নির্বাচনের হালচাল :: আখাউড়া পৌরসভা, ভোট দিলে কি হবে? সব ভোট আমরাই ছিনিয়ে নেব!
মনিরুজ্জামান পলাশ :: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঁচটি পৌরসভার মধ্যে প্রথম দফায় শুধুমাত্র আখাউড়া পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতার জন্য তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এদিকে মাঠে রয়েছে উভয়দলেরই বিদ্রোহীসহ মোট ৫জন সতন্ত্র প্রার্থী। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের প্রচারণা শুরু না হলেও ভোটারদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় শুরু করছেন মেয়র প্রার্থীরা। তারা নিজেদের বিভিন্ন যোগ্যতার কথা শোনাচ্ছেন ভোটারদের। তবে ভোটাররা বলছেন দল দেখে নয়, এ নির্বাচনে ভোট দেবেন প্রার্থীর যোগ্যতা ও গুন দেখে।
মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আগামী ৩০ ডিসেম্বর আখাউড়া পৌরসভার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল এবং বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মন্তাজ মিয়া। স্বতন্ত্র হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ বোরহান উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদীন আব্দু,
বিএনপি থেকে সদ্য পদত্যাগকারী মো. মশিউর রহমান বাবুল, মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী ও মো. সোহেল ভূইয়া মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর পুরোদমে প্রচারণায় নামার পরিকল্পনা নিয়ে ভোটারদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় শুরু করছেন মেয়র প্রার্থীরা। তারা নিজেদের বিশেষ গুনের ফিরিস্তি দিয়ে একে অন্যের থেকে এগিয়ে থাকতে চাচ্ছেন।
আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল বলেন, আমরা যারা আওয়ামীলীগের রাজনীতি করি আমাদের জীবনের সর্বশেষ শখ থাকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য। দলীয় প্রতীকে আমাকে নির্বাচনের সুযোগ দেয়ায় মাননীয় প্রধান মন্ত্রীকে আমি ধন্যবাদ জানাই। তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি আরও ধন্যবাদ জানাই আমাদের প্রিয় নেতা মাননীয় আইন মন্ত্রী আনিসুল হককে। তিনি আমার বড় ভাই । এ কারনে আমার মনোনয়ন পাওয়া সহজ হয়েছে। নির্বাচনী কাজ কেমন চলছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন, আমরা নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি ইসতেহার প্রণয়ন করছি। এর মধ্যে একটি পৌর মার্কেট, একটি পৌর টাওয়ার ও ভাসমান দোকানিদের পুনর্বাসনের কাজ গুরুত্ব পাচ্ছে। আর অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এতে স্থান পাচ্ছে।
বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী হাজী মন্তাজ মিয়া বলেন, এলাকার জনগন আমাকে ভালবাসে। আমি যে ৮নং ওয়ার্ড থেকে দাড়িয়েছি সেটাসহ ৭ ও ৯নং ওয়ার্ডের জনগন আমাকে সমর্থন দিয়েছে। আমার বিশাল একটি ভোট ব্যাংক আছে। আর বাকি যে ৬টি ওয়ার্ড আছে সে গুলোও বিএনপির ঘাটি। সে হিসেবে প্রতিদন্ধী প্রার্থীদের থেকেও আমি অনেক বেশি ভোট পাব বলে আশা করছি। আপনার দৃষ্টিতে পৌরসভার কি কি সমস্যা রয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে এই প্রার্থী বলেন, ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও এই পৌরসভায় অনেক সমস্যা বিদ্যমান। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে আখাউড়া পৌরসভাকে আদর্শ পৌরসভায় রপান্তরিত করব।
এদিকে সতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ বোরহান উদ্দিন বলেন, আখাউড়া সবচেয়ে বেশি ভোট বি্এনপির। সে ক্ষেত্রে আমি দলীয় মনোনয়ন চাইলে আমার নির্বাচনের জয়ের সম্ভাবনা কমে যেত। আমি নিবাচনে জয়ী হলে, পৌরসভায় পানির লা্ইন স্থাপন করব। পাশাপাশি গ্যাস সংযোগ দেয়ারও চেষ্টা করব।
অপর সতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদীন আব্দু, আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট ছিনিয়ে নেয়ার হুমকির কথা উল্লেখ করে বলেন, তারা এলাকায় ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে ভোট দিলে কি হবে? সব ভোট আমরাই ছিনিয়ে নেব। তিনি এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তবে ভোটাররা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে এসে প্রার্থীর যোগ্যতা ও গুন দেখে ভোট দেয়ার কথা বলছেন। তারা বলছেন পৌরসভার উন্নয়ন করবে এমন প্রার্থীকেই মেয়র মনোনিত করবেন তারা।
আখাউড়া সড়ক বাজরের ফল ব্যবসায়ী হামদু মিয়া বলেন, আমি আখাউড়ার নাগরিক হিসেবে যাকে দেয়া প্রযোজ্য তাকেই ভোট দেব। যে আমাদের জন্য কাজ করবে সেই ভোট পাবে। তবে যারা পূর্বে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তার বাস্তবায়ন করেনি এমন প্রার্থীর বিষয়ে এবার সজাগ আছে জনগণ বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।
কথা হয় আরেক বেসরকারি কোম্পানির চাকুরীজীবি মো. আল আমিনের সাথে, তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়াটোয়েন্টিফোরডটকমকে বলেন, শুধু দল হলেই হবেনা। যারা বিগত দিনে উন্নয়ন করছে বা উন্নয়নে অবদান রেখেছে এমন প্রার্থীকেই আমরা নির্বাচিত করব।
আরেক ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, আমাদের আখাউড়া পৌরসভা সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়াতে এখানে মাদকের প্রাদুর্ভাব খুব বেশী। যিনি মাদকমুক্ত পৌরসভা গঠন করতে পারবে আমরা তাকেই মেয়ার বানাবো।
আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: আলাউদ্দিন আল মামুন ব্রাহ্মণবাড়িয়াটোয়েন্টিফোরডটকমকে জানিয়েছেন, যাচাই বাছাই এর পরে এই পৌরসভায় আবেদনকারী ৭জনের মধ্যে ৭ জনই মেয়র পদে, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদেও ৯জনের মধ্য ৯জন ও সাধারন ওয়ার্ডে ৪৩জনের মধ্যে ৪২ জনের মনোনয়ন পত্র যাচাই বাছাই এর মাধ্যমে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।৩নং ওয়ার্ডের মো: রফিকুল ইসলাম খাদেমের হলফনামায় ভুল থাকায় ও ৬নং ওয়ার্ডের মো: জহিরুল ইসলামের আবেদন প্রত্র সঠিক না হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়াও নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে কমিশন বলে জানিয়েছেন এই রিটার্নিং কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সনের ১২ ডিসেম্বর আখাউড়া উপজেলা সদরের আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন ও আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রায় ৮.৩৩ বর্গ আয়তন নিয়ে ০৯টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে আখাউড়া পৌরসভা গঠিত হয়। বর্তমানে এ পৌরসভার মোট ভোটার ২৪৯৫০জন, যেখানে নারী ১২৪৯২জন ও পুরুষ ১২৪৫৮জন।