নাসিরনগরে কালবৈশাখীর তান্ডবে ভাঙলো ৫ শতাধিক বাড়িঘর বিদ্যুৎ নেই পুরো উপজেলায়
মুরাদ মৃধা, নাসিরনগর সংবা
সরেজমিন সদর উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের আলী আজম মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার তিনটি ঘর ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। ঘরের চালা উড়িয়ে পার্শ্ববর্তী খালে ফেলেছে। এছাড়াও আক্কাস মিয়া ও রাসেল মিয়ার বসত ঘরটি ঝড়ে ভেঙেছে।
আশুরাইল গিয়ে দেখা যায় বিধবা নারী পারুল বেগম তার ঘরের চালা খুজচ্ছেন। গতকাল ঝড়ে তার একমাত্র ঘরটি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এই গ্রামে প্রায় ২০টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অধিকাংশ ঘরের ধ্বংবাশেষ খুজে পায়নি।
নাসিরপুর গ্রামের ভানু আচার্য বলেন ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে নতুন একটি পোল্ট্রি ফার্মের ঘর তৈরি করি কিন্তু গতকালের ঝড়ে উড়ে যায়। সরকারী কোন সহায়তা না পেলে আমি পথের ভিখারি হয়ে যাব।
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল কবির জানান, উপজেলার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র এখনই বলা যাচ্ছেনা তবে আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সরকারি ভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য কোন ত্রাণের ব্যবস্থা নেই। সরকারের কাছে আবেদন করব ত্রাণ সহায়তা দিতে।
সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে নাসিরনগর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবলবেগে কালবৈশাখী বয়ে যাওয়ায় এ ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে শুধু বসত ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ২শতাধিক। সমগ্র উপজেলার প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পেতে আরো ৭দিন সময় লাগতে পারে।
গেয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজহারুল জানান, গোয়ালনগর ইউনিয়নের ১৩ টি গ্রামে কালবৈশাখি তান্ডবে শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। ঘরবাড়ি ও গাছপালা পরে আহত হয় ২০ জন। কৃষকের ফসলি জমি ধানের ক্ষতি হয়েছে। উড়িয়ে নিয়ে গেছে হাজার হাজার মণ শুকনো খড়। গবাদিপশুর শুকনো খড় উড়িয়ে নেয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষক।
ভলাকুট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রুবেল মিয়া বলেন ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ভলাকুট ইউনিয়নের খাগালিয়া গ্রামে ও ভলাকুট গ্রামে। শুধু খাগালিয়া গ্রামে ১ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভলাকুট গ্রামে অর্ধশতাধিক। গাছের ডালপালার আঘাতে আহত হয়েছে সাধারণ মানুষসহ গবাদি পশু।
রোববার (১৩ মে) সন্ধ্যা ও রাত সাড়ে বারোটা দুইদফা কালবৈশাখীর তান্ডবে উপজেলার কিছু কিছু এলাকা ধংশস্তুপে পরিনত হয়েছে। পুরো উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। উপজেলা সদরে বিকালে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিলেও দু’মিনিট পর আবার বন্ধ হয়ে যায়।
নাসিরনগর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির এজিএম হিমেল কুমার শাহ জানান,ঝড়ের তান্ডবে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে, বিভিন্ন লাইনে গাছ ভেঙ্গে ঝুলে পড়ে আছে। ফান্দাউক ও ভলাকুটে ২০টি খুটি ভেঙে গেছে। সারা উপজেলায় প্রায় ৩৫ টি খুটি ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। আমাদের জনবল সংকট। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া আমাদের জন্য যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। তার পরও আমরা চেষ্টা করছি বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন স্বাভাবিক করতে।