অনিয়মের অভিযোগে ডাক্তার নোমানকে বদলি করা হয়েছে খাগড়াছড়ি



সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: অবশেষে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মো. নোমান মিয়াকে বদলি করা হয়েছে খাগড়াছড়িতে। ১৮ চিকিৎসকের কক্সবাজার ভ্রমনের খরচ মেটানোর জন্য স্থানীয় বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করার দায়ে কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নিয়েছে।
গত বুধবার সন্ধ্যায় তিনি বদলির আদেশ হাতে পেয়েছেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তাকে নির্দেশিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করতে হবে। তবে এ আদেশ স্থগিত করার জন্য তিনি দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
পত্রিকার রিপোর্টে ক্ষুদ্ধ হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঔষধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার রাতে হাসপাতালের ১৮ চিকিৎসকসহ তাঁদের পরিবারের আরো ২০-২২ সদস্য বিলাস বহুল শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাসে চড়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে সরাইল ছাড়েন। আর এ ভ্রমণের জন্য তাঁরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করেন নি। ভ্রমণের টাকা তাঁরা ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের (এমআর) কাছ থেকে জুগিয়েছেন। বেশ কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) এ ঘটনায় হাসপাতালের ১৭ চিকিৎসককে শোকজ করেন। আর পত্রিকায় টাকা প্রাপ্তির স্বীকারের পর ধন্যবাদ পত্র ও এমআর’দের দেয়া “ত্রিশ হাজার টাকা বুঝিয়া পাইলাম” লিখা টোকেন পত্রিকায় ছাপায় চিকিৎসকদের সন্দেহের তীর যায় এমআর’দের দিকে। তাদের উপর চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
গত মঙ্গলবার থেকে এমআরদের হাসপাতালে প্রবেশে জারি করা হয় নিষেধাজ্ঞা। সপ্তাহে প্রত্যেকদিন চিকিৎসক ভিজিটের সুযোগ রহিত করা হয়। ইউএইচও স্বাক্ষরিত এক লিখিত নোটিশে সপ্তাহে মাত্র দুইদিন হাসপাতালে প্রবেশের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া দেয়। তাও আবার দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত। কর্তৃপক্ষের লিখিত এ আদেশটি জরুরী বিভাগ সহ একাধিক জায়গায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট প্রকাশের পর চিকিৎসকদের ভয়ে এমআর’রা অজানা আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছেন। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ রিপোর্ট প্রকাশের পরই কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ইকবাল হুসাইনকে প্রধান করে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন স্বাক্ষরিত এক পত্রে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গত বুধবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত হাসপাতালে চলে তদন্ত। তদন্ত কমিটি ডা. নোমান মিয়া সহ ১৭ চিকিৎসকের সাথে কথা বলেন।
সন্ধ্যায় ডা. নোমান মিয়ার হাতে পৌঁছে বদলির পত্র। তার নেতৃত্বে বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে কক্সবাজার ভ্রমনে যাওয়ার চাঁদা আদায়ের মত অনিয়মের কারনে তাকে খাগড়াছড়ি জেলার রামঘর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তাকে সেখানে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত: ডা. নোমানের একাধিক নাম সর্বস্ব প্রাইভেট ক্লিনিক মালিকদের সাথে সখ্যতা, নানা অনিয়ম দূর্নীতির পাশাপাশি গোপনে জামাত প্রীতি ও কানেশনের বিষয়টি এখন গোটা সরাইলে চাউর হচ্ছে।
ওদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরাইল হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী জানান, ডা. নোমান মিয়া বদলির এ আদেশ স্থগিত করার জন্য শিঘ্রই ঢাকা যাওয়ার কথা বলেছেন। তিনি যে করেই হউক এ বদলি ঠেকানোর ঘোষনা দিয়েছেন। সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডা. হাসিনা আখতার বেগম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে ডা. নোমান মিয়া সরাইল হাসপাতাল থেকে চলে যাবেন।