বিশ্ব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস এবং একজন স্যার হেনরী ডুনান্ট—- মোঃ আজহারুল ইসলাম নূরনবী
আজ ৮ মে বিশ্ব মানবতার বন্ধু, মানব প্রেমিক স্যার হেনরী ডুনান্টের ১৮৭ তম জন্ম বার্ষিকী। তিনি ১৮২৮ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শৈশবকাল থেকেই মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। ১৮৫৯ সালে ইতালির সোলফেরাইয়ো নামক স্থানে ফরাসী সৈন্যদের সাথে ইতালি ও অষ্ট্রির সৈন্যদের এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংগঠিত হয়, যা সালফা বিনোর যুদ্ধনামে পরিচিত। উক্ত যুদ্ধে ৪২০০০ এরও বেশি সৈন্য হতাহত হয়। যুদ্ধের পর আহত সৈন্যরা বিনা চিকিৎসায় উন্মুক্ত প্রান্তরে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। সে সময় হেনরী ডুনান্ট সে পথ দিয়ে ফ্রান্সের তৃতীয় নেপোলিয়নের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিছিলেন। তিনি যুদ্ধাহতদের করুণ ও মর্মান্তিক দৃশ্যে খুবই ব্যথিত হন এবং পাশের গ্রামের যুবক ও মহিলাদের ডেকে এনে আহত অসহায়দের সেবা ও শুশ্রষা করেন। যুদ্ধাহত সৈন্যদের অমানবিক পরিণতি ডুনান্টকে দারুনভাবে বিচলিত করে। এমতাবস্থায় যুদ্ধে আহত সৈন্যদের সেবা শুশ্রষার জন্যও মানবিক সেবা প্রদানের জন্য প্রতিবেশি গ্রামের লোকজনদের নিয়ে তিনি একটি স্বেচ্ছাসেবকী দল গঠন করেন। হেনরী ডুনান্ট গঠিত স্বেচ্ছঅসেবী দলের ঐকান্তিক সেবায় অনেক আহত সৈনিক সুস্থ্য হয়ে উঠেন। পরবর্তীতে ডুনান্ট তার সেবা অভিজ্ঞতাকে নির্ভর করেই ১৮৬৩ সালে মানব সেবামূলক সংস্থা হিসেবে “রেডক্রস সমিতি” প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বে যতগুলো আর্ন্তজাতিক স্বেচ্ছাসেবামূলক কল্যাণ সংস্থা, সমাজ ও জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত রয়েছে তার মধ্যে রেড ক্রিসেন্ট সর্বাধিক সমাদৃত এবং সবচেয়ে সুপরিচিত সংস্থা। ১৮৬৩ সালের ৯ ফেব্র“য়ারী হেনরী ডুনান্ট ও অপর ৪ জন জেনেভাবাসীকে নিয়ে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। একই বছর ২৬ অক্টোবর প্রথম বছরের মতো এ কমিটি ১৬টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে জেনেভায় এক আর্ন্তজাতিক সম্মেলন আহবান করেন। তার প্রস্তাবিত কর্মসূচীগুলো গ্রহণের মাধ্যমে রেডক্রস জন্ম লাভ করেন।
রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্য সংখ্যা ১৮৮টি মুসলিম বিশ্বে রেডক্রসের পরিবর্তিত নাম রেড ক্রিসেন্ট। বর্তমানে আর্ন্তজাতিক বই রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সুইজারল্যান্ডের পিটার মাউরাব। বর্তমানে এ সংস্থা যুদ্ধাহতদের সেবা করা ছাড়াও বিভিন্ন জটিল সমস্যা দূযোর্গজনিত সমস্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রে অন্যন্য সাধারণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জুরুরী ঔষধ ও খাদ্য সরবরাহ, শিশু কল্যাণ, নারী কল্যাণ, ত্রান ও পূর্ণবাসন সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূযোর্গ মোকাবেলায় এ সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
এ সংস্থার মূলনীতিগুলো হলে: ১। মানবতা, ২। একতা, ৩। স্বাধীনতা, ৪। নিরপেক্ষতা, ৫। সার্বজনীনতা, ৬। স্বেচ্ছাসেবা, ৭। পক্ষপাতহীনতা।
আর্ন্তজাতিক রেড ক্রিসেন্ট সমিতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য :
১। স্বাস্থ্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে সহায়তাদান।
২। ত্রাণ ও পূর্ণবাসন ক্ষেত্রে সহায়তা দান।
৩। মাতৃ মঙ্গল ও শিশুকল্যাণ ক্ষেত্রে সহায়তা দান।
৪। স্বাস্থ্য শিক্ষা ধাত্রী প্রশিক্ষণ চালু করা।
৫। কিশোর ও যুব সমাজকে আর্তমানবতার সেবায় উদ্বুদ্ধ করা।
৬। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা।
৭। প্রাকৃতিক দুযোর্গ প্রতিরোধে সহায়তা করা।