১৪৫ বছর পার, এখন শুধু মুক্তি চান অতিবৃদ্ধ



ডেস্ক ২৪:: মৃত্যুর পর তাঁকে যেখানে কবর দেওয়া হবে, সেই জায়গাটা নিজেই কিনে রেখেছেন তিনি। সেই চব্বিশ বছর আগে। ১৯৯২ সালে। কিন্তু আজও সেই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছেন ইন্দোনেশিয়া তথা পৃথিবীর প্রবীণতম নাগরিক এমবাহ গথো। বয়স? ১৪৫ বছর। জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই, সুখ-দুঃখের সাক্ষী এই বৃদ্ধ এ বার জীবন থেকেই ছুটি চাইছেন। স্পষ্টই বলছেন, ‘‘এখন আমি যেটা চাই সেটা হলো মৃত্যু। আর কিচ্ছু না। মৃত্যুর জন্য পুরোপুরি তৈরি আমি।’’ একটি ব্রিটিশ দৈনিক সম্প্রতি গথোকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ ছেপেছে। তাতেই বিশ্বের ‘প্রবীণতম’ মানুষ নিজের শেষ ইচ্ছের কথা বলে রেখেছেন।
ইন্দোনেশিয়ার মধ্য জাভার স্রাগেন এলাকার বাসিন্দা গথোর জন্ম ১৮৭০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, গথোর পরিচয় পত্রে জন্মের যে সাল-তারিখ দেওয়া রয়েছে সেটি খাঁটি। অর্থাৎ গথোর আসল বয়স ১৪৫ বছর।
তা হলে তিনিই কি এখন বিশ্বের প্রবীণতম মানুষ? গিনেসের মতো রেকর্ড সংস্থা এখনও এ নিয়ে মুখ খোলেনি। কারণ নিজেদের মতো করে তথ্য যাচাই করে তবেই গথোকে বিশ্বের প্রবীণতম মানুষের আখ্যা দিতে পারে তারা। এত দিন পর্যন্ত ১২২ বছরের ফরাসি নাগরিক জঁ ক্যালমন্তকেই বিশ্বের প্রবীণতমা নাগরিক বলে ধরা হতো। ১৯৯৭ সালে মারা যান তিনি। তার পর ১২২ বছরের বেশি কেউ বেঁচে ছিলেন, এমন তথ্য কোনও সংস্থার রেকর্ডেই নেই।
তবে রেকর্ডের মতো বিষয় নিয়ে এখন আর মাথা ঘামাতে চান না গথো। শুধু চান পৃথিবীকে বিদায় জানাতে। নিজের সন্তানদের কবর যেখানে, তার পাশেরই কোনও কবরে নিশ্চিন্তে চিরনিদ্রায় থাকতে। গথোর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০ ভাই-বোন ছিল তাঁর। তবে তাঁদের কেউই এখন আর বেঁচে নেই। ছিলেন চার স্ত্রী এবং প্রচুর সন্তানও। একে একে সবাই তাঁকে ছেড়ে গিয়েছেন।
গথো এখন থাকেন নাতির পরিবারের সঙ্গে। পরিবারের এক জন জানালেন, গথোর দৃষ্টিশক্তি এখন এতটাই ক্ষীণ যে বেশ কয়েক বছর হলো আর টিভি দেখতে পারেন না বৃদ্ধ। রেডিওতে নানা অনুষ্ঠান শুনে সময় কাটে। শেষ তিন মাস বিছানা ছেড়ে ওঠা-হাঁটাও বন্ধ। চামচে করে খাইয়ে দেন বাড়ির কেউ। স্নানটুকুও করিয়ে দিতে হয় এখন। তবে কিছু বছর আগে পর্যন্তও নিয়মিত ধূমপান করতেন বৃদ্ধ। ছিল টানটান শরীরে হাঁটাচলার অভ্যাসও।
১৪৫ বছর ধরে গোটা পৃথিবী নিজের চোখের সামনে বদলে যেতে দেখেছেন গথো। দেখেছেন দু’দু’টো বিশ্বযুদ্ধ। কিন্তু এখন জীবনের কোনও পরিবর্তনই আর টানে না তাঁকে। এতগুলো বছর বেঁচেছিলেন কোন জাদুমন্ত্রে? ‘‘ধৈর্য। জীবনের রসদ একমাত্র ওটাই ছিল,’’ তৎক্ষণাৎ জবাব দিলেন ১৪৫-এর বৃদ্ধ।