রোহিঙ্গা ‘গণহত্যা’র খবর প্রকাশ্যে আনায় রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে কারাদণ্ড দিল মায়ানমার
রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর মায়ানমার সেনার নিষ্ঠুর হত্যালীলার ঘটনা প্রকাশ্যে আনার দায়ে রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে সাত বছরের কারাদণ্ড দিল মায়ানমারের আদালত। দেশের গোপন তথ্য বাইরে পাচার করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে দুই তরুণ সাংবাদিক ওয়া লোন এবং কিয়াও সো ও-কে। যদিও এই অভিযোগ সাজানো বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
দুটি কারণে সারা বিশ্বের নজর ছিল এই মামলাটির দিকে।
প্রথমটি অবশ্যই রোহিঙ্গা গণহত্যা। রাখাইন প্রদেশে মায়ানমার সেনার নৃশংস অভিযানের জেরে ঘর ছেড়েছিলেন প্রায় সাত লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম। শরণার্থীদের ঢল নেমেছিল ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর মায়ানমার সেনার সেই ভয়াবহ অত্যাচারের ঘটনা সারা দুনিয়ার সামনে এনেছিলেন এই দুই সাংবাদিকই। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই খবরে স্তম্ভিত হয়েছিল সারা বিশ্ব।
দ্বিতীয়টি অবশ্য আং সান সু চি। নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া এই নেত্রী ক্ষমতায় আসার পর সারা পৃথিবীর প্রত্যাশা ছিল মানবাধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, এই দু’টি বিষয়ে নিজেদের বদনাম ঘোচাতে উদ্যোগী হবে মায়ানমার। কিন্তু দুই সাংবাদিকের কারাদণ্ডের শাস্তি বুঝিয়ে দিল মায়ানমার আছে মায়ানমারেই।
বিচার চলাকালীন অসহনীয় অত্যাচার সহ্য করেছেন দুই সাংবাদিক। এমনটাই জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। গত ১০ অগস্ট ৩২ বছরের ওয়া লোনের স্ত্রী তাঁদের প্রথম কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু নিজের সন্তানকে একবার চোখে দেখার অনুমতিও দেয়নি মায়ানমার সরকার।
শাস্তি ঘোষণার পর হাতকড়া পরা অবস্থায় পুলিশ ভ্যানে ঢোকার মুখে ওয়া লোন বলেন, ‘‘আমি ভয় পাইনি। আমি কোনও ভুল কাজ করিনি। আমি গণতন্ত্র, সুবিচার আর স্বাধীনতায় বিশ্বাস রাখি।’’
দুই সাংবাদিককে শাস্তি দেওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন মহল থেকে মায়ানমার সরকারের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে।
‘‘ আজ মায়ানমারের জন্য খুবই দুঃখের দিন’’, জানিয়েছেন রয়টার্সের এডিটর-ইন-চিফ স্টিফেন অ্যাডলার। ঘটনার কড়া নিন্দা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, রাষ্ট্রপুঞ্জ সহ দেশ বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা।
দুই সাংবাদিককে কারাদণ্ড দিলেও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর অত্যাচারের ঘটনায় বেশ চাপে মায়ানমার সরকার। গত সপ্তাহেই রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিষয়ক সর্বোচ্চ কমিটি মায়ানমার সরকারের ওপর গণহত্যার অভিযোগ আনার সুপারিশ করেছে। রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনার জেরে মায়ানমারের সামরিক প্রধান ও আরও ১৯ শীর্ষকর্তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক। রাজধানী ইয়াঙ্গনেও মিছিলে নেমেছেন সে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষেরা।