Main Menu

০৯ মার্চ ১৯৭১ : ঢাকায় গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা

+100%-

ডেস্ক ২৪ :::একাত্তরের পঁচিশে মার্চ রাতে ঢাকায় গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা। এর আগে থেকেই উত্তাল ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
১৯৭১ ছাব্বিশে মার্চ ভোরে ট্রাক বোঝাই পাক সেনারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাস্তায় নেমে আসে। মাইকে কারফিউর ঘোষণা দিয়ে জনতাকে বাড়ী ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও জনতা ঘরে না ফিরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াছেল সিদ্দিকী একাত্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বাসসকে এসব কথা জানান।
মুক্তিযোদ্ধা ওয়াছেল সিদ্দিকী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বস্তরের জনতা সে নির্দেশ অমান্য করে কার্ফিউ ভেংগে রাস্তায় নেমে আসে। বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ বাঁশের লাঠি, কাঠ বল্লমসহ শহরের বিভিন্ন রাস্তায় অবস্থান নিয়েছিল। জনতা কারফিউ অমান্য করে মিছিল করে শহর প্রকম্পিত করে তুলেছিল। ২৫ মার্চের কালো রাতে ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনী কর্তৃক নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ হত্যা ও হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
ওয়াছেল সিদ্দিকী বলেন, ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের কালোরাতে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের পাকবাহিনীর হামলায় অসংখ্য মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা আওয়ামী লীগ নেতা ও তৎকালীন নির্বাচিত এমপি প্রয়াত লুৎফুল হাই সাচ্চু ঢাকা থেকে এক নিকটাত্মীয়র টেলিফোনে জানতে পারেন। পরে তিনি পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আলোচনা করেন ও এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহের সাথে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন।
ওয়াছেল সিদ্দিকী জানান, এরই ধারাবাহিকতায় যুবনেতা প্রয়াত মাহবুবুল হুদা ভূঞা, প্রয়াত সফিক খান ও অপরাপর কয়েকজন ছাত্র নেতা সহ স্থানীয় পিডিবি রেষ্ট হাউসে অবস্থানরত ৪র্থ বেঙ্গলের কর্মকর্তা লেঃ হারুনের (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত সেনা প্রধান) সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে সেন্ট্রির মাধ্যমে খবর পাঠান, ঘটনা চক্রে ততক্ষণে অবাঙালি লে. কর্নেল খিজির হায়াত এগিয়ে এসে সাচ্চুর সাথে কথা বলতে শুরু করেন। খিজির হায়াতের উপস্থিতিতে কথা বলা সমীচীন মনে না করায় লে. হারুন সাচ্চুর সাথে কথা না বলে চলে গেলেও সেন্ট্রির মাধ্যমে ঢাকার ঘটনাবলী অবহিত হন।
খিজির হায়াত লুৎফুল হাই সাচ্চুর সাথে কথাবলে চলে গেলে, সাচ্চু বাঙালি মেজর সাফায়াত জামিলকে সার্বিক পরিস্থিতি অবগত করে চলে আসেন। মেজর সাফায়াত লে. হারুনকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বলেন ও সময়মত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তৎকালীন ছাত্র নেতা শহীদুল হক বাসসকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য প্রয়াত এড: আলী আজমও বিভিন্ন মাধ্যমে এদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। অপরদিকে সার্বিক পরিস্থিতি টের পেয়ে ৪র্থ বেঙ্গলের অধিনায়ক খিজির হায়াত খান সেদিনই রাত ১২টার সময় অফিসারদের এক সভা আহবান করেন। এই সভায় সি কোম্পানীর অধিনায়ক মেজর সাফায়াত জামিলকে তার কোম্পানীসহ শহর থেকে ১০ মাইল দূরে শাহবাজপুরে ক্যাম্প করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। “ডি” কোম্পানীর মেজর সাদেক নেওয়াজকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে কারফিউ জারি করতে বলেন। আর “বি” কোম্পানীকে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে পিডিবি এলাকায় থাকার নির্দেশ দেয়। শাফায়াত জামিল অনেক দ্বিধা থাকা সত্ত্বেও ঐ রাতেই শাহবাজপুরে অবস্থান নেন। তাকে দূরে সরিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর পাকবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাওয়াই ছিল খিজির হায়াতের মূল উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে একজন সিনিয়র বাঙালি অফিসারের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উপস্থিতির প্রয়োজন অনুভব করে ৪র্থ বেঙ্গলের অবাঙ্গালী সিও খিজির হায়াত মেজর শাফায়াত জামিলকে তার কোম্পানী সহ শাহবাজপুর থেকে ফেরৎ নিয়ে আসেন ।
তিনি বলেন, শাফায়াত জামিলের শহরে অবস্থানের পরও বিদ্রোহর অবসান হলোনা। উল্টো স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অনুরোধে মেজর শাফায়াত জামিল অপরাপর বাঙালি সেনা সদস্যদের সহায়তায় ২৭ মার্চ ভোরে বিদ্রোহ ঘোষণা করে অবাঙালি অফিসার ও সেনাসদস্যদের আটক করে বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে একাত্ম হয়ে যান। এ ভাবেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।






Shares