আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : চালু হয়নি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা
উপজেলা প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ হলেও চালু হয়নি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা। এতে দীর্ঘদিন পর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার অন্তত দুই লক্ষাধিক জনসাধারণ। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ হলেও বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন রয়েছে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের। এ ছাড়া নিয়োগ দেয়া হয়নি প্রয়োজনীয় জনবলও। উদ্বোধন না হলেও বর্তমানে হাসপাতালটিতে শুধু বহির্বিভাগ চালু রয়েছে। নেই প্রয়োজনীয় আসবাব ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। প্রয়োজনীয় সরবরাহ পেলে শুরু হবে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা। তাই অতি দ্রুত এ সেবা চালুর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, দুই লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী বসবাসকারউ ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ জনপদ হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা ২০০০ সালে পূর্ণাঙ্গ উপজেলার স্বীকৃতি লাভ করে। এরপর দীর্ঘদিন উপজেলা পরিষদের ছোট দুটি কক্ষে চেয়ার টেবিল ফেলে শুধু বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা চালু করে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। রাষ্টীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান (কেপিআই), আন্তর্জাতিক নদীবন্দর ও অসংখ্য ছোট-বড় শিল্পকারখানা থাকলেও উপজেলাবাসী বঞ্চিত ছিল সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে। স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত থাকায় স্থানীয় এলাকাবাসীকে অন্তত ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অথবা ঢাকায় গিয়ে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিতে হতো। চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হতো তাদের। তাই উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ২০১৪ সালে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ একর জমির ওপর নির্মাণ করেছে। গত বছরের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে হাসপাতালটি স্বাস্থ্য অধিপ্তরের কাছে হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা মার্কেন্টাইল করপোরেশন লি.। আর দীর্ঘদিন পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নির্মাণের ফলে উপজেলাবাসী আশায় বুক বেঁধেছিল অবশেষে দীর্ঘদিন পর স্বাস্থ্যসেবা পেতে যাচ্ছেন তারা। কিন্তু তাদের আশা ফিকে হয়ে গেল হাসপাতালটি হস্তান্তরের পর। কারণ ভবন নির্মাণ হলেও নেই আসবাব। পুরনো চেয়ার টেবিল ফেলে দেয়া হচ্ছে শুধু বহির্বিভাগের সেবা। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় প্রতিদিন বহির্বিভাগের সেবা দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারপরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে মূল ভবনের দুটি রুমে বহির্বিভাগ চলছে। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও আসবাবের চাহিদা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।
আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ জানান, হাসপাতালে সমস্যাটি খুবই জরুরি ভিত্তিতে সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে এবং রেজুলেশনে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্রুত ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা চালুর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে অবহিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন ডা. নিশিত চন্দ্র বিশ্বাস জানান, যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য বিষয়ের চাহিদা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু আসবাব বরাদ্দ হয়ে গেছে। খুব দ্রুত তা পাওয়া যাবে। তবে দ্রুত হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য প্রয়োজনী ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আর হাসপাতালটি উদ্বোধন হলেই ধীরে ধীরে প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি পাওয়া যাবে।সূত্র: মানবজমিন