ট্রান্সশিপমেন্ট শুরু:: আশুগঞ্জ নৌবন্দরের আয় বৃদ্ধির আশা
ডেস্ক ২৪:: অবকাঠামোগত উন্নয়ন না করেই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় শুরু হলো আনুষ্ঠানিক ট্রান্সশিপমেন্ট। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দরে নোঙর করা জাহাজ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য খালাসের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান। আগামী শনিবার আশুগঞ্জ থেকে সড়কপথ হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে এ পণ্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় যাওয়ার কথা রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রীসহ অন্যরা আশাবাদ ব্যক্ত করে জানান, ট্রান্সশিপমেন্টকে কেন্দ্র করে বদলে যাবে আশুগঞ্জ নৌবন্দরের সার্বিক চিত্র। এখানে ভারতীয় অর্থায়নে নির্মাণ করা হবে আইসিটি (ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল), যেটি নির্মাণে ভূমির ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ সরকার। এ ছাড়া নির্মিত হবে জেটি। আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়কটি চার লেনে রূপান্তরিত করারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
ইতিমধ্যেই ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে অফিস ভবন, পার্কিং ইয়ার্ড, ওয়্যারহাউস, আর সিসি জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত সড়কও মোটামুটি প্রস্তুত রয়েছে পণ্য পরিবহনের জন্য। এসব সুবিধা ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে প্রথম আনুষ্ঠানিক ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, ট্রান্সশিপমেন্টকে কেন্দ্র করে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ার পাশাপাশি আশুগঞ্জ নৌবন্দরে বিপুলসংখ্যক লোকেরও কর্মসংস্থান হবে। পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের জাহাজ ও ট্রাক ব্যবহৃত হবে বলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে পণ্য পরিবহনের কারণে ভারত সময় ও খরচের দিক থেকে লাভবান হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় ট্রান্সশিপমেন্টের এক হাজার টন রড নিয়ে ভারত থেকে আসা এমভি নিউটেক-৬ নামে একটি কার্গো জাহাজ গত বুধবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দরে এসে নোঙর করেছে। আনবিস ডেভেলপমেন্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান পণ্য পরিবহনের দায়িত্বে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগে ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় ভারতকে কোনো শুল্ক দিতে হতো না। এখন আগের বিভিন্ন চার্জের বাইরে নির্ধারিত হারে টনপ্রতি শুল্ক দিতে হবে। এর মধ্যে কাস্টমস টনপ্রতি ১৩০ টাকা, বিআইডাব্লিউটিএ টনপ্রতি ১০ টাকা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৫২.২২ টাকা হারে শুল্ক পাবে। এ ছাড়া সড়কপথে পরিবহনের সময় পুলিশি প্রহরা নিলে টনপ্রতি ৫০ টাকা হারে ফি দিতে হবে। এর বাইরে ভয়েজ পারমিশন ফি, পাইলটিং ফি, বার্দিং (অবস্থান) ফি, ল্যান্ডিং চার্জ, চ্যানেল ফি, লেবার ফি গুনতে হবে পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানকে।
প্রটোকলের আওতায় চারটি নৌপথ ব্যবহৃত হবে। নৌপথগুলো হলো কলকাতা-শিলঘাট, কলকাতা-করিমগঞ্জ, কলকাতা-ধুলিয়ান, কলকাতা-আশুগঞ্জ। কলকাতা হয়ে আশুগঞ্জ নৌপথের জন্য বাংলাদেশের শ্যালা নদী ব্যবহার করা হতো। কিন্তু জীববৈচিত্র্য তথা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে শ্যালা নদীতে যান চলাচল নিষিদ্ধ হওয়ায় বিকল্প হিসেবে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল ব্যবহার করায় দূরত্ব প্রায় ৮২ কিলোমিটার কমে গেছে। এ পথে পণ্য আসতে সহযোগিতার জন্য কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া আছে। তাঁরা পণ্যের বিষয়েও নিশ্চিত হন।
এদিকে পণ্য খালাস উপলক্ষে আশুগঞ্জ নৌবন্দরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান বলেন, ‘ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌবন্দরে বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে’।
বিশেষ অতিথি প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে পণ্য পরিবহন খুবই জরুরি। বাণিজ্য না বাড়লে উন্নয়ন হবে না। ট্রান্সশিপমেন্টের মধ্য দিয়ে দুই দেশই লাভবান হবে’।
ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘এটি দুই দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরার ঐতিহাসিক এবং আবেগঘন সম্পর্ক রয়েছে। এই নৌ ট্রানজিট সেখানকার জনগণের উপকারে আসবে’।
সভাপতির বক্তব্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায় জানান, শুধু ভারত নয় এখন ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডও আমাদের এ ধরনের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। প্রত্যেক চুক্তিই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ট্রান্সশিপমেন্ট সম্পর্কে বিআইডাব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘১৯৭২ সালের চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের পণ্য যাচ্ছে। প্রতি পাঁচ বছর পর পর এ চুক্তি নবায়ন হবে। ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য আশুগঞ্জে জেটি ও টার্মিনাল নির্মাণ হবে। নিয়মিত নৌ ট্রান্সশিপমেন্টের ফলে বাংলাদেশও লাভবান হবে।’
আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জলি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মোবারক হোসেন ভূঁইয়া জানান, তিনি এ বন্দর দিয়ে পণ্য ভারতে পৌঁছানোর দায়িত্ব পেয়েছেন। প্রায় ৬০টি ট্রাকে করে পণ্য যাবে আগরতলায়। আগামী শনিবার সকালে পণ্যের প্রথম চালান সেখানে যাওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের নৌ ও সড়কপথ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন করেছে ভারত। মানবিক কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল ও চাল পরিবহনে তখন কোনো ধরনের শুল্ক নেয়নি বাংলাদেশ।