ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার আসামী নয় মাস পর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেলেন
প্রতিনিধিঃ সরাইলে গতকাল রোববার সকালে পুলিশ প্রহরায় অনুষ্ঠিত হয়েছে উপজেলা সমন্বয় সভা। দীর্ঘ নয় মাস পর ওই সভায় যোগদানের মাধ্যমে ফের সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেলেন আবদুল জব্বার। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ কাজল মিয়া ও আবদুল জব্বারের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কায় সকাল থেকেই প্রশাসন ছিল সতর্ক অবস্থায়। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২১ অক্টোবর আওয়ামীলীগ নেতা ইকবাল আজাদ হত্যার ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল জব্বারকে ৪ নং আসামী করা হয়। পরে ফেরার হয়ে যান তিনি। এ বছরের ৭ জানুয়ারী আদালতে আত্মসমর্পন করেন। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়। ২২ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে জামিনে বেড়িয়ে আসেন তিনি। মামলার অভিযোগ পত্র বিজ্ঞ আদালতে গৃহিত হওয়ার কারন দেখিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব মোছাঃ কামরুন্নাহার স্বাক্ষরিত পত্র মারফর গত ১০ জুন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার জন্য ২৪ জুন হাইকোর্টে রীট করেন আবদুল জব্বার। রীট গ্রহন করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শুনানী শেষে গত ২৭ জুন আবদুল জব্বারের পক্ষে রায় দেন। রায়ের কপি পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক জিপির মতামতের প্রেক্ষিতে আবদুল জব্বারকে সদর ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গত ২১ জুলাই সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট পত্র প্রেরন করেন। ২২ জুলাই নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল জব্বারকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ কাজল মিয়াকে পত্র দেন। সেই সাথে উপজেলার বিভিন্ন দফতরে পত্র প্রেরন করেন। পত্র পাওয়ার পর দায়িত্ব ছাড়েননি কাজল মিয়া। তার মতে বিষয়টি বিধি সম্মত হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে। ২২ ও ২৩ জুলাই পরিষদ ছিল চেয়ারম্যান শুন্য। ২৭ জুন আবদুল জব্বারের পক্ষে দেয়া হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে গত ২৪ জুলাই সুপ্রীমকোর্টে আপিল করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাজল মিয়া। বিষয়টিকে কেন্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে সরাইল সদরে বিরাজ করছিল টানটান উত্তেজনা। স্থানীয়দের ধারনা চেয়ারম্যানের দায়িত্বকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় উভয় পক্ষের লোকজন বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে। গতকাল রোববার উপজেলা সমন্বয় সভায় সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে কে যোগ দিবে। এটা ছিল গোটা সরাইলের প্রধান আলোচ্য বিষয়। আইন শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় পুলিশ প্রশাসন ছিল অত্যন্ত সতর্ক। সকাল থেকেই পর্যাপ্ত পরিমান পুলিশ অবস্থান নিয়েছে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদ চত্বরে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে উভয় চেয়ারম্যানের সহস্রাধিক সমর্থক অবস্থান নেয় উপজেলা চত্বরে। নির্বাহী কর্মকর্তা তার দফতরে বসে দুই চেয়ারম্যানের সাথে আইনি বিষয়ে কথা বলে বিষয়টির নিস্পত্তি করেন। সকাল সাড়ে এগারটায় নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল জব্বারকে সাথে নিয়ে সমন্বয় সভায় প্রবেশ করেন। সভা চলাকালে বাহিরে পুলিশ অবস্থান করছিল। সভা শেষে দুপুর দুইটায় পুলিশ প্রহরায় আবদুল জব্বারকে নিয়ে আসা হয় ইউনিয়ন পরিষদে। তিনি বসেন চেয়ারম্যানের আসনে। চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার বলেন, ২২ জুলাই থেকে আমি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার কথা থাকলেও সংঘাত এড়াতে আজ (রোববার) প্রশাসনের সহায়তায় দায়িত্ব বুঝে নিয়েছি। সংঘাত নয়, আমি শান্তি চাই। সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ কাজল মিয়া বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তার আইনি ব্যাখ্যায় আমি সন্তুষ্ট। পরবর্তীতে আদালতের যে কোন রায় আমি মেনে নিব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমি গত ২২ জুলাই আবদুল জব্বারকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব বুঝে নিতে পত্র দিয়েছি। |