৫ মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড নাসিরনগর, নিহত ১
নিজস্ব প্রতিবেদক:: উপজেলার নাসিরনগরে ৫ মিনিটরে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে উপজেলা সদরের কয়েকটি পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। এ সময় ঝড়ের তোপে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া একজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি আশুরইল গ্রামের আ. রশিদ মিয়ার ছেলে মো. জিসু মিয়া। ভেঙ্গে গেছে বহু গাছপালাও। শনিবার সকাল ৮টার সময় এ ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব চলে। ঘরের নিচে চাপা পড়ে আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন।
এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা আশরাফী, উপজেলা চ্যোরম্যান ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা তাৎক্ষণিক পরির্দশনে যায়। ঝড়ের তোপে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া আশুরাইল গ্রামের জিসু মিয়া নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নাসিরনগর সদরের পশ্চিমপাড় (চেঙ্গাপুর), ও মহাখাল পাড়ায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। টেনু দাসের (৭০) টিনের ঘরের চালা কাছে থাকা নারিকেল গাছে শীর্ষে ঝুলে আছে। টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে প্রনতী রানী দাস, বাবু দাস, জগবন্ধু দাস, জগদীশ দাস, সতিষ দাস, রতি দাস, সবুজ দাস, বুদাই দাস, অর্জুন দাস, শ্যামলাল দাস, অনন্ত দাস, হরি দাস, সুবদেবনাথ,শৈলেন দাস, এন্টু দাস,বদ্যিনাথ দাসসহ অনেকেরই। কারো আবার নলকুপ উপড়িয়ে ফেলতে দেখা গেছে। নদীর পাড়ে বাঁধা কয়েকটি নৌকা উল্টিয়ে দিয়েছে এ ঘূর্ণিঝড়।
এদিকে উপজেলার ডাকবাংলোতে গিয়ে দেখা গেছে, জেলেদের মাছ ধরার নৌকাসহ বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী (নদীর তীরে থাকা) নৌকা ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে বিদ্যুতের খুঁটিও। ডাকবাংলোর পাশে নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের রুমের দরজা ভেঙ্গে রুমে থাকা টেবিল চেয়ার উড়িয়ে নিয়ে গেছে। কয়েকটি টেবিল বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ঝুলতে দেখা গেছে। গাছ পড়ে ডাকবাংলোর রাস্তা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্থ প্রনতী দাস বলেন, সহাল (সকাল) বেলা ঘুম থিক্কা উইঠ্যা অই অত বড় বিপদ। আমার সব লইয়া গেছেগা তুফানে (ঝড়ে)। এহন ক্যামনে কিতা করুম। করোনার লাইগ্যা রুজি রোজগার নাই। খামু কি আর ঘরই তুলুম ক্যামনে।
কালনবালা দাস, গোপাল দাস ছাড়াও বেশ কয়েক জন ঘূণিঝড়ের প্রভাবে শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। ঝড়ের প্রত্যক্ষদর্শী মন্তাজ মিয়া ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াভহতা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। বিধ্বস্ত ঘরের সামনে বসে অপলক দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছেন মন্তাজ। মন্তাজের স্বজনরা জানিয়েছেন, নিজের চোখে দেখা এ ধ্বংসাত্বক দৃশ্য দেখে কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে তার। তারা মন্তাজকে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গৌর মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক সবুজ দাস জানান, মহাখাল পাড়ার মন্দিরের ২টি ঘরের টিনের চালাসহ উড়িয়ে নিয়ে গেছে মন্দিরের বেশ কয়েকটি গাছপালা। তবে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ এখনো হিসেব করা যাচ্ছে না। এছাড়াও সদর ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়ার (চেঙ্গাপুরের) একটি পারিবারিক মন্দিরের টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে।
গাংকুল পাড়ার নন্দিতা দাস, লাল মোহন দাস, মোহন লাল দাস ও নিরেন্দ্র দাসের ঘরের টিনের চালা ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের আশুরাইল গ্রামের আক্তার মিয়ার নতুন আধা পাকা ঘরের চালা, স্কুল শিক্ষক নূর আলমের ঘর ছাড়াও একই গ্রামের রাজা বাড়ির ৮টি ঘর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। শ্রীঘর গ্রামের প্রায় ১৫টি ঘর ঝড়ে ক্ষতিগ্রহস্থ হয়। শ্রীঘর গ্রামের মোজাম্মেল হক জুরান জানান, আমার তিন ভাইয়ের ঘরসহ ১০টি ঘর সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙ্গে নিয়ে গেছে আকস্মিক এ ঘূণিঝড়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা আশরাফী জানান, সকালের আকস্মিক ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের দেখতে আমি ছুটে যাই। যা দেখলাম উপজেলা সদরেই ৫০টি মতো ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে সঠিক ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের চেষ্টা করছি।