Main Menu

নবীনগরে সাধক কবি মহর্ষি মনোমোহন-এর-১৪২ তম জন্মউৎসব

+100%-

মিঠু সূত্রধর পলাশ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সাতমোড়া গ্রামের মহর্ষি মনোমোহনের জন্মস্থানে শনিবার মলয়া গানের রচয়িতা সাধক কবি মনোমোহন দত্ত ১৪২ তম জন্মবার্র্ষিকী পালিত হবে। এই উপলক্ষে কবির নিজ জন্মভূমি উপজেলার সাতমোড়া গ্রামে বসবে ২ দিনব্যাপী মলয়া গানের আসর। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের কয়েকটি দেশের ভক্তবৃন্ধ উপস্থিত হয়।

মহর্ষি মনোমোহন দত্তের পূর্বপুরুষ ঢাকা সোনারগাঁয়ের জমিদার রাজবল্লভ দত্ত। জমিদারির মোহ কাটিয়ে চলে আসেন সাতমোড়া গাঁয়ে রাজভল্লবের পুত্র বৈদ্যনাথ দত্তের কাছে। সংগীত প্রিয় ও শ্যামা সংগীতের রচয়িতা। বৈদ্যনাথের পুত্র পদ্মনাথ দত্ত। পেশায় কোবরেজী, আধ্যাত্মবাদে সমর্পিত প্রাণ। ওনি মৃত্যুর সাতদিন আগেই নিজের মৃত্যুর দিনক্ষণ বলে গিয়েছিলেন। পদ্মনাথের পুত্র মনোমোহন দত্ত। মহর্ষি ও সাধক কবি। মনোমোহন দত্তের জন্ম ১২৮৪ বাংলা সালের ১০ মাঘ। মৃত্যু ১৩১৬ বাংলা সালের ২০ আশ্বিন। বেঁচে ছিলেন মাত্র ৩২ বছর। কিন্তু এই অল্প সময়ের আয়ুতে আধ্যাত্মবাদ আর মরমী সাহিত্যে তিনি যে যোজন পথ অতিক্রম করে গেছেন তা এক বিস্ময়ের ব্যাপার। মহর্ষি মনোমোহন ছিলেন রামজীবন চক্রবর্তীর পাঠশালায় কৃতী ছাত্র। ছাত্রবৃত্তি লাভ করেন শৈশবে। তারপর ভর্তি হন মুরাদনগর হাইস্কুলে। কিন্তু সংসারের চরম দারিদ্রের কারণে ভর্তির ৬ মাস না যেতেই ছাড়লেন বিদ্যালয়। কিন্তু শিক্ষার প্রতি ছিল প্রগার আগ্রহ। তাই এক পর্যায়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে যান ত্রিপুরার কেন্দুয়া গ্রামে। সেখানে পুনরায় ভর্তি হন স্কুলে। কিন্তু বিধি বাম। প্রতিকূল অবস্থার দরুণ স্কুলে পড়া তার হলো না। ইচ্ছে হলো, মোক্তারী করবেন। কিন্তু আইনের মারপ্যাঁচের মত জটিল বিষয়ে তিনি মনোযোগী হতে পারলেন না। করলেন মোক্তারী পরীক্ষায় ফেল।
তারপরই জীবনে পরিবর্তনের ধারা সূচীত হলো। আত্মদর্শনের প্রতি ঝুঁকলেন। ১৮ বৎসর বয়সে কালিকচ্ছের সাধক পুরুষ বলেছিলেন যে, ‘এই শিশু একদিন মহাপুরুষে পরিণত হবে।’ ১৩০৭ সালের ১১ই বৈশাখ তিরোধান করলেন শ্রী শ্রী আনন্দ স্বামী। দুঃখ আর হতাশাগ্রস্থ মনোমোহন দত্ত ছুটে গেলেন মাইজ ভান্ডারের বিখ্যাত পীর আহমদ উল্লাহ শাহের কাছে। পীর সাহেব তাঁকে বললেন, ‘তোর পক্ষে সংসার করা হবে না। তুই ফিরে যা সাতমোড়া গ্রামে। সেখানে গিয়ে পরমাত্মার সাধনা কর।’ মনোমোহন দত্ত ফিরে এলেন নিজ ভূমে। গ্রামের বাড়ির আঙ্গিনায় অবস্থিত বেলতলার নিচে বসে শুরু করলেন তপস্যা। শুধু ধ্যান আর ধ্যান। এসময়েই তাঁর মধ্যে অলৌকিক কাব্য প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। মুখে মুখে রচনা করতে শুরু করলেন গান। মলয়া সংগীত। তাঁর সাথে ছিলেন শিবপুরের ওস্তাদ আফতাব উদ্দিন খাঁ, কাঁঠালিয়া গ্রামের লবচন্দ্র পাল এবং ফকির মুনছর আলী, আলতাফ আলী ও রমজান আলী। তাঁর রচিত মলয়া সংগীতের সযুরারোপের দায়িত্ব নিলেন ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁ। তিনি সুর করে এসব গান মহর্ষি মনোমোহন সহ বিভিন্ন আসরে গেয়ে শোনাতেন।
এছাড়াও আরবী, কোরআন, বাইবেল ও সংস্কৃত ভাষায় তাঁর ছিল অভাবনীয় দক্ষতা। তাঁর রচিত মলয়া গানের সংখ্যা মোট ৪২৬টি। তন্মধ্যে মলয়া কাব্যগ্রন্থের ১ম খন্ডে ২৮৭টি এবং ২য় খন্ডে ১৩৯টি গান রয়েছে।