রহিম ভেবে করিমকে গ্রেপ্তার করে ফেলেছি -সরাইল থানা
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল : সাজাপ্রাপ্ত আসামী রহিম। টার্গেট ছিল যে কোন ভাবে তাকে গ্রেপ্তার করা। রহিম ভেবে ভুলক্রমে করিম নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে এসেছি। এসে দেখি নামে অমিল। তার ভাই ও স্বজনরা ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে থানায় আসেন। পরে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কথা গুলো গত বৃহস্পতিবার রাতে মুঠোফোনে বললেন সরাইল থানার এ এস আই মিজানুর রহমান। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার চুন্টা বাজার থেকে নিরপরাধ নির্দোশ ব্যক্তি আকিবুর রহমান (৪৭) কে গ্রেপ্তারের পর ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে পুলিশ এসব কথা বলেন। কিন্তু আকিবুর ও তার পরিবারের লোকজনের অভিযোগ পুলিশ কি পারবে আকিবুরের হারানো সম্মান ফিরিয়ে দিতে? পারবে কি সামাজিক সমালোচনার উত্তর দিতে? কোনটাই পারবেন না তারা। তবে সমাজের শান্ত ও ভদ্র হিসেবে পরিচিত আকিবুরের এ অপমানের দায় কার! পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, রাত সাড়ে সাতটা। করাতকান্দি গ্রামের রহিম বক্সের ছেলে আকিবুর চুন্টা বাজারে বসে চা পান করছিল। সরাইল থানার এ এস আই মিজানুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘিরে ফেলে আকিবুরকে। কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে গ্রেপ্তার করে ফেলে। দ্রুত সিএনজি অটোরিক্সায় উঠায়। এ সময় ইউপি যুবলীগের সভাপতি মোঃ মনির হোসেন, ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ এখলাছ সহ একাধিক শিক্ষক পুলিশের কাছে অনুরোধ করে বলেন, আকিবুর কোন আসামী নয়। সে নিরীহ ও শান্ত প্রকৃতির লোক। কোথাও কোন ভুল হয়েছে। তাকে ছেড়ে দিন। নতুবা যাচাই করুন। তাদের কথা আমলে নেয়নি পুলিশ। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বলেই দ্রুত আকিবুরকে নিয়ে আসেন থানায়। পরে চুন্টা এলাকার অর্ধশতাধিক লোক থানায় আসেন। থানায় এসে তারা জানতে পারেন একই গ্রামের কুদরত আলীর ছেলে দুধ মিয়া (৩০)। অনেক দিন পূর্বে স্ত্রীর দায়ের করা মামলার সে সাজাপ্রাপ্ত আসামী। দুধ মিয়া বর্তমানে প্রবাসে রয়েছেন। আকিবুরকে দুধ মিয়া মনে করেই সকল আকুতিকে পেছনে ফেলে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছে। তার ভোটার আইডি কার্ড প্রদর্শনের পর পুলিশ নিশ্চিত হয়। পরে সাদা কাগজে ফুল মিয়া মাষ্টার সহ ওই গ্রামের সাত ব্যক্তির স্বাক্ষর রেখে এক ঘন্টা পর থানা থেকে আকিবুরকে ছাড় দেওয়া হয়। মনির হোসেন ও শেখ এখলাছ আক্ষেপ করে বলেন, ভুল করল পুলিশ আর সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে হল এলাকার লোকজনের। হায়রে পুলিশি আইন! চুন্টা গ্রামের বাসিন্ধা প্রত্যক্ষদর্শী আবদুর রশিদ বলেন, ফেরারি মামলার আসামী ধরে আট হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ। গ্রেপ্তারী পরোয়ানার কত আসামী বাজারে সরাইলে প্রকাশ্যে ঘুরছে। আর নিরপরাধ একটা লোককে অযথা ধরে নিয়ে গেল। কারো কথা শুনল না। বুঝলাম না। চুন্টা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, জুয়া ও মাদকের সাথে জড়িত সোর্স ফুল মিয়া (৩৫) ও ৭ নং ওয়ার্ডের চৌকিদার আবদুর রশিদের ইন্ধনে মিজান দারোগা এ কাজটি করেছেন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর দারোগা নির্দোশ লোকটিকে ধরে নিয়ে গেল। পরে রাতেই করাতকান্দি গ্রামের পাঁচ শতাধিক লোক আমার অফিস ঘেরাও করে ফেলেছে। আকিবুরের আইডি কার্ড থানায় পাঠিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে। পুলিশ এ কাজটি মোটেও ঠিক করেনি। এ এস আই মিজানুর রহমান নিজের ভুল স্বীকার করে উদাহরন দিয়ে বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামী ধরতে গিয়েছিলাম। রহিম ভেবে করিমকে গ্রেপ্তার করে ফেলেছি। পরে বুঝতে পেরে থানা থেকে ছেড়ে দিয়েছি।