নবীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বিরুদ্ধে হত্যা মামলা



মিঠু সূত্রধর পলাশ : নবীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ আল রোমানের বিরুদ্ধে মোহাম্মদ মহসিন (৪১) নামের এক ব্যক্তিকে ‘হত্যার চেষ্টা করা হয়’ এমন অভিযোগ এনে থানায় একটি মামলা হয়েছে। আহত মহসিন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি। তবে সাবেক ছাত্রনেতা রোমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে এ মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে তিনিও সহসাই যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, নবীনগর পৌরসভার আলমনগর গ্রামের সাবিনা ইয়াছমিন পুতুলের কাছ থেকে চার বছর আগে ২ লাখ টাকা ধার নেন একই গ্রামের বাসিন্দা সাকিনা আক্তার। কিন্তু গত চার বছরেও সেই টাকা ফেরত পাননি পুতুল। এ নিয়ে পুতুল অনেকের কাছেই প্রতিকার চেয়েও সমাধান পাননি।
এ অবস্থায় সোমবার সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ছয়টার দিকে পুতুল তার বড় ভাই আওয়ামীলীগ নেতা মহসিনকে সাথে নিয়ে তার ধারের টাকা ফেরত পেতে সাকিনার বাড়িতে যান। তবে সেসময় বাড়িতে সাকিনাকে পাওয়া না যাওয়ায় পুতুল ও মহসিন পুনরায় বাড়িতে ফেরত আসছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে সাকিনার প্রতিবেশী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ আল রোমানের নেতৃত্বে কয়েকজন পুতুলকে গালিগালাজ করতে থাকে। এতে মহসিন প্রতিবাদ করলে, তার ভাই মহসিনের উপর হামলা চালায় রোমান গং।
মামলার এজাহারে সুস্পষ্টভাবে অভিযোগ করা হয়, সেসময় মহসিনকে ‘হত্যার উদ্দ্যেশ্যে’ তার ভাইয়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাঠি দিয়ে একাধিক আঘাত করা হয়। এতে মহসিনের বাঁ হাত ভেঙ্গে যায়। এ ঘটনায় আহতের ছোটবোন সাবিনা ইয়াছমিন পুতুল বাদী হয়ে সাবেক ছাত্রনেতা রোমানসহ চারজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন সাকিনার ভাসুর মুজিবুর রহমান, সাবেক ছাত্রনেতা রোমানের আপন বড় ভাই রুবেল মিয়া ও রুমানের চাচাতো ভাই রাজীব মিয়া।
এ বিষয়ে আবদুল্লাহ আল রোমানের সাথে কথা বললে, রেমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পুরো ঘটনাই মিথ্যে ও সাজানো নাটক। মূলত পুতুল টাকা ধার দেয় নাই সাকিনাকে। শুনেছি, পুতুলের কাছ থেকে সাকিনা মাসিক ১০ হাজার টাকা মুনাফায় (সুদে) দেড় লাখ টাকা নেয়। সেটির সুদ দিতে দিতে সাকিনা আজ পথের ভিখারী। এটি নয়ে সাকিনার একটি অডিও কথোপকথন ফেসবুকে ভাইরালও হয়েছে।’
রোমান জানান, বিষয়টি নিয়ে সাকিনা বেগমের বাড়িতে সোমবার সন্ধ্যায় দরবার বসে। সেই দরবারে ওই পাওনা টাকার বিষয়টি নিয়ে পুতুলের ভাই মহসিনের সঙ্গে আমার তর্কাতর্কি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। এতে এক পর্যায়ে মহসিন দরজায় বেকায়দায় পড়ে গিয়ে আহত হন। এটি সবাই দেখেছে। অথচ মামলায় বলা হয়েছে, আমার নেতৃত্বে পথিমধ্যে হত্যার উদ্দ্যেশে আমরা নাকি লাঠি নিয়ে মহসিনের ওপর হামলা করেছি? যা সম্পূর্ণ সাজানো ঘটনা।’
রোমান আরও জানান, ‘এ ঘটনার পর পুতুল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দেয়াসহ যেভাবে ফেসবুকে একের পর এক বিশ্রী ভাষায় নানা মিথ্যে অভিযোগ এনে বানোয়াট গল্প লিখে আমার ইমেজকে ক্ষুন্ন করছে, তাতে আমিও তার বিরুদ্ধে শিগগীরই আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’
এ বিষয়ে মামলার বাদী সাবিনা ইয়াছমিন বলেন,’সাকিনার কাছে সুদে টাকা লাগানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট। তবে আমার ভাইকে হত্যার উদ্দ্যশেই যে পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে রোমান গং, তার প্রমানও আছে।
এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি নূরে আলম বলেন, ‘সাকিনা বেগম অনেকের কাছ থেকেই লাখ লাখ টাকা সুদে নিয়ে সেই টাকা পরিশোধ করতে আজ তার বাড়িটি পর্যন্ত বিক্রী করতে বাধ্য হয়েছেন। এসব বিষয়ে সোমবার বাদ আছর আমরা কয়েকজন সাকিনার বাড়িতে দরবারে বসেছিলাম। সেই সময় পুতুল ও মহসিনও ছিলো। সেখানেই মহসিনের সঙ্গে এসব নিয়ে রোমানের তর্কাতর্তি ও হাতাহাতি হয়। কিন্তু মহসিনকে হত্যার উদ্দ্যেশে রোমান গং পথিমধ্যে আক্রমণ করেছে, সেটি সত্য নয়। সুষ্ঠু তদন্ত করলেই সেটি পরিস্কার হয়ে যাবে।’
নবীনগর থানার ওসি সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, ‘মামলাটি নথিভূক্ত করা হয়েছে। তদন্ত শেষে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।