গুলশান জঙ্গিদের আগাম অভিনন্দন জানিয়েছিল মুসা
ডেস্ক ২৪:: ডেস্ক ২৪:: বর্ধমানে থেকে ধৃত ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি মহম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে মুসার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল ঢাকার গুলশানে রেস্তোরাঁর হামলাকারীদের। শুধু ঘনিষ্ঠতাই নয়, গত পয়লা জুলাই রাতে গুলশানের ওই অভিজাত রেস্তোরাঁয় ‘নয়া জেএমবি’ জঙ্গিরা যাতে ‘সাফল্য’ পায়, তার জন্য আগাম অভিনন্দনও জানিয়েছিল মুসা। মোবাইলে এসএমএস করে এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দুই জঙ্গিকে ওই অভিনন্দন জানিয়েছিল মুসা। গুলশান হামলার তদন্তে নেমে এই তথ্য হাতে এসেছিল বাংলাদেশের কাউন্টার টেররজিম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিইউ) গোয়েন্দাদের। সেই তথ্য যাচাই করতে কলকাতায় এসে এই বিষয়ে মুসার স্বীকারোক্তি নিয়ে গেলেন তাঁরা।
মঙ্গলবার রাত ও বুধবার গোটা দিন সল্টলেকে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) দপ্তরে সংস্থার এসপি অঙ্কিত গর্গসহ পদস্থ কর্তাদের উপস্থিতিতে মুসাকে জেরা করে গুলশান হামলা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য পেয়েছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। এরপর বুধবার সন্ধ্যার বিমানে তাঁরা ঢাকা ফিরে গিয়েছেন। গ্রেপ্তারের পর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বিশেষ করে এনআইএ’র জেরায় মুসা জানিয়েছিল, বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’তে ভাঙন ধরেছে। সংগঠনে যারা আইএস মতাদর্শে বিশ্বাসী তারা তৈরি করেছে ‘নয়া জেএমবি’। তাদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগও রয়েছে। এমনকী ওই সংগঠনের নেতা তথা গুলশান হামলার মূল পান্ডা মহম্মদ সুলেমান ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের মধ্যে ছ’বার এ রাজ্যে এসে তার সঙ্গে দেখা করে গিয়েছে। সুলেমানের নির্দেশেই এ রাজ্যে আইএস ইউনিট খুলে খুন ও ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করার মতলব ছিল মুসার। এনআইএ সূত্রে তখন জানা গিয়েছিল, গুলশান হামলা এবং হামলাকারীদের বিষয়ে বিশদে জানা রয়েছে মুসার। এরই মধ্যে গুলশানে সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত পাঁচ জঙ্গির মধ্যে দু’জনের কাছ থেকে মুসার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কিত তথ্য পেয়ে যান বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। এরপরই তাঁরা ঠিক করেন, কলকাতায় গিয়ে জেরা করার প্রয়োজন রয়েছে মুসাকে।
বাংলাদেশের সিটিটিইউ সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলশানে আত্মঘাতী যে পাঁচ জঙ্গি হামলা চালিয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্তত দু’জনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল মুসার। তাদের একজন হল নিবরাস ইসলাম ওরফে রোহন ইমতিয়াজ এবং অপরজন শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। হামলার দিন সকালে নিবরাসের মোবাইলে মুসার হোয়াটস অ্যাপ বার্তা ছিল ‘অল দ্য বেস্ট’। এছাড়াও নিবরাসের মোবাইলে মিলেছে মুসার পাঠানো আরও কয়েকটি এসএমএস। এরই পাশাপাশি উজ্জ্বলের মোবাইলে মুসা পাঠিয়েছিল-‘ইউ ক্যান ডু ইট’। বাংলাদেশের গোয়েন্দারা বলছেন, জঙ্গি দলটির বাকি সদস্যদের সঙ্গে যে মুসার কমবেশি যোগাযোগ ছিল, তা তাকে জেরা করেই জানা গিয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, গোটা হামলার মাস্টার মাইন্ড তথা অর্থ সরবরাহকারী বলে পরিচিত কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক তামিম আমহেদ চৌধুরির সঙ্গে মুসার পরিচয় ছিল। এই তামিমকেই ‘নয়া জেএমবি’ সংগঠনের মাথা বলে চিহ্নিত করেছেন সে দেশের গোয়েন্দারা।
বাংলাদেশের গোয়েন্দারা বলছেন, গুলশান হামলার ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে আরও যে দুজনের নাম সামনে এসেছে, সেই দু’জন মহম্মদ সুলেমান এবং সালাউদ্দিন ওরফে সালেহান ওরফে সজীবের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল মুসার। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা ছিল সুলেমানের সঙ্গে। এ রাজ্যে আইএস ইউনিট খোলার জন্য মালদহের সীমান্তবর্তী কালিয়াচকে এসে মুসার সঙ্গে বৈঠক করেছিল সুলেমান। এছাড়াও মুসার এক ভাইয়ের বিয়েতে বীরভূমের লাভপুরের বাড়িতেও এসেছিল সে। সুলেমানকে গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ইদগাহের হামলায় মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে চিহ্নিত করে মামলা শুরু করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। গোয়েন্দারা বলছেন, শোলাকিয়া ইদগাহে হামলার পর সিসিটিভি’তে জঙ্গিদের যে ছবি ধরা পড়েছে, তাতে রয়েছে সুলেমানও। এই সুলেমানকেই জেরায় ‘বাংলার বাঘ-টু’ নামে চিহ্নিত করেছিল মুসা। আর হামলার মাস্টার মাইন্ড তামিম চৌধুরিকে সে জানত ‘বাংলার বাঘ’ নামে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পর্যন্ত এদেশের আইএস প্রধান সফি আরমার ছাড়াও বাংলাদেশের পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে যোগাযোগ রাখত মুসা। তার মধ্যেই ছিল নিবরাস ও উজ্জ্বল।