Main Menu

নাসিরনগরে মৃত্যুর গুজবে প্রতিপক্ষের বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট

+100%-

নিজস্ব প্রতিবেদক::  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক যুবকের মৃত্যুর গুজবকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অন্তত ১০টি বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়।
প্রসঙ্গতঃ গত ২০ এপ্রিল দৈনিক সমকাল পত্রিকার অনলাইনে ‘ নাসিরনগরে ধান মাড়াইকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ৬৫’ ২৫ এপ্রিল ‘ নাসিরনগরে পুলিশের উপর হামলা, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার’ ও ‘ নাসিরনগরের যুবলীগ নেতা আমিনুল দল থেকে বহিস্কার’ শিরোনামে তিনটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এলাকাবাসী ও পুলিশের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতমাসে উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের জেঠাগ্রামের সূচীউড়া গ্রামের নাগর গোষ্ঠি ও বড়বাড়ির গোষ্ঠির লোকজনের মধ্যে তিতাস নদীর পাড়ে ধান মাড়াইকে কেন্দ্র করে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশসহ ৬৫ জন আহত হয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক (সাময়িক বহিস্কৃত) আমিনুল ইসলাম বেলায়েতকে প্রধান আসামী করে মামলা করে। ওই মামলার পর থেকেই এলাকায় পুরুষ শূন্য।

গতকাল রাত ৯টার সময় ওই মামলার আসামী ধরতে উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নে যায় পুলিশ। তখন শাহাবুদ্দিন নামে একজন পুলিশকে আসামী ধরতে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। আসামী ইসাক মিয়ার বাড়িতে গেলে পুলিশের উপস্থিতিতে শাহাবুদ্দিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ওই যুবকের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে শাহাবুদ্দিনের পক্ষের লোকজন দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসামী পক্ষের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এ সময় হামলায় বেশ কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন ।

এর পর ২ জুন সকালবেলা আবার শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। খবর পেয়ে আবারো পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উভয় পক্ষের লোকজন চৈয়ারকুড়ি বাজারের তিতাস নদীর পাড়ে দেশিয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছে। এলাকায় উত্ত্যেজনা বিরাজ করছে।

ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষের রুসেনা বেগম (৭০) জানায়, রাত ১১টার সময় আমরা ঘুমে ছিলাম। হঠাৎ করে দেখি কিছু লোক বাড়িতে হামলা করেছে। ঘরের ভিতর প্রবেশ করে ২ ভরি স্বর্ণ ও ৪টি গরু ও ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। গোকর্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণির চাত্রী নুসরাত জাহান নিপা বলেন, আমি ঘরে পড়তেছিলাম। তখন দেখি শত শত লোক ঘরে ভাঙচুর করছে। আমাদের সব কিছু লুট করে নিছে। হুসনা বেগম বলেন, আমার ঘরের কয়েকজন ডুকে আমার ছেলের গলায় ছুরি ধরে ১টি ফ্রিজ, আট বস্তা চাল, ২ লাখ নগদ টাকা নিয়ে গেছে। কাজল রেখা নামে একজন বলেন, পুলিশের মামলার কারণে ঘরে পুরুষ না থাকায় ঘরের চাল, ধান ও নগদ টাকাসহ বাড়ির দলিল নিয়ে গেছে। আমার ছোট দুটি মেয়েকে ৪ ঘন্টা পুকুরের পানিতে দাঁড় করিয়ে রাখে তারা। এ ছাড়াও যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেতু মিয়া, ইসহাক, আশিক, কামাল, কালা মিয়া, মিলন, সেলিম, টেনু মিয়া, আঃ রউফ, হাবিবুর রহমান, ছেতন আলী, মাসুক, জীবন ও লিটন মিয়ার পরিবারের লোকজন জানান, প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের বসতঘরে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। হামলাকারীরা আমাদের গরু,ফ্রিজ, টিভি, টাকা পয়সা, ও স¦র্ণালস্কার লুট করে নিয়ে যায়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক ছোয়াব আহমেদ হৃতুল হামলা ও লুটপাটের কথা স্বীকার করে জানান, নিহত হওয়ার গুজবে রাতে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর ঘটনা ঘটেছে তবে কে কার বাড়ি হামলা বা লুটপাট করেছে তা বলা মুশকিল। পুলিশসহ আমি বেশ কিছু বাড়িঘর পরিদর্শন করে দেখেছি।
নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্মা সাজেদুর রহমান জানান, গতকাল রাতে শাহাবুদ্দিন নামে একজনকে পিটিয়ে জখম করে। পরে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বাড়িঘরে ভাঙচুর চালায়। তিনি আরো জানান, পূর্ব শত্রুতা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এর জেরে গতমাসের ২০ এপ্রিল দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ ৬৫ জন আহত হয়। পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।






Shares