আশুগঞ্জে সরকারি চাল সংগ্রহের নামে চলছে কমিশন বাণিজ্য
প্রতিনিধি:: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামে সরকারি ভাবে চাল সংগ্রহের নামে চলছে কমিশন বাণিজ্য। প্রতি কেজি চালে ৮০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত কমিশন নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামে আতপ ও সিদ্ধ চাল মিলে ২০ হাজার ১শ ১৯ মেট্রিক টন চাল সরকারি ভাবে সংগ্রহ করার জন্য বরাদ্দ প্রদান করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়াও মিলের সাথে চুক্তি ও সব ধরনের রাইসমিলের লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য প্রতি মিল থেকে ১০/১৫ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহন করারও অভিযোগ ছাড়াও আশুগঞ্জে ৫টি ভূয়া মিলের নামে চাল বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদাম এলাকায় গিয়ে জানা যায়, দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম হিসাবে সুপরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ। এ উপজেলায় প্রায় ৪ শতাধিক চাতাল কল রয়েছে। সরকারিভাবে চাল সংগ্রহের একটি বড় অংশ আশুগঞ্জ থেকে প্রতি বছর চাল ক্রয় করে থাকে। চলতি বোরো মৌসুমে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদাম সরকারি ভাবে চাল সংগ্রহ ৪ আগষ্ট শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত। চলতি মৌসুমে আতপ ৯ হাজার ৪শ ৩৩ মেট্রিক টন ও সিদ্ধ ১০ হাজার ৬শ ৮৬ মেট্রিক টন সরকারি ভাবে চাল সংগ্রহ করছে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। এবার সরকারি ভাবে সিদ্ধ চালের মূল্য ধরা হয়েছে ৩২ টাকা আর আতপ চালের মূল্য ধরা হয়েছে ৩১ টাকা।
তবে বৃহস্পতিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সিদ্ধ ও আতপ মিলে প্রায় ৯ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করেছে করেছে খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে চাল সংগ্রহে প্রতি কেজিতে ৮০ পয়সা থেকে ১টাকা হারে কমিশন নেওয়া হচ্ছে মিল মালিকদের কাছ থেকে। পাশপাশি চুক্তি ও নবায়নের জন্য দিতে হচ্ছে ১০/১৫ হাজার টাকা। খাদ্য বিভাগ স্থানীয় মিল মালিকদের সাথে সখ্যতা করে নিম্ন মানের চাল ২৮/৩০ টাকা মূল্যে ক্রয় করেও বিল দিচ্ছে সরকারি নির্ধারিত মূল্যে। ফলে প্রতি মৌসুমে কয়েক কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য চলে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামে। আর এটি বিভিন্ন দপ্তরে বিলি হয়। চাল সংগ্রহ অভিযান চলে পুরো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। আর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে আশুগঞ্জের চাতাল মালিক ও চাল ব্যবসায়িরা। সিন্ডিকেটে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলর লোকজনের মধ্যে।
এদিকে অস্তিত্ব নেই এমন ৫টি মিলের সাথেও আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামের চুক্তি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মিলগুলো হল, ইফতেখার রাইসমিল, মেহের রাইস মিল, আজাদ রাইস মিল গুলো বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বাকি দুটি রাইস মিল অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে এবং রাইস মিলগুলোর জায়গায় বিশাল বিশাল বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে। এসব রাইস মিলে নামেও দেওয়া হয়েছে চাল বরাদ্দ। আশুগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আবু কাউছার দাবি করেন অভিযোগ উঠার পর অস্তিতহীন মিল গুলোর চুক্তি বাতিল হয়েছে।
প্রতি বছরের মত এবারও বর্তমান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু কাওছার ও আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির হোসেনের যোগসাজসে এবারও চাল সংগ্রহে চলছে ব্যাপক কমিশন বাণিজ্য।
নাম প্রকাশে একাধিক মিল মালিক জানান, খাদ্য গুদাম আমাদের যেভাবে দিকনির্দেশনা দেয় আমরা সেভাবেই চলতে হয়। আর তা না হলে সমস্যায় পড়তে হয়। কমিশন বাণিজ্য নিয়ে লিখলে কোন কাজ হবে না এই টাকার একটা অংশ সকলেই পায়। তিনি আরও জানান নিম্ন মানের চাল কম দামে ক্রয় করলে বিল দেওয়া হয় সরকারি নির্ধারিত মূল্যে। এতে ক্ষতি হচ্ছে সরকারের।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.মনির হোসেন জানান, চাল সংগ্রহে এখন কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কারন বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মিল মালিকরা চাল দিতে আগ্রহী হচ্ছে না। এছাড়া চাল সংগ্রহে কমিশন নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নাই।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন এর সাথে মুঠো ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করলেও তিনি রিসিভ করিনি।