প্রতিবেদক ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে এ বছর কাঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ৩০/৩৫ লাখ টাকার কাঠাল বেচা-কেনা হচ্ছে। ফলন ভালো হওয়ায় কাঠাল চাষীদের মুখেও আছে তৃপ্তির হাসি। এখানকার কাঠাল মষ্টি ও রসালো হওয়ায় দেশজুড়ে রয়েছে এর বিশেষ কদর। বিজয়নগর উপজেলায় নরম. রসালো ও চাওলা এই ৩ ধরনের কাঠাল চাষ করা হয়। অনুকুল আবহাওয়া ও পরিচর্যার কারনে এবছর বিজয়নগরে কাঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার আউলিয়া বাজার, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর,খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, কালাছড়া, মেরাশানী, কামাল মোড়া, নূরপুর, কাশিমপুর, হরষপুর, ধোরানাল, মুকুন্দপুর, সেজামুড়া, নোয়াগাঁও, পত্তন এলাকায় রয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক কাঠাল বাগান। চলতি বছর উপজেলার ৬শত ১৮ একর জমিতে কাঠালের চাষ করা হয়েছে।এ ছাড়াও উপজেলার প্রায় সবকটি বাড়িতেই রয়েছে ৭/৮টি করে কাঠাল গাছ। বিজয়নগর উপজেলার সবচেয়ে বড় কাঠালের বাজার হচ্ছে আউলিয়া বাজার। এছাড়াও উপজেলার মুকুন্দপুর, কাংকইরা বাজার, চম্পকনগর, সিঙ্গারবিল, ছতরপুর বাজারে পাইকারীভাবে কাঠাল বেচা-কেনা হয়। এসব বাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাদপুর, মৌলভীবাজার, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন কাঠাল কিনে নিচ্ছে। এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে শুরু হয় কাঠালের বেচা-কেনা। ট্রাকে করে ওইসব বাজার থেকে কাঠাল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নেয়া হচ্ছে।এলাকাবাসী জানান, শুধু মাত্র আউলিয়া বাজারেই প্রতিদিন প্রায় ২৫ লাখ টাকার কাঠাল বেচা-কেনা হয়। প্রতি হাজার কাঠাল গড়ে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার কালাছড়ার কাঠাল চাষী মোঃ হানিফ মিয়া বলেন, তার বাগানে রয়েছে ২ হাজার ৫শত কাঠাল গাছ। প্রতি গাছে গড়ে ৩০টি কাঠাল আছে। তিনি বলেন, আমি প্রতি হাজার কাঠাল ৮০ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছি। কাশিমপুর গ্রামের কাঠাল চাষী রাকিব হোসেন আমার বাগানে ১ হাজার কাঠাল গাছ আছে। আমার বাগানের কাঠালের রঙ সুন্দর ও সাইজে বড়। আমি প্রতি হাজার কাঠাল ১ লাখ টাকা দরে বিক্রি করব। বিষ্ণুপুর এলাকার কাঠাল চাষী মোঃ এনামুল হক বলেন, তার বাগানে ১শ কাঠাল গাছ আছে। তিনি বলেন, আমি আরো ১ মাস আগেই প্রতি হাজার কাঠাল দেড় লাখ টাকা দরে বিক্রি করেছি। উপজেলার হরষপুরের কাঠাল চাষী রেনু মিয়া বলেন, আমার বাড়িতে ৬৫টি কাঠাল গাছ আছে। আমি প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ টাকার কাঠাল বিক্রি করি। উপজেলার বিষ্ণুপুরের তাবরিজ খলিফা বলেন, আমার বাড়িতে ৪শত কাঠাল গাছ আছে। আমি প্রতিবছর ৫/৬লাখ টাকার কাঠাল বিক্রি করতে পারি। উপজেলার চম্পকনগর গ্রামের কাঁঠাল চাষী মাহবুব বলেন, নিজেরা খেয়ে, আত্মীয় স্বজনকে দিয়ে এবছর ৩ লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি করেছি। উপজেলার ছতরপুর গ্রামের কাঠাল ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, আমরা প্রতি হাজার কাঁঠাল ৮০ হাজার টাকা দরে কিনে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছি। নাসিরনগরের কাঠাল ব্যবসায়ী অলফত আলী বলেন, আমি বিজয়নগর থেকে প্রতি হাজার কাঠাল ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দরে কিনে নাসিরনগর বাজারে নিয়ে প্রতি কাঠাল ১৫০/২০০টাকায় বিক্রি করি। এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, এবছর উপজেলায় মোট ৬১৮ একর জমিতে কাঁঠাল চাষ হয়েছে। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করার ফলে ও সঠিক পরিচর্ষা করায় এবছর কাঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি বলেন, উপজেলার নরম, চাওলা ও রসালো এই ৩ ধরনের কাঠাল চাষ হয়। চলতি বছরে উপজেলায় প্রায় ৬ কোটি টাকার কাঁঠাল বিক্রি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, আমরা কাঠাল চাষীদের সব ধরনের সহযোগীতা করেছি। মৌসুমের প্রথম দিকে বৃষ্টি হলে কাঁঠালের ফলন আরো ভালো হতো।
|