আলোচিত যুদ্ধাপরাধী লিয়াকত পালিয়ে গেছে
মোঃ আব্দুল হান্নান, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঃ হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার মোড়াকরি ইউপি চেয়ারম্যান, আলোচিত যুদ্ধাপরাধী ও আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ লিয়াকত আলী গোপনে ভারতের উদ্দেশ্যে পালিয়ে গেছে বলে জানা যায়। ১৯৭১ সালে হবিগঞ্জের কৃষ্ণপুরে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১২৭ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের অনেক নিরীহ নারী পুরষকে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাতের অভিযোগ রয়েছে তার নামে। তার পালিয়ে যাওয়ার খবর এলাকা ছড়িয়ে পড়েছে। এই নিয়ে উভয় এলাকায় বইছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। ইতিমধ্যে তারই অনুগত মোড়াকরি ও কৃষ্ণপুর এলাকায় কতিপয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে ও রাজাকারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার স্বাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন সহ প্রাণে হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে জনৈক প্রভাত রায় সহ অন্তত ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে এ নিয়ে সোমবার জেলার লাখাই থানায় একটি জিডি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল তদন্তসংস্থা কর্তৃক রাজাকার লিয়াকত বাহিনীর বিরুদ্ধে। ৭১’এর মানবতা বিরোধী অপকর্ম নিয়ে অনুসন্ধান চালানোর সংশ্লিষ্ট মামলার অন্যতম স্বাক্ষী কৃষ্ণপুর গ্রামের নিপেন কৃষ্ণ রায়। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন একই গ্রামের বাসিন্দা রুপক রায়, রাজীব, সেবক রায়, বাপ্পী, সুশীল রায়, হরি রায়, জুয়েল, সনদ রায়, সরবন্দিু রায়, অভিযোগে উল্লেখ করা হয় ২০১০ সালে ঐ রাজাকার কমান্ডারের বিরুদ্ধে গঙ্গানগর রেজিষ্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হরিদাস রায় বাদী হয়ে মামলা করলে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি সংশ্লিষ্ট ট্রাইবুন্যালে প্রেরণ করেন। এই মামলায় অন্যদের সাথে নিপেন কৃষ্ণ রায় ও একজন স্বাক্ষী। ফলে লিয়াকতের বিরুদ্ধে অমল কৃষ্ণ রায় ও নিপেন কৃষ্ণ রায় স্বাক্ষী দেবে এমনটি বুঝতে পেরেই যুদ্ধাপরাধীদের গংদের যোগসাজশে প্রভাত রায় ও তার দলবল স্বাক্ষী না দিতে ভয়ভীতি প্রদর্শন সহ হত্যার হুমকি দিতে থাকে। ২৭ মার্চ স্বাক্ষীদের নিকট ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবী, অমল রায়ের ভাই কোলকাতা নিবাসী কল্যাণ রায়ের কৃষ্ণপুরস্থ বসতবাড়ি দখল ও বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। ওই ঘটনায় মামলা হলে আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসে আসামীরা। একই দিন সন্ধ্যায় ৭ টায় রাজাকার লিয়াকতের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত গণহত্যার মামলায় স্বাক্ষী না দিতে নিপেন রায়কে হত্যার হুমকি দেয় অভিযুক্ত আসামীরা। তাছাড়া নিপেন রায়ের বাড়িতে ইট, পাটকেল নিক্ষেপ করে। স্বপরিবারকে দেশ ছাড়ার হুমকি দেয়। মামলার সকল স্বাক্ষীদের প্রাণ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের কাছে দাবী জানিয়েছেন অত্যাচারের শিকার লোকজন। পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে জানা গেছে। সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে ঐ মামলার তদন্ত কার্যক্রম চালাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন ট্রাইবুন্যালে তদন্তসংস্থার প্রধান আইজিপি মোঃ আবদুল হান্নান খান, পিপিএম’র নেতৃত্বে গত ২৩ এপ্রিল হবিগঞ্জের ৪ সদস্যের একটি টিম আসে। ২৪ এপ্রিল ঐ মামলার কার্যক্রম ও ৭১’র মানবতাবিরোধী অপরাধ সম্পর্কিত নানা বিষয়াদি নিয়ে জেলার লাখাই উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় আইজিপি আবদুল হান্নান খান ঘোষণা দেন ঐ মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তাদের দুসরদের বিরুদ্ধে সত্যতা প্রমাণিত হলে বিচারের সম্মুখীন করা হবে। জানা গেছে ঐ দিন দুপুরে লিয়াকত বাহিনী কর্তৃক অপকর্মের সন্ধানে হবিগঞ্জের কৃষ্ণপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলাধীন ফান্দাউক এলাকায় ব্যাপক অনুসন্ধান চালান তদন্ত সংস্থার এই টিম। তদন্তকারী লোকজনের কাছে এলাকার নারী পুরষ সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ৭১’ সালে লিয়াকত বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তদন্তকারী টিম এসময় স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ ভিডিও ফুটেজ ও সংশ্লিষ্ট এলাকার স্ক্যাচম্যাপ গ্রহণ ও বদ্যভূমি সহ সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করেন। সূত্র জানায় এই তদন্তকারীর টিমের গুরুত্ব বুঝতে পেরেই গ্রেফতার থেকে রক্ষা পেতে বিকেলে লিয়াকত আলী তার মোড়াকরি বাড়ি থেকে অত্যন্ত গোপনে ভারতের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যান।