নাসিরনগরে আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা খুনের মামলায় বাদী ও স্বাক্ষী এলাকার কুখ্যাত দুই গরু চোর
নাসিরনগর সংবাদদাতাঃ- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার গুনিয়াউক ইউনিয়নের গুটমা গ্রামের আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও আয়ামীলীগ নেতা মোঃ হুমায়ুন কবির দরবেশ সহ দশ জনের বিরুদ্ধে একই গ্রামের এক কুখ্যাত গরু চোর বাদী ও অন্য চোর স্বাক্ষী হয়ে হবিগঞ্জ জেলার সিনিয়র জুটিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ক গ ৭ এর আদালতে মিথ্যা খুনের মামলা দায়ের করা অভিযোগ পাওযা গেছে।
মামলার আসামীরা জানায়, পূর্ব শত্রুতা, পারিবারিক কলহ, রাজনৈতিক মনোমালিন্যের জের ধরে, তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা।
জানা গেছে গুনিয়াউক ইউনিয়নের গুটমা গ্রামের কুখ্যাত গরু চোর আনিছ মিয়ার ছেলে মোঃ আল আমিন (আমির) (১৮) ও একই গ্রামের মারাজ মিয়ার ছেলে মোঃ সফু মিয়া হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার ধর্মপুর গ্রামে ড্রেজার দিয়া মাটি কাটার কাজ করতে যায়। গত ২৫ মার্চ বিকেল অনুমান সাড়ে ছয় ঘটিকার সময় আল আমিন (আমির) রাতের রান্না করতে গিয়ে স্টোভের আগুনে অগ্নিদগ্ধ হয়। ওই সময় আল আমিনের আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা দৌড়ে এসে তাৎক্ষণিক তাকে চিকিৎসার জন্য সিএনজি যোগে নাসিরনগর হাসপাতালে নিয়া আসে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ণ ও প্লাষ্টিক সার্জারী বিভাগে প্রেরণ করে। সেখানে ১০ মে পর্যন্ত আল আমিনের চিকিৎসা চলে। ১০ মে বিকাল অনুমান সাড়ে তিন ঘটিকায় চিকিৎসারত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে আল আমিনের মৃত্যু হয়।
ড্রেজার শ্রমিক নিহতের ঘটনায় মিথ্যা খুনের মামলা সৃষ্টি করে নিহতের পিতা আনিছ মিয়া বাদী হয়ে ২৪ মে হবিগঞ্জ আদালতে ১০ জনের নামে মামলা দায়ের করে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। মামলার আসামীরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার গুনিয়াউক ইউনিয়নের গুটমা গ্রামের আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ হুমায়ুন কবির দরবেশ, মারাজ মিয়ার ছেলে মোঃ সফু মিয়া, মোঃ জামাল মিয়া, মোঃ শাহ আলম, মোঃ লালন মিয়া, রৌশন আলীর ছেলে মোঃ বাহার মিয়া, মোঃ আবু তাহের, মোঃ জলফু মিয়ার ছেলে হেবজু মিয়া, ছুরত আলীর ছেলে জাহার মিয়া, বাদশা মিয়ার ছেলে মোঃ ফজু মিয়া।
অভিযোগকারী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মোঃ আল আমিন (আমির) ও সফু মিয়া হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের মস্তু মিয়ার ভাড়াটিয়া বাসা থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ করত। সরজমিন এলাকায় গিয়ে প্রত্যক্ষ দর্শী মোঃ শান্তি মিয়া, মোঃ আছকির মেম্বার, মোঃ মস্তু মিয়া, মোঃ আব্দুল হাই, মোঃ কডু মিয়া, মোঃ জিয়া উদ্দিন স্বাস্থ্য সহকারী মোঃ নজরুল ইসলাম, পল্লী চিকিৎসক মোঃ শফিকুল ইসলাম, মোঃ কাজল মিয়া, মোঃ মনু মিয়া, মোঃ তাহের মিয়া, মোছাঃ নেহেরা বেগম সহ বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষের সাথে কথা বলে জানা যায় ২৫ মার্চ বিকাল অনুমান সাড়ে ছয় ঘটিকার সময় আল আমিন (আমির) কেরোসিন ভর্তি পাম্পের চোলায় রাতের রান্না করতে বসে। ওই সময় তার সহকর্মী অপর ড্রেজার শ্রমিক সফু মিয়া অনুমান এক কিলোমিটার দুরে কাজ করছিল। রান্নার সময়ে স্টোভে পাম্প না থাকায় আল আমিন চোলায় আগুন দিয়ে পাম্প দিতে শুরু করে। অতিরিক্ত পাম্পের কারণে চুলাটি বিস্ফোরিত হয়ে আল আমিনের গায়ে আগুন ধরে যায়। আল আমিনের চিৎকারে প্রতিবেশী নারী পুরুষ ও তার সহকর্মী দৌড়ে এসে তাৎক্ষণিক তার শরীর থেকে আগুন নিভাতে সক্ষম হয়। তার অবস্থায় আশংকা জনক দেখে উপস্থিত লোকজন সি এনজি যোগে আল আমিনকে নাসিরনগর হাসপাতালে নিয়া আসে। আল আমিনের অবস্থায় আশংকা জনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ও প্লাষ্টিক সার্জারী বিভাগে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় ১০ মে বিকাল সাড়ে তিন ঘটিকার সময় আল আমিনের মৃত্যু হয়।
পরে ১১ মে ২০১৬ইং তারিখে ঢাকার শাহবাগ থানার জিডি নং- ৬৫৩ মূলে নিহতের দেহের সুরতহাল ও ময়না তদন্ত শেষে নিজ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে জানাযা শেষে লাশের দাফন সমপন্ন করা হয়। ওই ঘটনার প্রায় ৬০ দিন পর নিহতের পিতা কুখ্যাত গরু চোর মোঃ আনিছ মিয়া বাদী হয়ে ১০ জনকে আসামী করে আদালতে মিথ্যা খুনের মামলা দায়ের করে বলে জানান অভিযোগকারীরা।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে এফ আই আর রূপে গন্য করে লাখাই থানাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
অভিযোগকারীরা জানান, মামলার বাদী এলাকার একজন কুখ্যাত গরু চোর। তার নামে কালিউতা গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম বাদী হয়ে নাসিরনগর থানায় গরু চুরির মামলা দায়ের করে যাহা থানার গরু চুরির মামলা নং- জি আর ১৬৪/১০। উক্ত মামলায় বাদী আনিছ মিয়া ৭নং আসামী। থানা পুলিশের এস আই মুসলেউদ্দিন মামলাটি তদন্ত পূর্বক ঘটনা সত্য প্রমানিত হওয়ায় খুনের মামলার বাদী ও গরু চুরির মামলার ৭নং আসামী আনিছ মিয়া সহ আট জনের বিরুদ্ধে বিচার প্রার্থনা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে চার্জসিট প্রেরণ করে। মামলা আসামীরা জানায় বাদী এলাকার কুখ্যাত গরু চোর। এলাকার সহজ সরল নিরীহ লোকদের নামে মিথ্যা মামলা সৃষ্টি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া তার নেশা ও পেশা।
এ বিষয়ে মামলার বাদী আনিছ মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান আসামীরা মাটি কাটার দালাল। তারা যোগসাজশে আমার ছেলেকে সেখানে নেয়। আমার ছেলে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর আমি অনেক টাকা খরচ করে চিকিৎসা করি। আসামীরা দীর্ঘ দুই মাস কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। আমি সামাজিক বিচার না পেয়ে ন্যায় বিচারের জন্য আদালতে মামলা করি।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে লাখাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোজাম্মেল হক জানান এখনও থানায় কোন মামলা আসেনি। মামলা আসার পর তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উৎঘাটন করা হবে।