Main Menu

শিশু-কিশোর মুক্তিযোদ্ধাদের বিষ্ময়কর বীরত্বগাঁথা

+100%-

freedom fighterমাত্র ১০ বছর বয়সে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবপ্রাপ্ত শহীদুল ইসলাম লালু ওরফে বিচ্ছু :টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌরশহরের সূতীপলাশ গ্রামে জন্ম নেওয়া এক বীরের নাম শহীদুল ইসলাম যিনি মাত্র ১০ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধের সময় পাক সেনাদের আক্রমণে নিজ জন্মস্থান ছেড়ে পরিবারের সাথে তাকে আশ্রয় নিতে হয় ধনবাড়ী উপজেলার কেরামজানিতে।সেখানেই পরিচয় ঘটে দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন পাহাড়ীর সাথে।শহীদুল ইসলামের জিদের কাছে হার মেনে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের তুরা ক্যাম্পে।সেখানে তিনি স্টেনগান ও গ্রেনেড চালনা শিখেন।এই ছোট্ট মানুষটির অদম্য সাহস দেখে ওই ক্যাম্পের প্রশিক্ষক ব্রিগেডিয়ার সামসিং মুগ্ধ হয়ে যান এবং তিনি ‘লালু’ শব্দটা তার নামের সাথে জুড়ে দেন।লালু লড়াই করেন গোপালপুর, ভুঞাপুর, মধুপুর ও নাগরপুরের বেশ কয়েকটি রণাঙ্গনে।তবে যে ঘটনাটির জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন তা বলছি-

গোপালপুর থানায় পাক সেনারা শক্ত ঘাঁটি গেঁড়ে বসে আছে।যে কোন মূল্যে কাদেরিয়া বাহিনী এ থানা দখল করতে চায়।রেকি করতে পাঠানো হলো লালুকে।থানার অদূরে পাহারায় থাকা রাজাকার সিরাজ (সিরাজ লালুর দূর সম্পর্কের ভাই ছিলো) তাকে কাছে ডেকে তার খোঁজ খবর নেয় এবং তার সাথে কাজ করতে বলে।লালু রাজি হয়ে যায়।পাক সেনাদের চা-নাস্তা দেওয়া ও ফুটফরমায়েশ খাটার সাথে সাথে থানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে থাকে।থানাটির প্রতিরক্ষায় তিনটি বাংকার খুঁড়ে পাক সেনারা ভারী অস্ত্র নিয়ে পাহারা দিচ্ছিল।কাজের ফাঁকে সে দৌড় দিয়ে কাদেরিয়া বাহিনীকে বিশদ জানালো।আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী লালুর অতি আগ্রহ ও আত্মবিশ্বাসের কারণে লালুকেই ৩টি গ্রেনেড দিয়ে থানায় হামলা চানানোর নির্দেশ দিলেন।সবাই জানত লালু আর জীবিত ফিরে আসবে না।লালু গ্রেনেড ৩টি থানা কমপ্লেক্সের একটি ঘরে লুকিয়ে রাখলেন।সবাই যখন গভীর মনোযোগে প্রতিরক্ষায় ব্যস্ত তখন লালু অতি দ্রুত তিন বাংকারে ৩টি গ্রেনেড চার্জ করে বসেন।কিছু বুঝে উঠার আগেই বিকট শব্দে গ্রেনেডগুলো বিস্ফোরিত হয় এবং বাংকারে থাকা ১২জন পাক সেনার সবাই মারা যান।এ ঘটনায় হকচকিয়ে মুক্তিদের হাত থেকে লালুর জীবন বাঁচাতে সিরাজ রাজাকার ছুটে আসে এবং লালুকে একটি অস্ত্র দিয়ে তা কীভাবে ব্যবহার করতে হবে শিখিয়ে দেয়।লালু অস্ত্রটি হাতে নিয়েই সোজা সিরাজকে গুলি করে মেরে ফেলে।সালাম হে বাংলার দামাল শিশু;তোমার দেশপ্রেমের কাছে মাথা নুইয়ে গেল।অসাধারণ বীরত্বের জন্য শহীদুল ইসলাম লালুকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয় যার ক্রমিক নং ৪২৫।

১৯৭২ সালের ২৪শে জানুয়ারি টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী স্কুলে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কাদরিয়া বাহিনী রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নিকট অস্ত্র জমা দিচ্ছিল।লালুও তার স্টেনগানটি বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেন।এত ছোট একটা শিশুকে দেখে তিনি অবাক হয়ে যান এবং জানতে চান তার সম্পর্কে।তার বীরত্বের কাহিনি শোনার পর বঙ্গবন্ধু তাকে কোলে তুলে নেন এবং ‘বীর বিচ্ছু’ বলে সম্বোধন করেন।শহীদুল ইসলাম লালু নামের সাথে ‘বিচ্ছু’ শব্দটিও যুক্ত হয়ে যায়।২০০৯ সালের ২৫শে মে ঢাকার মিরপুরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এ বীর।






Shares