায় আর্তনাদ। এটা কেমন করে হল। এ সবের বিন্দুবিসর্গ তাঁরা জানতেন না। নিবরাসের মগজ ধোলাইয়ের জন্য দায়ী করা হচ্ছে তার বিভাগেরই শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমকে। ব্লগার রাজীব হত্যায় যুক্ত সাত শিক্ষার্থী আগেই বহিষ্কৃত। তার পর থেকেই জঙ্গি আখড়ার শিরোনামে নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি বা এনএসইউ। বহিষ্কৃতরা ছিল ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বা ইটিই আর ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা ইইই’র ছাত্র।
ঢাকা থেকে ১৪২ কিলোমিটার দূরে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ৭ জুলাই ইদের দিন হামলা চালাতে গিয়ে নিহত জঙ্গিও এনএসইউ-এর ছাত্র। বাকি দশ জঙ্গির মধ্যে দু’জন এখানকার। শীর্ষ প্রশিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য পাবলিক হেলথের ডিন গিয়াসউদ্দিন আহসান আপাতত পুলিশ হেফাজতে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। লাইব্রেরিতে ‘হিজব-উত-তাহরির’এর প্রচুর বই উদ্ধারের পর লাইব্রেরিয়ান মোস্তাফিজুর রহমান সাময়িকভাবে বরখাস্ত।
এনএসইউ-এর ১৫ বিদেশি শিক্ষকের ১০ জনের বৈধ কাগজপত্র নেই। দিনের পর দিন তাঁরা কীভাবে নির্বিঘ্নে শিক্ষকতা করছেন সেটাই আশ্চর্যের। পাকিস্তানের ১০ আর মধ্যপ্রাচ্যের ১৩ জন ছাত্র সন্দেহের তালিকায়। তাঁদের ঘিরে তদন্ত দানা বাঁধছে। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক শিক্ষক এনএসইউ-এ যোগ দেওয়ার আগে আমেরিকা, ব্রিটেন আর সৌদি আরবে ছিলেন। তিনিও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নন। ট্রাস্টি বোর্ডের অনেকেই অভিযুক্ত।
এনএসইউ বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে ছাত্র ২২ হাজার। শিক্ষাদানে বিশ্বের নজরকাড়া আয়োজন। বিশ্বের যে কোনও আন্তর্জাতিক শিক্ষায়তনের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। সেটাই এখন জঙ্গি তৈরির কারখানা। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত ১৯৯২তে। শুরু থেকেই নাম ডাক। এখান থেকে পাস করে বিদেশে কর্মরত অনেকেই। ‘গুগল’ আর ‘নাসা’তেও যুক্ত। আজ সেখানে জাল পেতেছে ‘হিজব-উত-তাহরির’ নামের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী দল। ছেলে ধরার কাজটা তারা ভালই চালাচ্ছে। বেছে নিচ্ছে বিত্তবাসনায় ক্লান্ত পরিবারের সন্তানদের। বোঝাচ্ছে, এ পৃথিবীতে সুখ নেই। মানুষ খুন করে বেহেস্তে যাওয়াটাই একমাত্র আনন্দের রাস্তা। তাতে বিশ্ব বাঁচবে। তোমরাও হুরি পরীদের সঙ্গে আলোকময় জীবন লাভ করবে। শিক্ষিত ছেলেরা এই ভাবনাকে কীভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছে ভেবে পাচ্ছেন না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানিয়েছেন, তদন্তে এমন তথ্য উঠে আসছে যাতে তাজ্জব হতে হয়।
৭৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, অসংখ্য অভিজাত স্কুলে মৌলবাদের ছায়া পড়েছে। সে সব জায়গায় যথার্থ শিক্ষার আলো ছড়ানোর পরিকল্পনা। অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকদের যোগাযোগ নিবিড়। শিক্ষার্থী তিন দিন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলেই খোঁজ। তদন্তে সাফল্যের রূপোলি রেখা স্পষ্ট। অপরাধী ধরাটা সময়ের অপেক্ষা। ভবিষ্যতে যাতে আর নাশকতা না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য।