প্রতিবন্ধির বুকফাঁটা আর্তনাদ
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল থেকে :: নাম শাহনেওয়াজ। বয়স ৪১ বছর। উপজেলার দেওড়া পশ্চিম পাড়ার আব্দুল জাহেরের তৃতীয় ছেলে। বিধির বিধান জন্ম থেকেই সে প্রতিবন্ধি। তার দুটো পা অচল। দাঁড়ানোরই ক্ষমতা নেই। চলাফেরায় হুইল চেয়ারই তার ভরসা।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ২ সন্তানের জনক শাহনেওয়াজের জীবন এক সময় ছিল খুবই সঙ্কটাপন্ন। নিজের কোন কাজ করার ক্ষমতা নেই। তারপর স্ত্রী সন্তানদের ভরনপোষণ। পিছু হটেনি এই প্রতিবন্ধি। সংসারের তিন বেলার আহার, জামা কাপড় ও সন্তানদের পড়া লেখা ভীষন ভাবিয়ে তুলে তাকে। গত ৭-৮ বছর আগে নিজের ভাগের সম্পত্তি বিক্রি করে ২টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ক্রয় করে শাহনেওয়াজ। দৈনিক ভাড়া পায় ৫’শ টাকা করে। জীবিকা নির্বাহের একটি পথ তৈরী করে। মোটামুটি ভাল ভাবেই চলছিল তার প্রাত্যহিক জীবন। বছরদিন আগে সরকারি সিদ্ধান্তে মহাসড়কে বন্ধ হয়ে যায় অটোরিকশা চলাচল। হঠাৎ করে রোজগার কমে যায়। ১ হাজার থেকে নেমে হয় ৬’শ টাকা। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এ সময়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে তার। তারপর ও কোন রকমে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে শাহনেওয়াজ। গত বুধবার গভীর রাতে আচমকা এক ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে যায় এ প্রতিবন্ধির জীবন। ওইদিন সন্ধ্যার পর ১টি অটোরিকশা তার উঠানে রেখে গেইট তালা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে উঠে দেখে তালা ভেঙ্গে তার একমাত্র ভরসা ওই সিএনজিটি নিয়ে গেছে চুরে।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে শাহনেওয়াজ। গোটা পরিবারটি এখন অন্ধকার দেখছে। দৈনিক আয় তো দূরের কথা ৩ লাখ টাকা মূল্যের গাড়িটি চুরি হয়ে গেল। তার মত প্রতিবন্ধির জন্য এটা মহাপ্রলয়। শাহনেওয়াজ ঘুরছে আর কাঁদছে। তার বুকফাঁটা আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে পরিবেশ। “আমি অসহায় মানুষের গাড়িডা কেন চুরি করলে? কার এমন ধর্মে লইল? আমি অহন কৈ যামু? আমার পোলা ফাইন অহন কি হাইব? সংসারটা কেমনে চলব? হে আল্লাহ তুমি আমডারে বাচাও।”
শাহনেওয়াজ গত ১৮ আগষ্ট সরাইল থানায় এ ঘটনায় একটি এজহার দায়ের করেছেন। দিশেহারা এ প্রতিবন্ধির এমন আর্তনাদে অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না। কিন্তু করার তো কিছুই নেই। সমাজের কোন বিত্তবান লোক এ মূহুর্তে প্রতিবন্ধি শাহনেওয়াজের পাশে দাঁড়ালে হয়ত তার পরিবারটি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। প্রসঙ্গত: সম্প্রতি দেওড়া গ্রামে সিএনজি চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েকদিন পূর্বে মিন্টু মিয়ার বাড়ি থেকে একই কায়দায় ২টি সিএনজি চুরি হয়েছে। মামলা ও হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মেঘুর হাটির হুর মিয়ার ছেলে শাহিন (৩৭)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঘটনার পর আরো কয়েকজন ঘা ঢাকা দিয়েছে। স্থানীয় লোকজনের ধারনা গ্রামে এ ধরনের চুরির একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। বাহির থেকে কিছু লোক ভাড়ায় এনে গ্রামের কিছু চোর এ কাজগুলো করছে। ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, শাহনেওয়াজ এখন রাস্তায় বসার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয় কয়েকজনের মাধ্যমে গ্রামে নানা অপকর্ম করার জন্য একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে কিছু মাদকাসক্ত ও ব্যবসায়িও রয়েছে। এমন আভাস পেয়েছি। পুলিশ আরো তৎপর না হলে এসব অপকর্মের শেকড় উৎপাটন করা যাবে না।