Main Menu

আজ প্রলয়ঙ্করী টর্নেডোর এক বছর ,এখনো মোছেনি টর্নেডোর ক্ষত!

+100%-

সঞ্জয় কর্মকার :: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়াল টর্নেডোর এক বছর পূর্ণ হল। গত বছরের ২২ মার্চ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে হঠাৎ পশ্চিম দিক থেকে লাল-কালো রঙের দমকা হাওয়া প্রচণ্ড গতিবেগে ধেয়ে আসে  ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার ৩০টি গ্রামকে নিশ্চির্ণ করে দেয় প্রলয়ঙ্করী এই টর্নেডো। এক বছর পরও প্রলয়ঙ্করী টর্নেডোর ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে ওই এলাকার বাসিন্দারা।

গত বছর এই দিনে মাত্র তিন-চার মিনিটের মধ্যে ভয়াল টর্নেডোর আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল কয়েকটি গ্রামের হাজারও ঘরবাড়ি, গাছপালা, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন স্থাপনা। কিছুক্ষণ পর সেখানে ধ্বংসস্তূপ আর মরদেহ ছাড়া কিছুই দেখা যায়নি।

সে দিনের প্রলয়ঙ্করী ওই টর্নেডোর বর্ণনা দিতে গিয়ে রামরাইল এলাকার মনির হোসেন বলেন, ‘সেদিন সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ দেখি লাল-কালো একটা জিনিস উড়ে এসে বাড়িঘরের টিন কাগজের মতো আকাশে উড়াচ্ছে। এটা দেখতে ছিল হাতির শুঁড়ের মতো। ভয়ঙ্কর শব্দে এটা আকাশ থেকে নেমে এক মিনিটেই সবকিছু তছনছ করে ফেলেছে।’


সেদিনের প্রলয়ঙ্কারী এই টর্নেডোর মুখে পড়েছিলেন শহরের কাউতলি এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী কাজী মেসবাহ উদ্দিন জাফরসহ তার তিন বন্ধু। তিনজনই টর্নেডোর ভয়ংকর এই তাণ্ডবলীলা স্বচক্ষে দেখেছেন এবং মুঠোফোনের ক্যামেরায় তা ধারণ করেছেন।
জাফর জানান, লাল-কালো একটা জিনিস উড়ে এসে বাড়ি-ঘরের টিন কাগজের মতো আকাশে উড়াচ্ছে। এটা দেখতে ছিল হাতির শুড়ের মতো। ভয়ঙ্কর শব্দে এটা আকাশ থেকে নেমে এক মিনিটেই সবকিছু তছনছ করে ফেলেছে।

সে দিনের টর্নেডোর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সদর উপজেলার সুলতানপুর, মাছিহাতা ও বাসুদেব ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম ছাড়াও আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার দুটি গ্রাম।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রলয়ঙ্করী এই টর্নেডোতে প্রাণহানি হয় ৩৭ জনের। এ ছাড়া আহত হন দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ।

সেদিন টর্নেডোর যে তাণ্ডব চলেছিল, তা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ইতিহাসে বিরল। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, টর্নেডোতে প্রায় ১৬০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

টর্নেডোর আঘাতে জেলার সদর, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার মোট ১৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকার সাড়ে ৮ হাজার বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত হন। টর্নেডোতে খুব বেশি ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৭৩১টি পরিবার। এ সব এলাকার ১৭৭৮টি বাড়ি সম্পূর্ণ ও ৭৪৪টি বাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়।

প্রতিবেদনে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি বাবদ মোট ৫৫ লাখ টাকা ক্ষতির কথা বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, টর্নেডো আক্রান্ত গ্রামগুলোর মোট ১৭৩ একর জমির ৮৩ লাখ টাকার ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়। আংশিক নষ্ট হয় ১ হাজার ১১২ একর জমির প্রায় ৩ কোটি টাকার ফসল। টর্নেডোর আঘাতে একটি কলেজ, নয়টি স্কুল-মাদ্রাসা ও পাঁচটি মসজিদ পুরোপুরি ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টর্নেডোতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় প্রায় আড়াই কিলোমিটার পাকা সড়ক। টর্নেডো বিধ্বস্ত গ্রামগুলোর মোট ৩৬৯টি নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এলাকাবাসী জানান, এসব সড়ক ও স্থাপনার অধিকাংশের মেরামত কাজ শেষ হলেও কিছু কিছু সড়ক ও স্থাপনার মেরামত কাজ এখনও চলছে।






Shares