Main Menu

নাসিরনগর পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে অনিয়মের মহোৎসব। সুদের টাকায় ভৌতিক বিল পরিশোধ।

+100%-

এম.ডি.মুরাদ মৃধা, নাসিরনগর হতেঃ নাসিরনগরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভৌতিক বিলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বিদ্যুতের গ্রাহকরা। চলতি মাসের বিলের সঙ্গে বকেয়া বিল নামে অতিরিক্ত বিল পেয়ে হতবাক হয়েছেন গ্রাহকরা। যাদের বকেয়া নেই তাদেরও বিলের সঙ্গে জরিমানাসহ বকেয়া বিল যোগ হয়েছে। এ অবস্থায় নিয়মিত বিল পরিশোধকারীরা চলতি মাসের বিল পরিশোধ করতে অফিসে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেকে না বুঝে পরিশোধ করা বিল ফের পরিশোধ করছেন। অনেকে অফিসে গিয়ে জড়িয়ে পড়ছেন বাকবিতণ্ডায়। এ ছাড়া অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেন, অনেকেরই নিয়মিত মাসিক বিল পরিশোধ থাকলেও হঠাৎ তাদের কয়েকগুণ বেশি বিলের রসিদ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ এক মাস দশ দিন পর্যন্ত। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এক কর্মচারী মিটারের রিডিং নিয়েছে জিরো জিরো। অথচ আমার নামে বিল এসেছে ৪৩০০ টাকা। মিটারে রিডিং জিরো জিরো অথচ বিল আসছে ৪৩০০ টাকা! এটা কেমন করে হল জানতে চাইলে নাসিরনগর অফিসের এজিএম বলেন আমি আপনার বিল ঠিক করে দিব। এটা সফটওয়ারের সমস্যা। গত তিন মাস যাবৎ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ঘুরেও কোন সুরহা হয়নি এই ভৌতিক বিলের। এই অভিযোগ করেন নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম.এ.হান্নান।

নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের দাতঁমন্ডল গ্রামের ছায়েদুল হক অভিযোগ করে বলেন, আমার মিটার নং ০১৫৭৭। হিসাব নম্বর ২৮০০। আমার কাছে ১৩/১০/২০১৭ সালে একটি বিল আসে যার মোট বিল ২৩৯ টাকা। দুদিন পর আবার একটি বিল পরিশোধের কাগজ আসে। যাহাতে ২৩৯ টাকা মোট বিল উল্লেখ করা হয়। আমি একমাসে দুবার বিল পরিশোধের কথা জানতে চাইলে আমার বাসার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকী দেয় অফিসের বড় কর্তা। কোন উপায় না পেয়ে আমি এক মাসে দুবার বিল পরিশোধ করি।

পূর্ভভাগ ইউনিয়নের ভূবন গ্রামের মুসা মিয়া বলেন গতবারের নভেম্বর মাসে আমার বিদ্যুৎ বিল আসে ২০০ টাকা। প্রতি মাসের গড়ে আমার বিদ্যুৎ বিল আসে ১৯০/২০০ এর মধ্যে অথচ ডিসেম্বর মাসে আমার নামে বিল আসে ৭৩২৯ টাকা। আমি গরীব মানুষ এত টাকা কোথায় থেকে দিব। এজিএম স্যারের সাথে কথা বলেও কোন লাভ হয়নি। তিনি বলছেন বিল পরিশোধ না করলে লাইন কাইটা দিব। তাই কোন উপায় না পেয়ে সুদের উপর টাকা এনে বিদ্যুৎ এর টাকা পরিশোধ করছি।

কুলিকুন্ডা গ্রামের জাহাঙ্গীর মোল্লা বলেন, আমার চাচাীর বাসায় প্রতি মাসে ৩০০/৩৫০ টাকা বিল আসে। গত মাসে হঠাৎ করেই ৩০০০ হাজার টাকা বিল চলে আসে। অফিসে যেগাযোগ করলে এজিএম বলেন আপনি পুকুরে মাছ চাষের জন্য নতুন তিনটি লাইট ব্যবহার করছেন। তখন গ্রাহক জানান যে আমি আপনাদের অফিসে অনুমতি নিয়ে সাব মিটার ব্যবহার করছি এবং যা বিল আসছে তা পরিশোধ করেছি। তখন উত্তেজিত হয়ে এজিএম বলেন আপনি সাবমিটার ব্যবহারের কারনে দশ হাজার টাকা জরিমানা দিবেন। আর জরিমানা ও বিল পরিশোধ না করলে আজই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিব।

নাসিরনগর সদরে দত্ত পাড়া আব্দুল হালিম মৃধার জানুয়ারী মাসে মোট বিদ্যুৎ বিল ৪৫০ টাকা পরিশোধ করেন। ফেব্রুয়ারী মাসে উক্ত ৪৫০ টাকা বকেয়া দেখিয়ে মোট বিল করে ২৯০০ টাকা। অফিসে গিয়ে প্রতিবাদ করলে আসল তথ্য বের হয়ে আসে। পূর্বের কোন বকেয়াই ছিলনা। পরে এজিএম ক্ষমা চেয়ে নতুন বিল করে দেন ৪৭০ টাকার।

সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে জানা যায়,পল্লী বিদ্যুৎ এর লোকজন বাড়িতে না গিয়ে অফিসে বসেই বিল করছেন। একই ব্যক্তির নামে এক মাসের বিল দু’বার করছে। কখনও কখনও তিনবার করা হচ্ছে। বিলের কাগজ অফিসে নিয়ে প্রতিবাদ করলে গ্রহকদের হয়রানি হতে হচ্ছে। এমনি বিভিন্ন ভাবে লান্চিত হতে হচ্ছে। এমনই অভিযোগের পাহাড় নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারী কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রী সাহেব মারা যাবার পর নাসিরনগরে বিদ্যুৎ নিয়ে বিটলামী শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম কে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন না। বিদ্যুৎ এর এমন বেহাল দশা দেখার যেন কেউ নেই। বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারীদের দাপটে গ্রাহকরা এখন দিশেহারা। না পারছে কইতে না পারছে সইতে। নাসিরনগরের ১৩ টি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ এর একই অবস্থা।

নাসিরনগর সদরে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দেয়ার কথা বলে আলাদা লাইন সংযোগ দেয়ার পরও গ্রাহক বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। বিদ্যুৎ এর এমন বেহাল অবস্থার জন্য গ্রাহকরা সরাসরি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির এজিএমকে দূষারুপ করছে। যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরণের বিষ্ফোরণ। সাধারণ মানুষ চরম ভাবে ক্ষিপ্ত পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির লোকদের উপর।
ধরমন্ডল ইউনিয়নের বাসিন্দা জালাল উদ্দিন বলেন সারাদিনে বিদ্যুৎ থাকে ১ ঘন্টা। আর রাতে বিদ্যুৎ আসেনা বললেই চলে। তিনি আরও বলেন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের অভিযোগ কেন্দ্রের নাম্বারে ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। আর এজিএমের নাম্বারে ফোন করলে ফোন রিসিভ করে গাল মন্দ করে। থানায় মামলা করার হুমকীও দেয়।
নাসিরনগরে বিদ্যুৎ কখন আসে আর কখন যা তাহা একমাত্র বিদ্যুৎ অফিসই ভাল বলতে পারবে। সমগ্র উপজেলাতে শুক্রবার এবং শনিবারে সারাদিন বিদ্যুৎ থাকেনা । অথচ কোন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলে তাহা গ্রাকের অবগতির জন্য স্থানীয় ভাবে মাইকিং করার কথা। কিন্তু নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকজন চলছে তাদের নিজেদের মনগড়া নিয়মে।

ভলাকুট হতে রায়হান আহম্মদ বলেন, চাতলপাড়,ভলাকুট,গোয়ালনগর এই তিন ইউনিয়ন হল হাওর বেষ্টিত। আমাদের তিন ইউনিয়নে সারাদিনে ২/৩ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে। সন্ধ্যার পর স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়তে পারেনা। রাতে কখনোও ১ টা আবার ৩ টায় বিদ্যুৎ আসে। তখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। তাই আমাদের পড়া-লেখার খুব সমস্যা হচ্ছে।

গোপন সূত্রে জানা যায়, গ্রাহকদের মাঝে মিটার সাপ্লাই বাণিজ্যও খুব জমজমাট বলে জানা গেছে। জায়গা-জমির কাগজ দু’নম্বরী করে কিভাবে আবেদন করতে হয় বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু লাইনম্যান তা হাতে-কলমে শিখিয়ে দিচ্ছে এবং সরকারি মূল্যের চেয়ে তিন-চারগুন বেশি টাকা নিয়ে মাসের পর মাস হয়রানী করছে গ্রাহকদের।

এ ব্যাপারে নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম নজরুল ইসলাম জানান, আমাদের এখানে সফটওয়্যার এর কিছু সমস্যা আছে। খুব শিগ্রই এ সমস্যার সমাধান হবে। তিনি আরও বলেন যাদের পূর্বের বকেয়া ছিল তাদের কিছু সমস্যা হচ্ছে। শুক্রবার ও শনিবারে বিদ্যুৎ না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ত্রিশ কেবির কাজ চলছে। কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে।






Shares